প্রতি বছর ২০ শে মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে প্রায় ২০০টি দেশে আনুমানিক ১০ লক্ষাধিক ডেন্টাল সার্জন এ দিনটি পালণ করে থাকে। এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস যার মাধ্যমে সবাইকে জানানো হয় স্বাস্থ্যবান মুখের লাভ ও প্রাপ্তি সম্পর্কে। সারা বিশ্বে মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সব বয়সী মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে মানুষের সার্বিক সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিত করাও এ দিনটির অন্যতম লক্ষ। স্বাস্থ্যবান মুখ হলো স্বাস্থ্যবান শরীরের প্রতিচ্ছবি। ওয়ার্ল্ড ডেন্টাল ফেডারেশন (ঋউও) কর্তৃক ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে এর থিম ছিল, “Say Ahh: Think Mouth, Think Health.” মুখের স্বাস্থ্য এর সাথে মানুষের সাধারণ স্বাস্থ্যের যোগসূত্র সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যেই ক্যাম্পেইনের বিষয়বস্তু ঠিক করা হয়েছে। “Say Ahh” হলো একটি শব্দ বা নির্দেশনা যা ডেন্টিস্ট বা ডাক্তার কর্তৃক চেক আপ এর সময় উচ্চারিত হয়ে থাকে। আরও সহজ করে বললে রোগীর মুখের অভ্যন্তরভাগ দেখার জন্য রোগীকে ডাক্তাররা হা করতে বলেন।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় মুখের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। আপনার মুখের স্বাস্থ্যকে কখনই আপনি বাকী শরীর থেকে আলাদা করতে পারবেন না। অধিকাংশ মুখের রোগের ক্ষেত্রেই অন্যান্য শরীরের রোগের সাথে একই ধরণের রিস্ক ফ্যাকটর বিদ্যমান থাকে। হৃদরোগ ইতিমধ্যেই শীর্ষ ঘাতক ব্যধি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যা মাড়ি রোগের সাথে সম্পৃক্ত। সম্প্রতি জরিপে দেখা গেছে মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সার বা টিউমারের সাথে সম্পৃক্ত। যাদের মাড়ি রোগ নেই এবং মাড়ি সুস্থ তাদের চেয়ে সর্ব সাধারণের মাঝে যাদের মাড়ি রোগ আছে, তাদের হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মাড়ি রোগের মাধ্যমে যদি ব্যাকটেরিয়া “ভিরিড্যানস্ ষ্ট্রেপটোকক্কাই” রক্ত প্রবাহে সংক্রমিত হয় তাহলে হার্টের ভাল্ব নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই মাড়ি রোগের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবহেলা করবেন না। আপনি যদি গর্ভবতী হয়ে থাকেন এবং আপনার যদি মাড়ি রোগ থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয় ঐ শিশু আকার আকৃতিতে ছোট হবে। থাইরয়েড গ্রন্থির অচলাবস্থার কারণে মুখের অভ্যন্তরে পেরিওডন্টাল অবস্থার অবনতি ঘটবে। আবার পেরিওডন্টাল স্বাস্থ্য খারাপ হলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের মাধ্যমে আপনার হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের মত লিভারের রোগের সাথে পেরিওডন্টাল রোগের যোগসূত্র রয়েছে।
লিভারের রোগে অনেক সময় মুখে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়ে বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। পেরিওডন্টাইটিস এর সাথে লিভারের রোগ যেমন-নন অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়, অর্থাৎ এসব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। মুখের অভ্যন্তরে কোনো সার্জারির পর রক্তপাত বেশি হতে পারে লিভারের রোগে। কোয়াগুলোপ্যাথির জন্য সামান্য আঘাতে মাড়ি থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রনিক লিভার ডিজিজে দাঁত ও মাড়িতে সবুজ দাগ এবং এনামেল হাইপোপ্লাসিয়া দেখা যেতে পারে।
হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস মুখের অভ্যন্তরে জেনিটাল ওয়ার্টস এবং গোটার সৃষ্টি করে থাকে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে মুখের ক্যান্সার এবং সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিওলোমা ভাইরাস টাইপ-১৬ কে মুখের ক্যান্সারের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসাবে গণ্য করা হয়। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের মাসিক এর সময় মুখে আলসার ও জ্বালাপোড়া হতে পারে। আবার মাসিক বন্ধ হয়ে গেলেও মেনোপজের সময়ও মুখে আলসার বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। এসময় কারো কারো মেজাজ খিট খিটে ধরণের হয়ে থাকে। ডাউন সিনড্রোমের শিশুদের জন্মের সময় জিহ্বায় ফুলা ভাব থাকতে পারে। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের কারণে মুখে ও ঠোঁটে বার বার জ্বরঠোসা ও ক্ষত দেখা দিতে পারে। যাদের প্রদাহজণিত অন্ত্রের রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে প্রায়ই মুখে নানাবিধ আলসার বা ঘাঁ দেখা যায়। তাই এখন থেকে আপনার মুখের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হউন এবং আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখুন। মুখকে নিয়ে ভাবুন, মুখ আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যকে নিয়ে ভাববে। মনে রাখবেন মুখগহ্বরকে অবহেলা করে কখনই আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখা সম্ভব নয়।
-ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল : dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন