সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মাদক আগ্রাসন রুখতে হবে

ইফতেখার আহমেদ টিপু | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম


মাদক আগ্রাসন দেশের যুবসমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সৃষ্টি করছে অবক্ষয়। দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্যও তা মূর্তমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনুমানিক হিসাবে দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় ৫২ লাখ। প্রতি বছর ৫ লাখ তরুণ-তরুণী মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তের ৪১ ভাগই বেকার এবং এদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ ভাগ। সোজা কথায়, শতকরা ৫৫ ভাগ মাদকসেবী মাদকের অর্থ জোগাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তারা মাদকের অর্থ জোগাতে পারিবারিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করছে। ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গড়ে প্রতি দুজন মাদকাসক্তের একজন অপরাধ কর্মকাÐে জড়িত। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িতদের সিংহভাগই মাদকাসক্তের শিকার। এ অবস্থায় মাদক আগ্রাসন ঠেকাতে সর্বাত্মক পদক্ষেপের বিকল্প নেই। মাদকের বিরুদ্ধে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরি হয়ে উঠেছে। মাদক ঠেকাতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মাদক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের অনেকের মধ্যেই সততার সংকট রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় মাদক প্রতিরোধে যেসব কমিটি গড়ে উঠেছে, সেগুলোর ৮০ ভাগ সদস্য নিজেরাই মাদক ব্যবসায় জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক ভূমিকা রাখলে মাদক আগ্রাসনের ইতি ঘটানো সম্ভব। মাদক নিয়ন্ত্রণে কড়া আইন প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে কার্যকরের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষক এবং ধর্মীয় নেতাদের অগ্রণী ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। নৈতিক শিক্ষার ধারা জোরদার করা সম্ভব হলে মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ার বিপদ অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানদের সর্বনাশ না চাইলে বাবা-মা-অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। তারা কাদের সঙ্গে মিশছে, কীভাবে চলছে সে বিষয়ে নজর রাখলে বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
সব দেশেই কিছু দ্রব্য ‘নেশার উপকরণ’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবই ‘মাদক বা ড্রাগ’ হিসেবে চিহ্নিত নয়, যদিও বয়স-গোষ্ঠীভেদে এসবের ব্যবহারে সতর্কতার নীতি মান্য করা হয়। বয়ঃক্রমিক বিধিনিষেধও থাকে। নীতি-বিধি না মানলে নিন্দা-সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। বিষয়টি বহুকাল সমাজই সামাল দিয়েছে; পরিবারও শাসন করেছে। রাষ্ট্রের এ বিষয়ে খুব বেশি মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন পড়ত না। সত্য কথা হলো, ১৯৬০ সালের আগে ‘ড্রাগ এবিউজ’ কথাটি সেভাবে চালু ছিল না। মার্কিন সমাজে ‘মাদকাসক্তি বিষয়ে উদ্বেগ’-এর শুরু তখন থেকে। এর পর থেকে মাদক সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের সংশ্লিষ্টতা বাড়তে থাকে। বর্তমান বিশ্বের সব দেশের জন্যই এটি সমস্যা কারো কম, কারো বেশি। মাদক সমস্যা সমাধানের উপায় খোঁজার ক্ষেত্রে এ পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রাখা জরুরি।
মাদক নিয়ে যে ভয়াবহতার কথা আমরা বলছি, তার সূচনা গত শতকের আশির দশকের গোড়ার দিকে। একে একে আমাদের সমাজে অনুপ্রবেশ করল হেরোইন, কোকেন ও ফেনসিডিল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি অনুপ্রবেশ করল ইয়াবা। হালের ফ্যাশন সিসা। এসবের সঙ্গে আবার আভিজাত্য ও স্মার্টনেস যুক্ত হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫০ হাজার তরুণ-যুবক সিসায় আসক্ত। শুরুতে উচ্চবিত্ত ঘরের তরুণ-তরুণীরা এর ভোক্তা ছিল। এখন তা মোটামুটি সর্বব্যাপ্ত।
কেন মাদকদ্রব্যের বিস্তৃতি ও বৈচিত্র্য বাড়ছে এবং কোন বাস্তবতায় এসব ‘এবিউজ’-এর তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেসব যদি বিবেচনায় না নেওয়া হয়, তাহলে মাদক সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। সমাজ হাহাকার করবে, রাষ্ট্র বা তার অধীন সংস্থা সক্রিয়তার পরাকাষ্ঠা দেখাবে, কিন্তু কাজের কাজ হবে না; বরং মাদকের বিস্তার ও বৈচিত্র্য আরো বাড়বে। গত প্রায় সাড়ে তিন দশকের অভিজ্ঞতা সে কথাই বলে। ইতিহাস-সমাজ-সংস্কৃতি বিবেচনায় না নিলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার (বিশেষ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) কাঠামোতে ও আভিযানিক সক্ষমতায় পরিবর্তন না ঘটালে মাদক সমস্যার কার্যকর সমাধান মিলবে না। তাই সরকারকে আগাপাছতলা ভেবে নীতি প্রণয়ন করতে হবে। নির্মূলের আগে নিরাময়ে মনোনিবেশ করতে হবে।
লেখক: চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রæপ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন