দেশের ব্যাংকিং খাত প্রশ্নের মুখে পড়েছে ৪ কারণে। এর মধ্যে অন্যতম ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার। অন্যগুলো হলো খেলাপি ঋণ, নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা এবং সুশাসনের অভাব। বলা হয়েছে, ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবি ৬-৯ শতাংশ সুদ হার নামিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও সেক্ষেত্রে তারা ব্যার্থ হয়েছে। বর্তমানের আমানতের সুদহার ৯-১১ শতাংশ এবং ঋণের সুদ হার ১৩-১৫ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে। সঞ্চয়পত্রে উচ্চ সুদ হার এবং খেলাপি ঋণ ইত্যাদি কারণে ঋণের সুদের হার কমছে না। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কি সংশোধন করা সম্ভব নয়? এমন প্রশ্নও উঠে এসেছে। এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংক খাত সংস্কারসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি, আয় বৈষম্য এবং স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ‘ক্রিটিক্যাল কনভারশেসন-২০১৯ শীর্ষক দুদিন ব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুরশিদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ঠা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এর পরই সংক্ষিপ্ত ব্রিফ্রিং অনুষ্ঠিত হয়।
উপস্থাপনা পত্রে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ৫৯টি নতুন ব্যাংক রয়েছে। কাজেই নতুন ব্যাংকের প্রয়োজন কতটুকু আলোচনা করতে হবে। বেশি ব্যাংক হওয়ায় তারল্য সংকট বেড়েছে। রাজনৈতিক চাপে নতুন ব্যাংক দেয়া হলেও সেগুলো জনগণের আস্থা বাড়াতে পারছে না। অল্প দু একটি ব্যাংক এ ক্রেডিট রেটিং পেয়েছে বাকি গুলো বি ও সি রেটিং এ আছে। ব্যাংক গুলোকে ডিপোজিটের উপর নির্ভর না করে বন্ডের উপর নির্ভর করা উচিত। ব্যাংকিং খাত উন্নয়নে যেসব সুপারিশ দেয়া হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ, পরিবারভিত্তিক ব্যাংক পরিচালনার ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা, গ্রাহকদের অধিকার রক্ষায় ডিপোজিটরস ইন্স্যুরেন্স, নতুন ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন এবং যদি নতুন ব্যাংক ঠেকানোই না যায় তাহলে ইউনিট ব্যাংকের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সঠিক নিয়ন্ত্রণ জরুরী বলে উঠে আসে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন,আলোচনায় উঠে এসেছে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা ভাল করছি। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে যা যা দেখছি এগুলো নিয়ে আমরা খুব খুশি নই। তবে বলা হচ্ছে, অর্থনীতিকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা প্রয়োজন। কিন্তু রাজনৈতিক অর্থনীতি হওয়ায় রাজনীতি থেকে অর্থনীতিকে বেরিয়ে আসাটা খুব সহজ হবে না। ব্যাংকিং খাতে প্রধান ভ‚মিকা পালন করার কথা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। নিশ্চই এ বিষয়ের আইন কানুন আছে।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশে এক দলের শাসন ব্যবস্থা চলছে। এক্ষেত্রে একটা জবাবদিহিতা থাকতে হবে। একজনের কাছে জবাবদিহিতা থাকলে চলবে না। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যতই যেটা বলুক না কেন নিচের দিকে তা বাস্তবায়ন হবে না। উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে অনেকগুলো ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানে যেতে হবে। ব্যাংকিং খাতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো আবার পিছিয়ে আনা হয়েছে। ঋণ খেলাপির সংজ্ঞা, ঋণের স্থিতি কতটুকু রাখতে হবে এসব বিষয়ে গবেষণা না করে হঠাৎ করেই বিশ্বমান থেকে নিচে নামিয়ে আনাটা ঠিক নয়। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞার যে পরির্তন সেটি ব্যবসায়ীদের চাপে নিশ্চই করা হয়েছে।
পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক জাহিদী ছাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘ক্রিটিক্যাল ইস্যুজ ইন মাইক্রোফিনান্স এন্ড ফাইনান্সিয়াল সেক্টর’ শীর্ষক দ্বিতীয় অধিবেশন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডিএস এর সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. কাজী ইকবাল এবং ড. মঞ্জুর হোসেন। আলোচক ছিলেন ইকোনমিক রিসার্স গ্রæপের নির্বাহী পরিচালক ড.সাজ্জাদ জহির, বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পৃষ্ঠা ৫ কঃ ১
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন