বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মহাদেবপুরে টুপি তৈরিতে ঘুরছে হাজারো নারীর ভাগ্যের চাকা

প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এমএ ছালাম, মহাদেবপুর (নওগাঁ) থেকে

এখন টুপিই বদলে দিয়েছে হাজার হাজার নারীর জীবনমান। কথায় আছে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। এ কথার স্বার্থকতা প্রমাণ করেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হাজার হাজার নারী। এসব নারীর বেশির ভাগই প্রত্যন্তপল্লীর দরিদ্র শ্রেণির। যারা ছিল এক সময় অসচ্ছল। অতিকষ্টে চলতো তাদের সংসার। অন্নের জোগাড় হলেও সন্তানের পড়ালেখার খরচ জুটতো না। এরকম কষ্টের মধ্যে থাকা নারীরা আজ টুপির বদৌলতে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। টুপি তৈরি থেকে পাওয়া টাকায় প্রয়োজন মিটিয়েও কিছু টাকা তারা এখন সঞ্চয়ও করছেন। সঞ্চয়ের এ টাকা সংসারের আপদকালীন সময় বেশ উপকারে আসছে। কখনোও মনের বাসনাও পূরণ করছেন সংসারের আসবাবপত্র ক্রয় করে। টুপি তৈরিতে অফ সিজন বলে কিছু নেই। সারা বছরই সিজন। তবে বছরে ২ ঈদ মৌসুমে কাজের চাপ অত্যন্ত বেড়ে যায়। সারা বছরই কাজের চাপ থাকে মাত্রা ছাড়ানো। এখন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অগণিত নারী ব্যস্ত রয়েছেন টুপি তৈরিতে। কারণ দেশের চাহিদা পূরণের পর এসব টুপি চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। দেশি-বিদেশি চাহিদার সাথে ২ ঈদে এসে কয়েকগুণ বাড়তি চাহিদা থাকায় দেখা যায়, চাহিদা মোতাবেক টুপি সাপ্লাই দিতে পারছেন না তারা। টুপির এ বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে দিনরাত পরিশ্রম করেন তারা। উপজেলার প্রায় অর্ধ লক্ষ নারী কারিগর টুপি তৈরির সাথে জড়িত আছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। আগে এসব পরিবারের নারীরা শুধু পুরুষ সদস্যের আয়ের উপর নির্ভরশীল ছিলেন। ওই পরিবারের নারীরা এখন টুপি তৈরির মাধ্যমে বাড়তি আয় যোগ করে সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। উপজেলার শিবরামপুর, বিলমোহাম্মদপুর, লক্ষণপুর, রামচন্দ্রপুর, হেরেমনগর, রামরায়পুর, বাগডোব, ফাজিলপুর, চকগোবিন্দ, ডিমজাউন, গোপিনাথপুর ও ভালাইন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি চলছে টুপি তৈরির কাজ। টুপির কারিগরদের মধ্যে তাসলিমা, মৌসুমী, বেলো, ফাতেমা, সুলতানা ও সাবিহা জানান, তারা কাজের ফাঁকে সারাবছর টুপি তৈরি করে প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকারও বেশি আয় করেন। ২ ঈদ মৌসুমে এ আয় আরো বেড়ে যায় বলে তারা জানান। শুধু তাসলিমারাই নয়, জোসনা, মারিয়া, মুক্তা, মাসুদা, নাছিমা, আঙ্গুরী ও মাবিয়াসহ হাজার হাজার নারী টুপি তৈরি করে প্রতিমাসে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে সংসারের ব্যয় মেটাচ্ছেন। আবার এসব এলাকার অনেক শিক্ষার্থী মেয়েরাও লেখা পড়ার ফাঁকে টুপি তৈরি করে লেখাপড়ার খরচ মিটিয়েও বাড়তি আয় পিতার সংসারে দিচ্ছে। শিক্ষার্থী দিলরুবা, সাথী, নাদিরা ও পারভীন সুলতানা জানায়, তাদের দরিদ্র পিতার পক্ষে জামা কাপড়সহ লেখাপড়ার খরচ জোগানো সম্ভব হয় না। প্রতিবেশীদের কাছে টুপি তৈরি করা শিখে এখন তারাও বাড়তি আয় করে লেখাপড়ার খরচসহ নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয় মিটিয়ে অবশিষ্ট টাকা পিতার সংসারে দিচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন