পীরগঞ্জ (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
মসলা জাতীয় ফসল মরিচ। বোরোসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভজনক ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পীরগঞ্জে কৃষকরা মরিচ চাষে ঝুঁকছে। ইতোমধ্যে মরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। অধিক লাভজনক হওয়ায় মরিচ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকের। ফলে আগামীতে মরিচ চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ২শ’ হেক্টর জমিতে এ বছর মরিচ চাষ হয়েছে। কৃষক এখন মরিচ আহরণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার সমীর চন্দ্র জানান, মরিচ উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুর উপযোগী ফসল। সব ধরনের দোআঁশ মাটিতে এর চাষ হয়ে থাকে। তাপমাত্রা খুব বেশি হলে মরিচ গাছে ফুল আসা ব্যাহত হয়। তিনি আরো বলেন, পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষক বিগত বছরগুলোতে সর্বাধিক পরিমাণে কাঁচা মরিচ চাষ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন। উপজেলার কাঞ্চনের বাজার হতে লালদীঘিগামী সড়কের দু’ধার দিয়ে শত শত একর জমিতে আবাদকৃত মরিচ ক্ষেতের সবুজ দৃশ্য সকলের নজর কাড়ে। মিলনপুর গ্রামের কৃষক রাজা মিয়া জানান, কয়েক বছর থেকে কাঁচা মরিচ চাষ করছেন তিনি। এবারেও ৭৫ শতাংশ জমিতে মরিচ আবাদ করেছেন। এজন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তিনি আরও বলেন, সরিষা তুলেই ওই জমিতেই হাইব্রিড জাতের মরিচের চারা লাগিয়েছেন। মাটিতে রস না থাকায় কৃত্রিম সেচ দিয়ে মরিচের চারা লাগাতে হয়েছিল সে সময়। উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মরিচ চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, লাভজনক ফসল হওয়ায় মরিচ এর আবাদ করেছি। গত বছর ১ একর জমিতে মরিচের চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছি। যে কারণে এবার ৩ একর জমিতে মরিচের চাষ করছি। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, জমিতে মরিচের চারা রোপণের ৩৫ হতে ৪৫ দিনের মধ্যে গাছে ফুল আসে এবং ৫০ হতে ৬০ দিনের মধ্যে মরিচের উৎপাদন ও বাজারজাত করণ শুরু হয়। কাঁচা মরিচের হেক্টর প্রতি ফলন ৬ থেকে ৯ টন, অন্যদিকে শুকনো মরিচের হেক্টর প্রতি ফলন দেড় হতে ২ টন। তাছাড়াও হেক্টর প্রতি ৮০ থেকে ১শ’ কেজি মরিচের বীজ পাওয়া সম্ভব। এলাকায় মরিচের চাহিদা সিংহভাগই পূরণ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রংপুরের এই উপজেলার অধিকাংশ মরিচ চাষি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দপ্তর জানায়, রংপুরের কৃষকরা বিগত বছরগুলোতে মরিচ চাষ করে লাভবান হয়েছে। কৃষকরা ক্ষতিকর পোকামাকড় যেমন- থ্রিপস, জাবপোকা, কা-কাটা পোকা, মড়ক ও পচা রোগ হতে মরিচ ফসলকে রক্ষা করে যাতে আরো বেশি লাভবান হতে পারে। সেজন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ফলে চলতি মৌসুমে মরিচে কোন প্রকার রোগ-বালাই ছাড়াই কৃষকরা তাদের কষ্টে উপার্জিত মরিচ ঘরে তুলতে পারছেন। এতে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। অপরদিকে এলাকার চাহিদা মিটিয়েও রাজধানী এলাকায় বিক্রির জন্য পাঠাতে পারছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন