এমএ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে
সবুজে ঘেরা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আকাশ ছুঁই ছুঁই করা বাঁশঝাড়। যে গ্রাম অথবা পাড়ায় বাঁশঝাড় নেই, সে গ্রাম অথবা পাড়ার সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতাই যেন ফুঁটে ওঠে না। ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের সংমিশ্রণ তৈরি করে যে বাঁশঝাড় আকাশ ছুঁই ছুঁই করে পথিকসহ সব মানুষের প্রাণ জুড়াতো সে বাঁশঝাড় আজ সবুজ গ্রাম-বাংলা থেকে খুব দ্রুতই বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাঁশঝাড়। বাঁশঝাড়কে বলা হয় গাম-বাংলার সবুজ অরণ্য। এ সবুজ অরণ্য বাঁশঝাড় নওগাঁর মহাদেবপুরসহ আশাপাশ উপজেলার গ্রামাঞ্চলের আনাচে-কানাচে প্রচুর পরিমাণে দেখা গেছে নিকট অতীতেও। কিন্তু এখন পাল্টে গেছে সেই চিরচেনা চিত্র। অতীত সময়গুলোতে বাঁশ-কঞ্চি ছাড়া বসতবাড়ি, বৈঠকখানা ও গরু-ছাগলের বাসস্থানসহ নানান স্থাপনা নির্মাণের কথা চিন্তাই করতে পারত না পল্লী-গ্রামের বাসিন্দারা। এখন মানুষের চিন্তায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে বসতবাড়িসহ নানান স্থাপনা নির্মাণ করার কল্পনাই এখন করতে পারছেন না ওই একই মানুষ। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে বাঁশ-কঞ্চির সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে ইট-পাথরসহ রড-সিমেন্টের খুঁটি। রড-সিমেন্ট ও ইট-পাথরের মূল্য বেশি হলেও সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং অধিক নিরাপত্তার স্বার্থেই মানুষ ঘরদোর নির্মাণে আর বাঁশ-কঞ্চির ব্যবহার করছেন না। এ কারণে মানুষের ওই সব কাজে গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে বাঁশ। প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষজন অতীতে বাঁশ চাষে মনযোগী ছিলেন। বর্তমানে বাঁশ-কঞ্চির ব্যবহার একেবারে ফুঁরিয়ে না গেলেও এ এলাকায় বাঁশের চাষ এখন হচ্ছে না বললেই চলে। নিকট অতীতেও দেখা গেছে প্রত্যন্ত পল্লির আনাচে-কানাচে বিশাল আকৃতির সব বাঁশঝাড়। সেসব বাঁশঝাড় আবার এতই ঘন ছিল যে, সেখানে গরু-ছাগল দূরে থাক শৃগাল-কুকুরও সহজে প্রবেশ করতে পারত না। সেগুলোকে বাঁশঝাড় না বলে বাঁশবন বললেও ভুল হবে না। সে সময়ের ওই বাঁশবনগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। সময়ের সাথে দিনে দিনে উজাড় হয়ে গেছে বাঁশবন। আর সেখানে জায়গা করে নিয়েছে ফল-ফসলের ক্ষেত-খামার অথবা বসতবাড়ি। মানুষজন বাঁশঝাড়গুলো উজাড় করে দিলেও নতুন ভাবে রোপণের প্রয়োজনই মনে করেনি। এ কারণে এখন অনেক গ্রাম অথবা পাড়া ঘুরেও চোখে পড়ে না বাঁশঝাড় অথবা বাঁশবন। প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রয়োজনেই বাঁশ চাষ এখন জরুরি বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন