আবুল কাসেম হায়দার
আর্থিক খাতের অর্থ কেলেঙ্কারিতে আমরা বিশ^ রেকর্ড করতে সক্ষম হয়েছি। বিগত কয়েক বছরের অর্থ লোপাটের কাহিনী সকল ইতিহাসের সেরা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। গত বছরে আমাদের দেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত আর কোনো দেশে এত অল্প সময়ে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ চুরি বা ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি।
গত সাত বছরে ঘটেছে ছয়টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। এসব কেলেঙ্কারিতে ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি চুরি বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ অর্থ দিয়েই অনায়াসে একটি পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত। বড় এসব আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে সর্বস্বান্ত করেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের একটি অংশ ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন, নিজেরাও লাভবান হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছাড় দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একটি কেলেঙ্কারিরও বিচার হয়নি। সাজা পাননি অভিযুক্তদের কেউ। প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। বছরের পর বছর মামলা চলছে। অভিযুক্তদের কেউ জেলে আছেন, কেউ চিকিৎসার নামে হাসপাতালে আরাম-আয়েশে আছেন। অনেকে জামিন পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান দুজনেই মনে করেন, মূলত সুশাসনের অভাব থেকেই একের পর আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। আর ব্যবস্থা না নেওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, হল-মার্ক থেকে শুরু করে বেসিক ব্যাংক বা বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারির ঘটনায় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত লোকজন জড়িত ছিলেন বলেই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরের বছর দেশে দ্বিতীয়বারের মতো শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ঘটে। এ ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের হিসাবে ওই কেলেঙ্কারিতে অন্তত ১৫ হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এরপর ২০১২ সালের সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে অর্থ আত্মসাতের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের বিসমিল্লাহ গ্রুপ কেলেঙ্কারিতে অর্থ আত্মসাৎ করা হয় ১১০০ কোটি টাকা। ২০১৩ সালের বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে আত্মসাৎ করা হয় আরও প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন কোম্পানি ডেসটিনির অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আত্মসাতের পরিমাণ ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের কারও সাজা হয়নি। হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ জেলে থাকলেও প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম জামিনে আছেন। ডেসটিনির সভাপতি রফিকুল আমীন আটক হলেও অসুস্থতার অজুহাতে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে আছেন। আর বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন। মামলায় তার নাম পর্যন্ত নেই। দেশে সর্বশেষ আর্থিক কেলেঙ্কারি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে থাকা রিজার্ভ চুরি। ৫ ফেব্রুয়ারি চুরি করা হয় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থায় অনুপ্রবেশ বা হ্যাক করে এই রিজার্ভ চুরির ঘটনা এখনো বিশ্বজুড়ে অন্যতম আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অর্থের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম হলেও সবচেয়ে বেশি তোলপাড় হয়েছে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়েই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির কারণেই এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে অনেক বেশি। ফলে এর দায়দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই ডেপুটি গভর্নরকে। সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ আর্থিক এসব জালিয়াতি কমাতে তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন। যারা অপরাধী, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে বরখাস্ত, বদলি নয়; অপরাধের দায়ে শাস্তি দিতে হবে। এছাড়া সৎ, দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের সঠিক জায়গায় বসাতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন, সন্দেহ রয়েছে। আর সবশেষ হচ্ছে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত অবস্থান নিতে হবে, এ প্রতিষ্ঠানটিকে মূল ব্যাংকিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে। ব্যাংক খাত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ দেওয়া উচিত।
বড় বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারির পেছনে সরকারের প্রভাবশালীরা জড়িত থাকেন, এর অন্যতম উদাহরণ হলো হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক কেলেঙ্কারির এই ঘটনায় টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ওই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই। ব্যাংকটির পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যও তা জানতেন। হল-মার্কের এমডি তানভীর মাহমুদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পরিচালনা পর্ষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইমুম সরওয়ারের নাম বলেছিলেন। আবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিন বা চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি বড় কিছু নয়। সোনালী ব্যাংক পর্ষদ পুনর্গঠনের সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রী এটিকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার-বহির্ভূত কর্মকা- হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আবার বেসিক ব্যাংক জালিয়াতির জন্য ৫৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। তবে এই তালিকায় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম রাখেনি দুদক। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান, অপ্রতুল জামানতের বিপরীতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ঋণ দেওয়ার জন্য চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকেই দায়ী করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই অর্থমন্ত্রী নিজেই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ব্যাংকটিতে (বেসিক ব্যাংক) হরিলুট হয়েছে। আর এর পেছনে ছিলেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু।’ এর আগে ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বেসিক ব্যাংক ও হল-মার্ক সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘জালিয়াতদের ধরতে বাধা নিজের দলের লোক।’ কেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি, এ প্রশ্ন করা হয়েছিল অর্থমন্ত্রীকে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ব্যাপার-স্যাপার সব আলাপ করা যায় না। তবে ব্যবস্থা ঠিকই নেওয়া হবে।’ এসব বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন, তাদের সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের যোগসাজশ রয়েছে। আবার ওই পর্ষদের সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিংবা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তাই অনিয়মের বিষয়টি জানা সত্ত্বেও সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। তিনি মনে করেন, এভাবেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি জেঁকে বসেছে। এ সংস্কৃতি দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেয়, আবার অন্যকে দুর্নীতি করতে উৎসাহ জোগায়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে এ দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আরও কিছু কেলেঙ্কারি ঘটলেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কম। যেমন, রূপালী ব্যাংক থেকে বেনিটেক্স লিমিটেড, মাদার টেক্সটাইল মিলস ও মাদারীপুর স্পিনিং মিলস নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে প্রায় হাজার কোটি টাকা। এর ৮০১ কোটি টাকা আদায়ের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবার অগ্রণী ব্যাংক থেকে বহুতল ভবন নির্মাণে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ৩শ কোটি টাকা ঋণ নেয় মুন গ্রুপ। আর সবশেষ লাইসেন্স পাওয়া ফারমার্স ব্যাংকও অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ৪শ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। জনতা ব্যাংক থেকে ২৫১ কোটি টাকা এক জুট ব্যবসায়ী টিপু সুলতান অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তাকে গ্রেফতার হয়েছে। দেশে অন্য সরকারের আমলেও আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ছিল। এর আগে গত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক কেলেঙ্কারি ছিল সবচেয়ে আলোচিত। এ ঘটনায় ব্যাংকটির মালিকপক্ষ ওরিয়ন গ্রুপ বেনামে ৫৯৬ কোটি টাকা তুলে নিলে ব্যাংকটি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে ওরিয়েন্টাল ব্যাংক বিক্রি করে দেওয়া হয়। এছাড়া বিএনপি সরকারের সময়েই চট্টগ্রামের অখ্যাত ব্যবসায়ী কে এম নুরন্নবী পাঁচটি ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করেন ৬৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া গত আওয়ামী লীগ সরকারের (১৯৯৬-২০০১) সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হয়েছে শেয়ারবাজারে। সেই কেলেঙ্কারির মামলা এখনো বিচারাধীন। এ ধরনের অপরাধে শাস্তির নজির নেই বাংলাদেশে। কিন্তু অন্য দেশে নজিরবিহীন শাস্তি দেওয়ার নজির রয়েছে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাসদাকের সাবেক চেয়ারম্যান বার্নার্ড মেডফের শেয়ার বাজারে আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা ফাঁস হয়। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৯ সালের জুন মাসে বিচারে ৭১ বয়সী এ ব্যবসায়ীকে ১৫০ বছর জেল দেওয়ার পাশাপাশি ১৭০ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয়।
অর্থ জালিয়াতি রোধের উপায় : ১. আমরা যত আইন করি না কেন, আইনের প্রয়োগ না থাকলে কখনও ফলাফল পাওয়া যাবে না। দেশে বেশ আইন রয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দ্রুত না হওয়া অর্থ জালিয়াতির মূল কারণ। বিগত ৭ বৎসরে যে কয়টি ব্যাংক ডাকাতি বা ব্যাংকের টাকা নানাভাবে লোপাট করা হয়েছে, তার তদন্ত, বিচার ও বাস্তবায়ন খুবই ধীর গতিতে চলছে। তাই জালিয়াত চক্র অত্যন্ত শক্তিশালী ও বিকাশমান। সমাজের, রাষ্ট্রের উঁচু স্তর থেকে নানা সুবিধা পেয়ে এই সকল ব্যাংকের অর্থ লোপাটকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বেশ সক্রিয়। সরকারকে শক্ত হাতে অর্থ দস্যুদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তা না হলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নিরাপত্তা ফিরে আসবে না। সরকারকে দলমত, প্রতিষ্ঠান ও সকল রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা থেকে সরে এসে প্রকৃত দেশ প্রেমিকের ভূমিকায় ফিরে আসতে হবে।
২. রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য সকল ব্যাংক সমূহে চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে পেশাদার ব্যক্তি, সৎ ব্যক্তি, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। যে কয়েকটি অর্থ জালিয়াতি ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেখা গিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিগণ সরাসরি জড়িত। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক পরিচালনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এই ক্ষেত্রে যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাগত দক্ষতাকে মূল্যায়ন করতে হবে। তা না হলে ব্যাংক ব্যবস্থা আইন ভেঙ্গে পড়বে। ব্যাংকের অধপতনের ফলে শেয়ারবাজার ধসের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
৩. রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন অনুমোদন দেয়া বন্ধ করা প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় নতুন নতুন ব্যাংক, বীমা অনুমোদনের কার্যক্রম হওয়া উচিত। সর্বশেষ ব্যাংক, বীমা অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে মনে হয় কোনো কার্যকর নীতিমালা মানা হয়নি। ভবিষ্যতে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে আর্থিক খাতের সমস্যা আরও বেশি ঘনিভূত হবে।
৪. বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও বেশি পেশাদারী ও নিষ্ঠাবান হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিদায় করতে হবে। সততা, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে ব্যাংক সমূহে নিয়োগ কাজ চালাতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় সকল নিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দলীয় ধ্যান-ধারণার ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষভাবে সততার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৫. সকল ব্যাংক কে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এখন সকল ব্যাংক সমূহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আংশিক কাজ দেখভাল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে ব্যাংক সমূহের দুর্নীতি, অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ বাংলাদেশ ব্যাংক নিতে পারে না। তাই সকল ব্যাংক সমূহে অর্থ জালিয়াতি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আইনি ব্যবস্থা সকল ব্যাংক সমূহের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক নিতে পারছে না। আইন কঠোর ও হচ্ছে না। তাই সকল ব্যাংক সমূহে অর্থ-আত্মসাতের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিম দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষখোর ব্যক্তিতে ভরপুর। এই অডিট টিমকে সৎ, যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে। বর্তমানে অডিট টিমগুলো অনেক অনেক সময় অর্থ ঘুষ খেয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম, দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিচ্ছে। তাই দুর্নীতি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অডিট টিমের দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে আইনি কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ক্ষেত্রে বিশেষ আইন প্রণয়ন করে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে হবে। জাল ট্রেড ইউনিয়ন বন্ধ করতে হবে। তাতে দুর্নীতি, অনিয়ম অনেক হ্রাস পাবে।
৬. বাংলাদেশ ব্যাংককে বাণিজ্য করার নিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সকল ব্যাংকে পরিচালনা করবে। সকল ব্যাংক নিয়মনীতির মধ্যে স্ব স্ব বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিতে হবে। নীতি ও কৌশল প্রয়োগ করে ব্যাংকের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে।
৭. বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল ব্যাংকের আইটি বিভাগকে আধুনিক করতে হবে। সকল আইটি কর্মকর্তাকে সৎ হতে হবে। অসৎ আইটি কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বিদায় করতে হবে। আইটি সম্পর্কিত সর্বশেষ জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। তাই বিশে^র সেরা আইটি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিভাগকে সাজাতে হবে। একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সকল কাজে বা ব্যবসার সুযোগ দেয়া উচিত নয়।
লেখক : সাবেক সহ-সভাপতি, এফবিসিসিআই, বিটিএমএ, বিজেএমইএ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
aqhaider@youthgroupbd.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন