এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে পরিবারে মাথাব্যথা নেই। ইন্টারন্যাশনাল হেডেক সোসাইটি ও সার্ভিকোজেনিক হেডেক সোসাইটির বিজ্ঞানীদের মতে, প্রায় ১৮ শতাংশ লোক মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। রোগীরা এই মাথাব্যথা বিভিন্নভাবে চিকিৎসকের কাছে বর্ণনা বা উপস্থাপন করেন। তরুণ-তরুণী থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পর্যন্ত মাথাব্যথায় ভুগে থাকেন। আপনারা অবশ্যই জানেন, যুগ যুগ ধরে মানুষ মাথাব্যথায় ভুগে আসছেন। মাথাব্যথা মেডিকেল কন্ডিশনের একটি অন্যতম অসুস্থতা। এই মাথাব্যথা থেকে আমরা সবাই মুক্তি পেতে চাই। আর সে জন্যই সুখের মাঝে মাথায় ব্যথার ওপর আজকের এই ছোট লেখা।
আমাদের মধ্যে হঠাৎ একটি লোক মারা যায়। আমরা অবাক হই। কিন্তু লোকটি অনেক আগে থেকে সঙ্কেত পান। তিনি গ্রাহ্য করেননি। যেমন, একদিন ঘুম থেকে উঠে সঠিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে । মাথা ঘুরছে । চোখে আঁধার দেখছেন । কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে যান। এসবই স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণ। তারপর তিনি মনে করেন ওটা হঠাৎ হয়েছে। তেমন কিছুই না। চিকিৎসকের কাছে গেলেন না। ভুল করলেন। বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হলে শরীরের কোনো উগসর্গই সাময়িক মনে করা ঠিক নয়। এতে অঘটনা ঘটতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অনেক সময় সামান্য লক্ষণ আবার অনেক সময় স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায়। এজন্য বয়স ষাটোর্ধ্ব হলেই দুই-একদিন অন্তর রক্তের চাপ পরীক্ষা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা ইত্যাদি করানো ভালো এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। স্ট্রোকের আরো পূর্বলক্ষণ আছে। যেমন- মুখের এক পাশে অবশ হয়ে যাওয়া । কথা জড়িয়ে যাওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা। মাথা ঝিম ঝিম করা বা হালকা বোধ হওয়া ও হাঁটাচলায় অসুবিধা। কোনো কারণ ছাড়াই প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা ইত্যাদি। এগুলো অবহেলা না করে অবিলম্বে নিকটস্থ চিকিৎসক বা ক্লিনিক বা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া উচিত। স্ট্রোক মস্তিষ্কের সব জায়গা এক সাথে আক্রমণ করতে নাও পারে। আবার করতেও পারে। রক্তচাপ মাপলে যদি ওপর দিকে বেশি থাকে তাহলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। ওষুধে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ষাটোর্ধ্ব লোকের হার্ট অ্যাটাক অপেক্ষা স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা বলেছেন, ষাটোর্ধ্ব লোকের প্রায় প্রতিদিনই স্ট্রোক করে, তারা হয় টের পায় না অথবা অবহেলা করেন। মস্তিষ্কের বড় অংশ আক্রান্ত হলে টের পান। তাদের ডিমেনশিয়া হয়। মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অঞ্চল তখন পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এর প্রধান কারণ উচ্চ রক্তচাপ। সিস্টোলিক প্রেসারের লাগামছাড়া বৃদ্ধি। আর সেই সাথে ধূমপান, ডায়াবেটিসযুক্ত হয়, তাহলে সমূহ বিপদ। বিশেষ করে বিড়ি-সিগারেটপায়ীরা সর্বদা ঝুঁকিতে থাকে। কোলেস্টেরল আরেক শত্রæ। রক্তে কোলেস্টেরল বাড়লে ঘনত্ব বাড়ে। রক্তের প্রবাহ ধীর গতি হয়ে যায়। তাই এই দূষমণকেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। এ জন্য লাল গোশত, ডিম, কলিজা, ঘৃত, মাখন ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাদ্য বর্জন করতে হবে। সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। সন্দেশ, রসগোল্লা ও অন্যান্য মাখনযুক্ত মিষ্টান্ন দ্রব্য বর্জন করতে হবে। সামান্য পানাহার এবং সকাল-বিকেল অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটাচলা করা দরকার। সব সময় চিকিৎসকের সাথে পরমার্শ করা অত্যাবশ্যক। যেকোনো উত্তেজনা থেকে দূরে থাকতে হবে। কোনো প্রকার টেনশনে জড়ানো যাবে না। ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করা শ্রেয়। উত্তেজিত হওয়ার মতো কার্যাবলি থেকে দূরে থাকতে হবে। সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে। কোনো জাগতিক সমস্যায় না জড়ানো শ্রেয়। যথাসম্ভব নিয়মানুবর্র্তিতা মেনে চলা ভালো।
ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট
মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন