শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

সঙ্কটে বিএনপি দ্বন্দ্বে আ.লীগ স্বস্তিতে জাপা সুবিধা নিতে চায় এলডিপি

কুমিল্লা-৭ চান্দিনায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া

চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৮ মাস বাকি থাকলেও নির্বাচনি হাওয়া লেগেছে দেশের সংসদীয় আসনগুলোতে। এর ব্যতিক্রম নয় কুমিল্লার চান্দিনা। কে হবেন নৌকার মাঝি, ধানের শীষই বা কার হাতে শোভা পাবে ভোটারদের মধ্যে চলছে এসব জল্পনা-কল্পনা। কুমিল্লায় কৃষিপণ্য উৎপাদনের অন্যতম উপজেলা চান্দিনা। তাই কৃষকের মনের ভাষা আর সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্ট ও দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের যিনি বুঝতে পারবেন এবং মূল্যায়ন করতে জানেন, তিনিই চান্দিনা থেকে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। চান্দিনার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার এ আসনটি নানা কারণে বিভিন্ন সময় আলোচিত-সমালোচিত। এক সময়ের বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও বর্তমানে আসটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত লাভ করেছে। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ঘুরে ফিরে চান্দিনা আসটি দখলে ছিল ড. রেদোয়ান ও আলী আশরাফের। তবে এবার একাদশ নির্বাচনে এই দুই নেতার সাথে নতুন করে আরেকটি নাম যুক্ত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. প্রাণগোপাল দত্ত। বর্তমান এমপি আলী আশরাফও মাঠে সক্রিয় থাকায় প্রায়ই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দ্ব›দ্ব-সঙ্ঘাতে খবর পাওয়া যায়।
সম্প্রতি সময়ে চান্দিনায় ডা. প্রাণগোপাল দত্ত এবং আলী আশরাফের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় জনসাধারণের মাঝে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের দ্ব›েদ্বর বিষয়টি প্রকাশ পায়। নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার একে অপরের বিরুদ্ধে নেতিবাচক বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি অনেকেরই দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। তাদের এই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। তবে এ অবস্থা নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকলে আগামী নির্বাচনে এই আসনে আ.লীগের জয় পরাজয়ে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এরা দু’জনই আ.লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তবে সম্প্রতি সময়ে সম্ভাব্য ‘এমপি প্রার্থীদের আমলনামা এখন শেখ হাসিনার হাতে’ শিরোনামে জাতীয় একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদে মনোনয়ন পাবে না ১৩০ এমপির নাম প্রকাশ করে। ওই তালিকায় অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপির নাম থাকায় ভোটারদের মাঝে গুঞ্জন শুরু হয়। এ ছাড়া বিগত সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চান্দিনায় একটি রাজনৈতিক সভায় বলেন, নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ সংসদ সদস্যদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়ার বিষয়ে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময় দর্শক সারিতে বসা চান্দিনার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্য ওবায়দুল কাদের বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবরা কে কত টাকা দিয়ে মনোনয়ন নিয়েছেন, কে কোন দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ছেন, সব কিছুই আগামী সংসদ সদস্যের মনোনয়নের ব্যাপারে জেনে শুনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে আগামী নির্বাচনে প্রাণগোপালই হবেন চান্দিনার নৌকার মাঝি- এমন কথা বলেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকে। তবে এই বিষয়ে চান্দিনা উপজেলা আ.লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফকে মনোনয়ন দিবে না পত্রিকায় যে খবর আসছে, এটা কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো সিন্ধান্ত নয়। বিগত দিনে চান্দিনার যা উন্নয়ন হয়েছে সব আলী আশরাফের কারণেই হয়েছে। তাই আলী আশরাফই নমিনেশন পাবেন। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা শুধু চান্দিনার চেয়ারম্যনদের উদ্দেশ্য নয়, দেশের সকল চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্য বক্তব্য দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ডা. প্রাণগোপাল কেন! নির্বাচনের আগে অতিথি পাখির মতো বহু নেতাকর্মীই গণসংসযোগে বেড়িয়ে পড়ে। যাদের বিগত দিনে চান্দিনায় দেখা যায়নি। প্রাণগোপালের নির্বাচনের ব্যাপারে মহিউদ্দিন আলম বলেন, আমি কুমিল্লা উত্তর জেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছি ডা: প্রাণগোপাল দত্ত আমাকে তো কোনো সময় বলেনি, যে ওনি নির্বাচন করবেন। গণসংযোগ করা আর নির্বাচন করা এক কথা নয়।
এদিকে চান্দিনার স্থানীয় অসংখ্য নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাণগোপাল দত্ত। এর মধ্যে একাধিক ইউপি চেয়ারম্যান, সাবেক পৌরমেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে রয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী প্রাণগোপাল দত্তের সাথে নিয়মতি যোগাযোগ রাখছেন বলে প্রাণগোপাল দত্তের কর্মী মো. মুজিবুর রহমান মুজিব দাবি করে তিনি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন অবশ্যই প্রাণগোপাল দত্ত প্রার্থী হবেন।
এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলে- এ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জোটের অন্যতম শরিক দল লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। এবার এখানে জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন ড. রেদোয়ান আহমেদ। তবে খোরশেদ আলমের মৃত্যুর পর বিএনপি রীতিমতো অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। দলে নানা মতবিরোধ দেখা দেয়। তবে চান্দিনায় বিএনপির একটি বিশাল ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে। এই ভোট ব্যাংক আগামী এমপি নির্বাচনে জয় পরাজয়ের একটি বিশাল ভ‚মিকা রাখবে। কিন্তু জোটের বাইরে বিএনপির প্রভাবশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় সঙ্কটে রয়েছে বিএনপির ভোটাররা। তবে খোরশেদ আলমের ছেলে আতিকুল আলম শাওনের নাম প্রস্তাব করলেও শাত্তন বিগত দিনে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তাকে দেখা না যাওয়া ছাড়াও বয়স কম হওয়ায় দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা তা মানতে নারাজ। তাই এই মুহূর্তে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা প্রার্থী হলে দলের ভরাডুবি নিশ্চিত। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির এসব বিরোধের মাঝে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। আগামী নির্বাচনে জোটের শরিক জাতীয় পার্টি এ আসন ভাগ পেতে চায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে জাতীয় পার্টির লুৎফর রেজা খোকন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন