টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে
আধুনিক যুগেও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা যমুনা নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের দৈনন্দিন মালামাল বহনে ঘোড়ার গাড়িই প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই ঘোড়ার গাড়ির আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ঐসব এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার। সরেজমিনে জানা যায়, যমুনা নদীবেষ্টিত কাজিপুরের মাইজবাড়ী, শুভগাছা, খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ এবং মনসুরনগর ইউনিয়নের দোকানদাররা নিকটবর্তী পাইকারি বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘোড়ার গাড়িতে বহন করে নিয়ে আসছেন। ১৫ থেকে ২০ মণ ওজন বহনে সক্ষম ঘোড়াগুলো প্রতিদিন ৫০ কিলোমিটারেরও বেশি চরের বালুময় কাঁচারাস্তা পাড়ি দিচ্ছে। এতে ঘোড়ার মালিকরা প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা আয় করলেও মরিচ, ধান, পাট, কাউন, ভুট্টার মৌসুমে ফলন ঘরে তোলার সময় কয়েক মাস ঘোড়ার গাড়ি চালকদের আয় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। নাটুয়ারপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মিলন জানান, তার দোকানে যাওয়ার রাস্তাটি বালুময় তাই কোন রিকশা বা যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করা খুবই কষ্টকর। এজন্য চরের মানুষরা মালামাল বহনে ঘোড়ার গাড়ির ওপর নির্ভরশীল। দূরত্ব এবং ওজন অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করতে হলেও ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে তিনি দাবি করেন। সূত্রে জানা গেছে, কাজিপুরের ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে প্রায় ৫শ’ ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে। তবে নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ ও মনসুরনগর ইউনিয়নের চরগুলোতে মালামাল বহন করে প্রায় তিন শতাধিক গাড়ি। নাটুয়ারপাড়া চর এলাকার ঘোড়ার গাড়ি চালক আকবর আলী বলেন, প্রতিদিন তিনি ১০ থেকে ২০ মণ মাল নাটুয়ারপাড়া হাট-বাজার থেকে কিনে বিভিন্ন চরের দোকানগুলোতে নিয়ে যান। এজন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ৮ থেকে ১০ টাকা পেয়ে থাকেন। প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা আয় হলেও আর কিছুদিন পর ভুট্টার মৌসুমে বিভিন্ন সফল বহনে ব্যস্ত হয়ে পড়বে ঘোড়ার গাড়িগুলো। প্রতিদিনের আয় বেড়ে দাঁড়াবে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। চরগিরিশ গ্রামের বাসিন্দা ঘোড়ার গাড়ি চালক আলী সরকার ১৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। তিনি জানান, একটি ঘোড়া দিয়ে ৫ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত মাল বহন করতে অসুবিধা হয় না। ঘোড়াকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন ১শ’ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন