শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি : ব্যাংকিং খাত বিকলাঙ্গ ও এতিম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাত বিকলাঙ্গে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। একই সঙ্গে আর্থিক খাতের এই মূলস্তম্ভটি এতিমে পরিণত হয়েছে বলেও মনে করছে এই গবেষণা সংস্থাটি। এছাড়া কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি থেকে বাংলাদেশ আয়হীন কর্মসংস্থানে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছে এই গবেষণা সংস্থাটি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের সুপারিশ তুলে ধরতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির পক্ষে এসব কথা বলেন সংস্থাটির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
ঘোষিত মুদ্রানীতি মেনে চলতে হবে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, তারল্য ঘাটতির কথা বলে সরকার মুদ্রানীতি ঘোষণার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সিআরআর কমিয়ে দিয়ে মুদ্রার ফ্লো বাড়ানোর চেষ্টা করলো। আসলে তারল্য ঘাটতি একটি রোগের উপসর্গ, এটা কোন রোগ না। রোগ হলো আপনি (সরকার) একটি বিকলাঙ্গ ব্যাংকিং ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছেন।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিষয়ে গত বছরের শুরুতে আমরা বলেছিলাম ২০১৭ সাল ব্যাংকিং কেলেঙ্কারির বছর। এবার আমাদের মনে হচ্ছে ব্যাংকিং খাত নিতান্তই এতিমে পরিণত হয়েছে। এর রক্ষকরাই এখন এই শিশু, এতিমের ওপর অত্যাচার করছেন। যাদের এটা রক্ষা করার কথা ছিল, তারাই বিভিন্ন চাপের মুখে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন। দেবপ্রিয় বলেন, মুদ্রানীতি ও ব্যাংকিং খাতে সংযত থাকার দরকার আছে। একই রকমভাবে মুদ্রা বিনিময় হারে সংযত থাকার দরকার আছে। আপনি এটাকে গতিশীল ও স্থিতিশীল করবেন। বিনিময় হারে হয় তো ডলারের দাম বাড়বে। কিন্তু এমনভাবে মজুদ বাড়িয়ে সামাল দিতে হবে যাতে আমদানি ব্যয় উস্কে না দেয়। সুদের হার, বিনিময় হার, ঋণের প্রবাহ সংযতই রাখতে হবে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তুলতে সরকারি উদ্যোগে অর্থ দেওয়ার বিরোধিতাও করেন তিনি। মানুষের করের টাকা দিয়ে এইভাবে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা এবং এখানে যে পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে, এ জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা ঠিক না। এই ধরনের ব্যাংকের জন্য অর্থের অন্য উৎস খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি। প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পক্ষেও মত দেন তিনি। দেশীয় মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতার জন্য রিজার্ভ ব্যবহারের পক্ষেও মত দেন দেবপ্রিয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়ে চললেও তা ‘সত্যিকার অর্থে মানুষের আয় বাড়াচ্ছে না’ বলে মনে করছে সিপিডি। তারা বলছে, প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও আয় এই চারটি সূচকের মধ্যে সামঞ্জস্য না হওয়ায় দেশের যে উন্নতির কথা বলা হচ্ছে তার কোনো ইতিবাচক ফল মানুষ পাবে না।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে ‘স্টেট অফ দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি ইন ২০১৭-১৮’ শীর্ষক আলোচনায় সিপিডির এই বক্তব্য আসে। সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, সরকারের হিসাব থেকে আমরা দেখছি প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। পাশাপাশি আমরা দেখছি, দেশের সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। প্রবৃদ্ধি দিয়ে তো আমাদের কিছু হবে না। প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে আমরা তর্ক-বিতর্ক করতে পারি, কিন্তু তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে, এর ফলাফলটা কী? আসল কথা হচ্ছে কর্মসংস্থান হল কি না, আয় হল কি না। মানুষের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈষম্যও বেড়েছে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণ।
দেবপ্রিয় বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি বাংলাদেশে আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়ছে। আয় কমেছে উত্তর বাংলায়, দক্ষিণ পূর্ব বাংলায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি। এতদিন আমরা উচ্চতর প্রবৃদ্ধির জন্য তাগাদা দিয়েছি। এই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ হলেও আজকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে কর্মসংস্থান। কারণ যে কর্মসংস্থানটুকু সৃষ্টি হয়েছে, সেটুকু হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। সেখানে আয় কম।
তিনি বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি, উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও আয় এই চারটির মধ্য সামঞ্জস্য আছে কি না দেখতে হবে। এই চারটার মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলে বুঝতে হবে আমাদের এমন ধরণের আয় হচ্ছে, যেটা নিয়ে চিন্তার বিষয়। আমরা দেখছি দেশে কর্মসংস্থান বাড়লেও আয় কমছে। অর্থাৎ দেশ আয়হীন কর্মসংস্থানে পরিণত হয়েছে। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধির বিপরীতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা এতোদিন যেটা শুনেছেন কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি, শুনেছেন না জব লেস গ্রোথ। আজকে আমরা বলছি আয়হীন কর্মসংস্থান। আমরা কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি থেকে বের হয়ে আয়হীন কর্মসংস্থানে চলে গেছি’।
প্রায় এক দশক ছয় শতাংশের বৃত্তে আটকে থাকার পর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ অতিক্রম করে। এরপর গত দুই অর্থবছর ধরেই প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তাও সরকারি বিনিয়োগের কারণে বলে সিপিডির পর্যবেক্ষণ।
দেবপ্রিয় বলেন, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ গত তিন বছর যাবত প্রায় একই জায়গাতে স্থবির হয়ে আছে। তাহলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগে বেসরকারি ঋণপ্রবাহ যে বাড়ছে, সেই অর্থ কোথায় যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। এই টাকা গেল কোথায়? বিনিয়োগ বাড়ল না ব্যক্তি খাতে। এই টাকা গেল কোথায়?
আমদানি অনেক বেড়ে যাওয়ার দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, এর আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুঁজিপণ্য আমদানি হচ্ছে এবং ব্যক্তিখাতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের টাকাও যাচ্ছে, কিন্তু ব্যক্তি বিনিয়োগ হচ্ছে না, এটা কী রকম কথা!
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে সিপিডির গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি কিছুটা গতিশীল হয়েছে কিন্তু সেই প্রবৃদ্ধি সত্যিকার অর্থে আয় বৃদ্ধি করতে পারছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন সার্বিকভাবে স্থিতিশীলতা কিছুটা ‘দুর্বল’। একইভাবে আমাদের রফতানি আয় এবং রেমিটেন্স বাড়লেও আমাদের বৈদেশিক লেনদেনে একটা চাপ তৈরি হচ্ছে। ফলে টাকার যে মূল্যমান সেখানেও একধরনের ডেপ্রিসিয়েশন হচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচনের বছর বাজেট দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযত সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিকে নজর রাখতে সরকারকে পরামর্শ দেন দেবপ্রিয়। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Abdul Mannan ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৪৩ এএম says : 0
100% right
Total Reply(0)
জাফর ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৪৪ এএম says : 0
এভাবে চললে দেশে ব্যাংক বলে আর কিছু থাকবে বলে মনে হচ্ছে না।
Total Reply(0)
লাইজু ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৪৫ এএম says : 0
মানুষের করের টাকা দিয়ে এইভাবে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা এবং এখানে যে পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে, এ জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা ঠিক না।
Total Reply(0)
নাঈম ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৪৬ এএম says : 0
লুটে পুটে খাওয়া হচ্ছে ...........................
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন