নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় দিন দিন কৃষিকাজসহ নানা ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকের উপস্থিতি বাড়ছে। তুলনামুলকভাবে নারীরা কাজে বেশি মনোযোগী সেই সাথে পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় মজুরি কম হওয়ায় নারী শ্রমিকদের কদর বেড়েই চলেছে। নারীরা এখন আর ঘরে বসে নেই। উপার্জন বাড়িয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষের পাশাপাশি ক্ষেত-খামারেও শ্রম বিক্রি শুরু করেছে। জানা যায়, পূর্বে এ জনপদের ক্ষেত-খামারে নারীদের শ্রম বিক্রি করার তেমন একটা রেওয়াজ ছিল না। কয়েক দশক আগে এলাকায় বসবাসরত বাগদি সম্প্রদায়ের কিছু কিছু নারীরা কৃষিক্ষেত্রে ধান রোপণ, ফসল তোলা ও সবজি ক্ষেতে কাজ করতে শুরু করে। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে শুধুমাত্র পুরুষদের পরিশ্রমে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সংসারে সচ্ছলতা আনতে পুরুষের পাশপাশি নারীরাও ক্ষেত-খামারে কাজ করতে শুরু করেছে। কিন্তু নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই কাজে পুরুষের সম পরিমাণ প্ররিশ্রম করলেও তারা মজুরি পাচ্ছে কম। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও অবজ্ঞার কারণে নারীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের শ্রমের ন্যায্য মজুরি থেকে। এক সময় এ অঞ্চলের নারী শ্রমিকদের কাজ চাতালে ও গৃহস্তের বাড়িতে ধান সিদ্ধ করা, শুকানো ও চাউল তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে নারী শ্রমিকরা কৃষিক্ষেত্রে ধান, ভূট্টা, সবজিসহ নানা ধরনের ফসল রোপন পরিচর্যা ও ফসল তোলার কাজ করছে। এছাড়া ধান, গম, ভূট্টা ইত্যাদি মাড়াই থেকে শুরু করে ঝেড়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত সমস্ত কাজই করে থাকে নারীরা। উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের রাজার মাঠে কর্মরত নারী শ্রমিক সবেদা, আল্লাদি, মর্জিনা, মনোয়ারা, কোহিনুর, পঞ্চবালা, কাজলী ও সুবারন বলেন, আমরা জয়রামপুর গ্রামের বাসিন্দা। দল বেঁধে গ্রামের ক্ষেত-খামারে কাজ করি। এ অঞ্চলের প্রথা অনুযায়ী সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত গৃহস্থের জমিতে নানা ধরনের কৃষিকাজ কাজ করতে হয়। গৃহস্থরা আমাদের মজুরি দেয় ১শ’ টাকা থেকে ১শ’ ২০ টাকা। অথচ একই কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিকদের দেয়া হয় ১শ’ ৫০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা। দল বেঁধে ক্ষেত-খামারে কাজ করতে বর্তমানে কোন অসুবিধা হয় না। তবে নিজেদের এলাকার গ-ি পেরিয়ে বাইরে কাজ করতে যাইনে। পুরুষদের মতো আমরাও ক্ষেত-খামারের কাজ করতে পারি। মজুরি বৈষম্য থাকলেও সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে পুরুষদের পাশাপাশি আমরাও ক্ষেতে খামারে কাজ করে থাকি। একটি ইটভাটায় কর্মরত দর্শনা পৌর এলাকার মহম্মদপুরের মর্জিনা ও আরতি বলেন, আমরা ইটভাটায় কাজ করি। ১৪০ টাকা মজুরিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কিলন্ লেপারে কাজ করি। ভাটা মালিক প্রতি সপ্তায় এ মজুরি পরিশোধ করেন। বছরে ৫/৬ মাস ধরে কাজ করি। তাতে আমাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের উপার্জন দিয়ে সংসার ভালোই চলে। ২০১৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার সেভেন হিল হোটেলে অক্সফাম ও সমষ্টি আয়োজিত এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে বক্তারা জানান, বর্তমানে দেশের কৃষির সঙ্গে পুরুষ শ্রমশক্তির ৪১ দশমিক শূন্য আট শতাংশ ও নারী শ্রমশক্তির ৬৮ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ জড়িত রয়েছে। কৃষিতে নারী শ্রমশক্তি বেশি হলেও কৃষি জমির মালিকানা পুরুষের ৯৬ শতাংশ আর মাত্র ৪ শতাংশ নারীদের। এদিকে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি ভূমিকা রাখলেও এখনও নারীদের কৃষক বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। সচেতন মহল মনে করেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই হলো নারী। বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে নানামুখী কাজ করছে। তাই বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে কৃষক হিসেবে নারীর স্বীকৃতির বিষয়টিও ভেবে দেখার দাবি রাখে। সেই সাথে বেকার নারীদের কৃষিকাজসহ নানা ধরনের কাজের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও কাজের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে পারলে পুরুষের মতো তারাও কৃষিক্ষেত্রসহ সমাজের নানা কাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে। তাতে একদিকে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হবে অপরদিকে নারী-পুরুষ মিলে দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়া সহজ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন