মুন্্শী আবদুল মান্নান
মিয়ানমারে নবযুগের সূচনা হয়েছে। সামরিক স্বৈরশাসন থেকে দেশটির গণতন্ত্রে উত্তর ঘটেছে। অর্ধশতাব্দীরও বেশী সময় পর সেখানে একজন বেসামরিক প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাসীন হয়েছেন। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচির ঘনিষ্ঠজন, বন্ধু ও সহযোগী থিন কিউ আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত বুধবার তিনি শপথ নিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের কাছ থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন।
গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসী (এনএলডি) শতকরা ৮০ শতাংশ ভোট পেয়ে নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এনএলডি’র অবিসংবাদী নেত্রী হিসেবে অং সান সুচিরই প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু সাংবিধানিক বাধার কারণে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেন নি। তার স্থলে তারই বিশ্বস্ত সহকর্মী থিন কিউ থেইন সেইনের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ২০০৮ সালের সংবিধানের ৫৯ (এফ) ধারায় বলা আছে, কোনো নাগরিক বিদেশীকে বিয়ে করলে তিনি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। অনেকেই মনে করেন, সংবিধানের এই ধারাটি অং সান সুচিকে লক্ষ্য করেই সংযোজিত হয়। সামরিক জান্তার এটা নিশ্চিতভাবেই বিদিত ছিল যে, দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ও নির্বাচন ব্যবস্থার প্রত্যাবর্তন ঘটলে অং সান সুচির দলের বিপুল বিজয় কেউ রুখতে পারবে না। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের প্রধান দাবিদার হবেন তিনিই। কোনোভাবেই যাতে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে না পারেন সে জন্যই সংবিধানে এমন ধারা সংযোজিত হয়। বস্তুত, ওই ধারার কারণেই অং সান সুচির প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভবপর হয়নি। এ ব্যাপারে অং সান সুচি সংযম ও ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করেছেন। বিকল্প হিসেবে দলেরই একজন নেতাকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করেছেন। অতীতের অভিজ্ঞতা তাকে সতর্কভাবে পথ চলতে অনুপ্রাণিত করেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অং সান সুচির দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও ক্ষমতায় যেতে পারেনি। সামরিক জান্তা ওই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে এবং অং সান সুচিকে গৃহবন্দী করে। এর পর আরেকটি নির্বাচনের জন্য অং সান সুচি, তার দল ও মিয়ানমারের জনগণকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন যে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তারই ধারাবাহিকতায় গত নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের ফলাফল ১৯৯০ সালের নির্বাচনের চেয়েও ভালো হয়েছে। থেইন সেইন অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি তার গণতান্ত্রিক সংস্কার কর্মসূচি এক জায়গায় এনে শেষ করেছেন। ক্ষমতা হস্তান্তর করে দায়িত্ব সমাপ্ত করেছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে দেয়া তার ভাষণে পূর্ণ গণতন্ত্র বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ঘোষণা করে জনগণকে এ জন্য ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন। সংবিধান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে থিন কিউ বলেছেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সংবিধান রচনার জন্য চেষ্টা করে যাবো। এই রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা জনগণ লালন করে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে। আর এ কারণেই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, নতুন সরকার জাতীয় ঐক্য এবং জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘাত বন্ধের ব্যবস্থা নেবে। আমরা উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবো। মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়াবো।
প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পাশাপাশি দুই ভাইস প্রেসিডেন্টও শপথ নিয়েছেন। শপথ নিয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরাও। তাদের অধিকাংশই এনএলডি’র সদস্য। এর মধ্যে অং সান সুচিও আছেন। তিনি শিক্ষা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, পররাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্টের দফতর সংক্রান্ত মন্ত্রণালয় চালাবেন। উল্লেখ করা দরকার, সরকারে সামরিক বাহিনীর অংশগ্রহণ ও অবস্থান তেমন একটা খর্ব হয়নি। সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টে ২৫ শতাংশ আসন সামরিক বাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। এই হিসাবে একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে। এছাড়া, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্ত বিষয়ক মন্ত্রণালয় সামরিক বাহিনীর হাতেই থাকছে। এখানে একটি ভারসাম্য রক্ষা করা হয়েছে এবং উভয় পক্ষই তাতে সন্তুষ্ট বলে মনে হয়।
ওদিকে এক খবরে জানা গেছে, থিন কিউ প্রেসিডেন্ট হলেও প্রকৃতপক্ষে অং সান সুচিই নেপথ্যে থেকে সে দায়িত্ব পালন করবেন। তেমন ইঙ্গিত তিনি নিজেও দিয়েছেন। বিবিসি’র এক খবরে বলা হয়, নতুন সরকার অং সান সুচির জন্য প্রধানমন্ত্রী ধরনের একটি পদ সৃষ্টির জন্য বিলের একটি খসড়া তৈরি করেছে। ‘রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা’ নামের এই পদ প্রতিষ্ঠা করে তাতে অং সান সুচিকে নিয়োগ দেয়া হবে। এর ফলে তিনি সরকারের সব রকমের গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবেন। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, এনএলডি’র তরফে গত বৃহস্পতিবার কথিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার পদ সৃষ্টির বিল সংসদে পেশ করা হয়েছে। বিলটি পাস হলে, অং সান সুচি সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকের অবস্থানে অধিষ্ঠিত হবেন।
সংবিধানে যাই থাক, অং সান সুচিই যে নতুন সরকারের প্রধান ব্যক্তি, সে সম্পর্কে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। বিকল্প ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তাকেই সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত সংবিধান সংশোধন কিংবা নতুন সংবিধান রচিত না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই বহাল থাকবে। নতুন প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টে দেয়া তার প্রথম ভাষণে নতুন সংবিধান রচনার যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট, সরকার সংবিধান রচনাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে যাতে দেশের গণতন্ত্রায়ন সহজ হয়, পূর্ণতা লাভ করে। বর্তমান সংবিধানে সামরিক বাহিনীর যে প্রাধান্য বা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা পরিবর্তন করা বেশ কঠিন হবে বলেই পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এই পর্যায়ে সরকারকে ধৈর্য ও সমঝোতার পথেই এগুতে হবে বলে তাদের পরামর্শ। দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নিলে হিতে বিপরীত হওয়া অসম্ভব নয়।
পূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন প্রধানত অং সান সুচির রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতার ওপরই নির্ভর করবে। স্মরণ রাখার বিষয় এই যে, দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীরও বেশী সময় দেশটি অগণতান্ত্রিক ও সামরিক শাসনের নিগড়ে আবদ্ধ ছিল। চটজলদি তাকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়ে আসা যাবে না। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান রচনার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়টি ছাড়াও আরও নানা চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে রয়েছে। জাতীয় ঐক্য-সংহতি প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন, সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন, দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমানের উন্নতি বিধান কোনোটিই সহজসাধ্য কাজ নয়। এসব লক্ষ্য অর্জন করতে নিরলস প্রচেষ্টার পাশাপাশি বহু আইনবিধি বাতিল, সংশোধন কিংবা নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহ দমন ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নতুন সরকারের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় উন্নয়ন-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে বিদ্রোহী জাতি-গোষ্ঠী ও রোহিঙ্গাদের মূল স্রোতধারায় শামিল করা একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। সংঘাত-দ্বন্দ্ব-অসন্তোষ জিইয়ে রেখে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দরকার এই জন্য যে, এই মুসলমান সংখ্যালঘুরা সামরিক জান্তার শাসনে সবচেয়ে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছে। তাদের নাগরিক অধিকার পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। শত শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাসকারী এই মুসলিম জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রহীন, ভাসমান জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারে তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকার বলতে কিছু নেই। অন্যান্য দেশেও তাদের যাওয়ার ও বসবাসের জায়গা নেই। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার বিশ্বের আর কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠী নেই যার সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলমানদের তুলনা করা যায়। হত্যা, ধর্ষণ ও উৎসাদনের কবলে পড়ে তাদের অস্তিত্ব আজ বিলীন হতে বসেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে, দেশে সামরিক ও আইনশৃংখলা বাহিনী এবং উগ্রবাদী বৌদ্ধদের হাতে অসহায়ভাবে নিহত হওয়া কিংবা সমুদ্রে সলিলসমাধি লাভ করাই তাদের অনিবার্য ভাগ্যে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে রোহিঙ্গা হত্যা ও বিতাড়ন যখন ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে, তখন জীবন বাঁচানো ও নিরাপত্তার জন্য তাদের অনেকে ডিঙি নৌকা নিয়ে সাগরে আশ্রয় নেয়। সেখানে তাদের একাংশের সলিলসমাধি হয়। সাগর থেকে প্রতিবেশী দেশে যাওয়ার উপায়ও রুদ্ধ হয়ে যায়। তাদের আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে প্রতিবেশীরা। এমন দুর্ভাগ্য যেন কোনো জাতিগোষ্ঠীর না হয়। নির্মম উৎসাদনের শিকার হয়ে এখনো বাংলাদেশে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান অবস্থান করছে। থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে লক্ষাধিক এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে ৩০ হাজারেরও বেশী। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গা মুসলমানরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সামরিক শাসকরা তাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে না নিলে, বিতাড়ন-উৎসাদনের নীতি অবলম্বন না করলে, রাষ্ট্রীয় উস্কানির মাধ্যমে সৃষ্ট গণহত্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ না করলে রোহিঙ্গা মুসলমানদের এই করুণ হাল হতো না। গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রয়াসে তারাও তাদের অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে পারতো। উল্লেখ করা যেতে পারে, নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে রোহিঙ্গারা কেন, কোনো মুসলমানই প্রার্থী হতে পারেনি। নাগরিকত্ব আছে এমন মুসলমানরা ভোট পর্যন্ত দিতে পারেনি। এখন দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করেছে, বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের মুসলমানরা তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা ফিরে পাওয়ার আশা করছে। আশার সঙ্গে অবশ্য শংকাও তাদের কম নেই। নতুন সরকার কি নীতি অবলম্বন করবে এখনো তারা তা জানে না। অবস্থাদৃষ্টে তাদের মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, সহসা তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না। তাদের এই ধারণার একটা বড় কারণ এই যে, গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি কিংবা তার দল এনএলডি’র তরফ থেকে তারা ইতিবাচক কোনো বার্তা আজ পর্যন্ত পায়নি। বিষয়টি হয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে, না হয় নেতিবাচক অবস্থানই প্রদর্শন করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিবিসি টুডে’র বিখ্যাত উপস্থাপক ও সাংবাদিক মিশাল হুসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় অং সান সুচির যে পরিচয় পাওয়া গেছে, তা তার খ্যাতির সঙ্গে মোটেই মানানসই নয়। বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে। সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে সুচি মেজাজ হারান এবং তাকে বিড় বিড় করে বলতে শোনা যায়, ‘একজন মুসলিম যে আমার সাক্ষাৎকার নেবে, এটা আমাকে কেউ বলেনি।’ তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় যখন মিশাল হুসেন সুচিকে রোহিঙ্গাদের ওপর বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন করেন। সুচিকে এই নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান মিশাল হুসেন। সুচি নিন্দা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং এই বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান যে, ‘আমি মনে করি অনেক বৌদ্ধও বিভিন্ন কারণে দেশত্যাগ করেছে। এবং এটা আসলে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসনের ফল।’ ভাবতে অবাকই লাগে, গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া অং সান সুচি এমন কথা বলতে পারেন, সত্য স্বীকারে অস্বীকৃতি জানাতে পারেন এবং রোহিঙ্গাদের দেশ ত্যাগ আর বিভিন্ন কারণে বৌদ্ধদের দেশ ত্যাগকে এক করে দেখতে পারেন। তার মধ্যে যত সূক্ষ্মই হোক, মুসলিম বিদ্বেষও যে বিদ্যমান রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।
অতঃপর আগামীতে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য মুসলমানের অবস্থা যে মিয়ানমারে কি হতে পারে তা আন্দাজ করা যায়। কিন্তু যেহেতু দেশটি গণতন্ত্রের পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে এমন একটা সময় হয়তো আসতে পারে যখন শাসকরা প্রকৃত সত্য ও বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবেন, সেখানকার সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার ও উন্নয়নে ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করবেন ও পদক্ষেপ নেবেন। আমরা বর্তমান শাসকদের শুভবুদ্ধি কামনা করি। তাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এত বড় একটি সমস্যা ধামাচাপা দেয়া যাবে না। অস্বীকার করাও সদ্বিবেচনা ও দূরদৃষ্টির পরিচায়ক হবে না। সত্য ও বাস্তবতা স্বীকার করেই সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি মানবাধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে। আমরা এই মূল্যবোধ সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠাই দেখতে চাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন