শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর পূর্তি

স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠে আকাশ-বাতাস

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ৮:৫১ পিএম

স্বজনদের কান্না আর আহাজারির মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার পাঁচ বছর পূর্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রমিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের নের্তৃবৃন্দ খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে রানা প্লাজার সামনে হাজির হন। এসময় রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ, আহত-নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। সকাল ৭টায় রানা প্লাজার সামনে নির্মিতি অস্থায়ী শহীদ বেদীতে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাভারের সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ রাসেল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণব কুমার ঘোষসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহব্বায়ক ড. কামাল হোসেন, সাবেক সাংসদ শাহ আবু জাফর। গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ এবং নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরাও শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় রানা প্লাজা ধসে নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা পাঁচ বছর পূর্তিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে আকাশ বাতাস। এর আগে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ভবন ধসের ঘটনায় দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় তারা। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বেতন-ভাতাসহ শ্রমিকদের নায্য দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে মালিক-শ্রমিক ও সরকারকে একসাথে কাজ করার আহŸান জানান। এছাড়া রানা প্লাজা ধসের স্থানটির পবিত্রতা রক্ষা করে সেখানে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্মরনে একটি স্মৃতিস্তম্ভসহ শ্রমিকদের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণ করারও দাবি জানান জানান ড. কামাল হোসেন। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, রানা প্লাজা ধসকে অনেকেই দুর্ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করলেও আমি মনে করি এটি কোন দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। গামের্ন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু জানান, এক জনকে হত্যা করলে প্রচলিত আইনে হত্যাকারীর ফাঁসি হয়। এখানে ১১৩৭ জন নিহত হয়েছে তাই সোহেল রানার ফাঁসি দাবি করছি। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ৫ বছর ধরে আমরা চেয়ে আসছি কিন্তু পাইনি।

আহত শ্রমিক ও তাদের স্বজনদের আকুতি : সেদিনের কথা মনে পড়লে শিওরে উঠেন রানা প্লাজার আহত শ্রমিক শিলা, বিউটি, মামুন, সাজু ও রাশিদা বেগমরা। ভবন ধসের পাঁচ বছর পার হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। মাথা ব্যাথা, হাত-পা ও পিঠের ব্যাথা নিয়ে এখনও লড়ে যাচ্ছেন অনিশ্চিত জীবনে সঙ্গে। পূর্ণ চিকিৎসা সেবার অভাবে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্থরা। নিখোঁজ আখি আক্তারের মা হেনা বেগম বলেন, ডিএনএ টেস্ট করিয়েও মেয়ের লাশের সন্ধান পাননি। স্বামী শ্বাসকষ্টের রোগী হওয়ায় তেমন কোন কাজ করতে পারেনা। সংসারের উপার্জনকারী মেয়েকে হারিয়ে অভাব অনটনে চলছে তার সংসার। মেয়ের লাশটি পেলেও মনকে শান্তনা দিতে পারতেন বলে জানান, হেনা বেগম। আহত শ্রমিক আল্পনা খাতুন ধসে পড়া রানা প্লাজার ৭ তলায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতো। সাত মাসের অন্তঃসত্তা এ মা বেতনের জন্য সেদিন সকাল ৮টায় কাজে যোগ দেন কারখানায়। ঘন্টাখানেকের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে কিছুক্ষণ পর একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ধসে পড়ে রানা প্লাজা। আগামী জুলাইয়ে ছেলে নিরবের পাঁচ বছর পূর্ণ হবে। মাথা, পা ও কোমড়সহ শরীরের একপাশ অবশ থাকায় এবং ছোট ছেলেকে রেখে কোন কাজই করতে পারেন না তিনি। এরপর ছেলে বড় হচ্ছে তাকে স্কুলে ভর্তি করানো এবং সংসার চালানোর চিন্তা সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। অন্যদিকে রানা প্লাজার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিহত ও আহত শ্রমিকদের স্মরণে সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনেও নিহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত নয়তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ভবনটিতে থাকা ৫টি তৈরী পোশাক কারখানায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করতো। পোশাক শিল্পের ইতিহাসে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় মারা যায় ১১৩৭ জন শ্রমিক, জীবিত উদ্ধার করা হয় ২৪৩৮ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয় ১১৬৯ জন। যারা প্রাণে বেঁচে আছে তারা জীবিত থেকেও মৃত এবং অসহনীয় কষ্টে জীবন যাপন করছেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন