শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস
উখিয়া উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিয়ন রতœাপালং। ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র হচ্ছে এ ইউনিয়নটি। শিক্ষা সাহিত্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি চর্চায় রতœাপালং ইউনিয়ন অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে শিক্ষার হার এবং উচ্চ শিক্ষায় এ ইউনিয়নটির সুনাম রয়েছে। তাই রতœাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি অন্যান্য ইউনিয়নের চেয়ে খুবই মর্যাদা পূর্ণ মনে করা হয়। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছে। ভোটারদের মতে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে ব্যক্তি ইমেজ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এখানে ফ্যাক্টর হতে পারেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হাইকমান্ডের ইশারায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও তৃণমূল ভোটারদের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিএনপি ঘরানার স্বতন্ত্র প্রার্থী খায়রুল আলম চৌধুরী ব্যক্তি ইমেজ কে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী মাঠে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা।
সরজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীর দখলে রয়েছে রতœাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ ১৬ বছর পর্যন্ত বিএনপির নেতা মো. আব্বাস উদ্দিন চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বপালন করেন। এবং ২০১১ সালের সর্বশেষ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত নুরুল কবির চৌধুরী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপির এই দূর্গে হানা দিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছে। তবে বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে ২২ বছর ধরে দখলে থাকা চেয়ারম্যান পদটি রক্ষা করার জন্য। উল্লেখ্য ইতোপূর্বে প্রত্যেক ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পেছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে আসছেন জেলা বিএনপি নেতা খাইরুল আলম চৌধুরী। বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন না পেলে এবার তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে ঘোষাণা দিয়ে মাঠে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এবারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন উখিয়া আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল মনসুর চৌধুরী ও উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছৈয়দ মোহাম্মদ নোমান। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন ও ২০ দলীয় জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী এবং সাধারণ ভোটারের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে খাইরুল আলম চৌধুরী বেশ জোরেশোরে নির্বাচনী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক সফল চেয়ারম্যান মরহুম শমশের আলম চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আদিল উদ্দিন চৌধুরী একজন রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সেবা করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী মনোনয়ন দিলে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার দৃঢ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল মনসুর চৌধুরী ১৯৭৮ সালে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সফল সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৮৫ সালে উখিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে রতœাপালং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। স্বতন্ত্র প্রার্থী খায়রুল আলম চৌধুরী ১৯৮৫ সাল থেকে ভালুকিয়া পালং তথা বৃহত্তর পূর্বাঞ্চল মানুষের পাশে থেকে সমাজ সেবা ও জনকল্যাণমূলক কাজে জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন ছাড়াও রয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য পদে। নানাভাবে তিনি মানবসেবা করে যাচ্ছেন। তিনি বিএনপি ঘরানার হলেও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের জন্য নিরপেক্ষ চেয়ারম্যান হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। তাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে দল মত নির্বিশেষে জনগণের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচন করতে চান।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী আব্বাস উদ্দিন ১৯৯৪ সাল, ১৯৯৯ সাল ও ২০০৪ সালে পর পর ৩ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করায় তার গ্রহণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। এবারেও বিএনপির মনোনয়ন পেলে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হবেন বলেই তার বিশ^াস। বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল কবির চৌধুরী ইউনিয়নের পূর্বাংশের দীর্ঘদিন অবহেলিত এক বিরাট জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে গতবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জামায়াত ঘরানার চেয়ারম্যান বলে পরিচিত হলেও সরকারের অনেক ক্ষমতাবানদের সাথে তার পারিবারিক সম্পর্ক থাকার সুবাদে গোটা ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম চালাতে সক্ষম হয়েছেন নুরুল কবির চৌধুরী। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি আবারো চেয়ারম্যান হওয়ার আশায় কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তিনি ধানের শীষ আর নৌকা প্রতীক কোনটিই না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়তে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন