বর্তমান সরকারের আমলে ভারত বাংলাদেশকে ৭৫০ কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় ঋণ (এলওসি) দিয়েছে। এর বাইরে আরও ২০ কোটি ডলার দিয়েছে অনুদান হিসাবে। তবে গত ৮ বছরে এলওসির মাত্র ৩৪ কোটি ডলার ব্যবহার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। যা মোট ঋণের মাত্র ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। এলওসির অগ্রগতি পর্যালোচনা বৈঠকের কার্যপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
কার্যপত্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম এলওসির আওতায় ৯টি প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে। আরও দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলেও নির্মাণ-পরবর্তী কার্যক্রম অবশিষ্ট রয়েছে। ঝুলে আছে চারটি প্রকল্প। এগুলোর মেয়াদ এরই মধ্যে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। আর দ্বিতীয় এলওসির ১৮টি প্রকল্পের কয়েকটি অনুমোদন হলেও বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। আর তৃতীয় এলওসির ১৭টি প্রকল্পের কোনোটিই অনুমোদন হয়নি। প্রথম এলওসির আওতায় ১১টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বাস্তবায়ন করেছে রেলওয়ে, একটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), একটি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) ও একটি মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ। আর চলমান চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রেলওয়ে।
রেলওয়ের শেষ হওয়া প্রকল্পগুলো হলোÑ১৬৫টি ব্রডগেজ ও ৮১টি মিটারগেজ তেলবাহী ওয়াগন কেনা, ২২০টি পণ্যবাহী ওয়াগন কেনা, ২৬টি ইঞ্জিন ক্রয়। এছাড়া দ্বিতীয় ভৈরব ও দ্বিতীয় তিতাস সেতু এবং আখাউড়া-আশুগঞ্জ তিন স্টেশনের সিগন্যালিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। তবে প্রকল্প দুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর বাইরে ২৯০টি দ্বিতল, ৫০টি আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) ও ৮৮টি একতলা এসি বাস কিনেছে বিআরটিসি এবং একটি ড্রেজার কিনেছে মংলাবন্দর কর্তৃপক্ষ।বাকি চারটি প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। সব মিলিয়ে ৮ বছরে এলওসির প্রায় ৩৪ কোটি ডলার ব্যবহার করা হয়েছে। আরও ৫২ কোটি ২০ লাখ ডলার অবশিষ্ট রয়েছে।
এর বাইরে রেলওয়ের তিন প্রকল্পের বাণিজ্যিক চুক্তিতে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সম্মতি প্রাপ্তিতে বিলম্ব হয়। এতে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন আটকে ছিল প্রায় এক বছর। এগুলো হলোÑখুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ, ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন ও টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন। এছাড়া ১২০টি ব্রডগেজ কোচ কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
সূত্র জানায়, ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ইআরডির ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ২০১০ সালের আগস্টে। ২০১২ সালে এক বিলিয়ন ডলারের ঋণ থেকে ২০ কোটি ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পরে ২০১৬ সালের আগস্টে এলওসিতে অতিরিক্ত অর্থ হিসাবে আরও ৬ কোটি ২০ ডলার ঋণ অনুমোদন করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সব মিলে প্রথম এলওসিতে ভারতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর মধ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৮টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। এজন্য ২০১৬ সালের বছর ৯ মার্চ স্বাক্ষরিত দুই বিলিয়ন ডলারের চূড়ান্ত ঋণ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ সরকার ও এক্সিম ব্যাংক। এর আওতায় প্রথম দফায় চার প্রকল্প অনুমোদন করে ভারত সরকার। এগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৪৩ কোটি এক লাখ ডলার দেবে এক্সিম ব্যাংক।
দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে ভারত সরকার। এগুলোয় ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৭৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার দেবে এক্সিম ব্যাংক। সব মিলিয়ে ৯ প্রকল্পে ১২২ কোটি ১৫ লাখ ডলার অনুমোদন করা হয়েছে। বাকি ৫টি প্রকল্পে ৭৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যবহার করা হবে।
তৃতীয় এলওসির আওতায় ১৭টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হলেও কোনোটি অনুমোদন হয়নি। প্রকল্পগুলোর মধ্যে সড়কের রয়েছে চারটি। এছাড়া নৌ-মন্ত্রণালয়ের চারটি, বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে তিনটি, রেলের দুটি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প রয়েছে। এজন্য ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয় গত বছরের ৪ অক্টোবর।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ১০০ কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় ঋণ (এলওসি) অনুমোদন করে ভারত। পরে ২০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে মঞ্জুর করে দেশটি। এছাড়া দ্বিতীয় এলওসির ২০০ কোটি ও তৃতীয় এলওসির ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে ভারত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন