বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গোলটেবিল আলোচনায় ব্যাংকিং খাতে ক্রাউড ফান্ডিংয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, বিশ্বস্ততা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মূল ভিত্তি। কিন্তু এক দিনে এ বিশ্বস্ততা তৈরি করা সম্ভব নয়। কোন কারণে বিশ্বস্ততা নষ্ট হলে অপব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে ক্রাউড ফান্ডিং ব্যবস্থায় সফলতা পেতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বুধবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ক্রাউড ফান্ডিং অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশনস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলা হয়েছে। সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম’র মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম’র প্রফেসর এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী। তিনি তার বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করেন।
ক্রাউড ফান্ডিং হলো বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক বড় জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে অর্থসংগ্রহ করে ফান্ড গঠন করা হয়। ছোট ও বড় প্রকল্পের জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া এ পদ্ধতিতে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম -ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডিন এবং বøগ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএম-এর সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। চার সদস্যের একটি গবেষণা দল এ গবেষণা সম্পন্ন করেন। গবেষণা দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিআইবিএম’র সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পন্ডিত; বিআইবিএম’র প্রভাষক রাহাত বানু এবং জাপানের দশিশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক বিঞ্চু কুমার অধিকারী ।
গবেষণায় প্রাইমারী এবং সেকেন্ডোরি দুই ধরণের তথ্যের ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিআইবিএম’র প্রকাশনা থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বিআইবিএম’র নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএম’র ড. মোজাফফর আহমদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা; বিআইবিএম’র সুপারনিউমারারি প্রফেসর এবং পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধূরী; বাংলাদেশ ব্যাংক-এর প্রাক্তন নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএম’র সাবেক সুপারনিউমারারি প্রফেসর ইয়াছিন আলি।
এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের শুরুতে অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে ক্রাউড ফান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ধরণের অর্থায়নে কিছু ঝুঁকি এবং সমস্যা রয়েছে। এমনকি ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টালে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি বলেন, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল বিষয় বিশ্বস্ততা। যা খুব সহজে অর্জন করা সহজ নয়। এখনও এ বিষয়ে কোন রেগুলেশন তৈরি করা হয়নি। তবে এখনই উপযুক্ত সময় ক্রাউড ফান্ডিং বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।
মহা. নাজিমুদ্দিন বলেন, ভবিষ্যতে ক্রাউডফান্ডিং ব্যাংক ফান্ডের একটি উৎস হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। উন্নত দেশগুলো অনেক দক্ষতার সাথে এই উৎসটি ব্যবহার করে বহু প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা সফলতার সাথে তৈরি করেছেন। এমনকি বাংলাদেশেও কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ক্রাউডফান্ডিং এর মাধ্যমে প্রত্যায়ন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর আছে অপার সম্ভাবনা। ক্রাউডফান্ডিং সম্পর্কিত কোন নীতিমালা নেই তথাপি ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাংকের আস্থা এবং গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করে এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মতো নতুন অর্থায়ন ব্যবস্থা যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের অনেক ভালো উদাহরণ রয়েছে। তবে সাবধান থাকতে হবে অপব্যবহার যাতে না হয়। এজন্য সঠিক নীতিমালা প্রয়োজন।
মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ক্রাউড ফান্ডিং একটি ভালো উদ্যোগ তবে কেউ অপব্যবহারের সুযোগ না পায় সে বিষয়টি নজর রাখতে হবে। আইন করে শুধুমাত্র অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ রাখতে হবে।
ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অনানুষ্ঠানিক এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ক্রাউড ফান্ডিং একটি পুরাতন অর্থায়ন ব্যবস্থা। আহছানিয়া মিশন এবং কিডনী ফাউন্ডেশন এর বড় উদাহরণ। কিন্তু এটি প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন