চট্টগ্রাম নগরীতে পাড়া ভিত্তিক ব্যবসা আর আধিপত্যের বিরোধে অস্ত্রবাজির সাথে খুনের ঘটনাও ঘটছে। কথায় কথায় গোলাগুলি আর সংঘাত সহিংসতায় বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা। জনমনে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। ডিসের ব্যবসা দখল নিয়ে বিরোধের জেরে গতকাল (শুক্রবার) এমন এক গোলাগুলির ঘটনায় খুন হয়েছেন এক যুবলীগ নেতা। বিকেলে নগরীর নগরীর চকবাজার থানার ডিসি রোডে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত ফরিদুল ইসলাম (৩৮) চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় আরও অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন বলেন, ডিশ ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রæপের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ফরিদ এক গ্রæপের পক্ষে ছিলেন। মুছা এবং ফয়সাল নামে দুজনের তথ্য পেয়েছি, তাদের সাথে এদের বিরোধ ছিল। আমরা তদন্ত করে দেখছি। ফরিদ চকবাজার থানার চান মিয়া মুন্সী লেইনের মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে। তিনি যুবলীগের নেতা বলেও জানান উপ-পুলিশ কমিশনার।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ডিসি রোডে ক্যাবল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আছে কেসিটিএন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। এর মালিক স্থানীয়ভাবে যুবদলের রাজনীতিতে জড়িত বাদশা। ওই এলাকার বাসিন্দা কথিত আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ মুছা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছেন দীর্ঘদিন থেকে। আর এই কাজে তিনি স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারদের ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও ব্যবসা রক্ষায় স্থানীয় যুবলীগের একটি গ্রুপের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেন বাদশা। মূলত এই ব্যবসা নিয়ে বাদশা ও মুছার মধ্যে দ্ব›েদ্বর শুরু। আগেও কয়েকবার বাদশার বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সকাল থেকে নগরীর দিদার মার্কেট এলাকা থেকে ডিসি রোডের দিকে ক্যাবলের টানা শুরু করেন মুছার লোকজন। তারা বাদশার দেওয়া লাইন খুলে ফেলে সেখানে তাদের লাইন লাগাতে থাকে। মিঠু নামে দিদার মার্কেট এলাকার এক ডিশ ব্যবসায়ী মূলত মুছাকে সহযোগিতা করছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অনুমোদনবিহীন এই ক্যাবল টানার কাজ বন্ধ করে দেয়। তখন তারা কাজ বন্ধ রাখলেও জুমার নামাজের পর আবারও কাজ শুরু হয়। দেওয়ান বাজারের ছাত্রলীগ নামধারী রাসেল-ফয়সাল গ্রæপের উঠতি কিশোর-তরুণরা এ কাজে সহযোগিতা করছিলো। খবর পেয়ে বাদশার লোকজন তাদের বাধা দেয়। এর জের ধরে ডিসি রোডে মিয়ার বাপের বাড়ির সামনে গোলাগুলি শুরু হয় দুইপক্ষে।
স্থানীয়রা জানান, মহল্লা সর্দার কমিটির সভাপতি হিসেবে ফরিদ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বাদশার পক্ষ হয়ে। এসময় তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ফরিদুল ইসলামের মেয়ে জারাহ বলেন, জুমার নামাজ পড়ে এসে আব্বু বাসায় ভাত খেতে বসেছিলেন। এসময় ফোন পেয়ে দ্রুত বেরিয়ে যান। পরে গোলাগুলি শুরু হয়। চকবাজার থানার ওসি নুরুল হুদা বলেন, ক্যাবল ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এক পক্ষ প্রায় আটশ গ্রাহকের ক্যাবল লাইন খুলে জোর করে তাদের লাইন বসাতে যায়। এতে পুলিশ বাধা দিলে তার ফিরে যায়। জুমার পর তারা ফের লাইন পাল্টাতে শুরু করলে সংর্ঘষ শুরু হয়। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার আর অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে।
এদিকে নগরীর অনেক এলাকায় জুট, ডিস বিশেষ করে মাদক ব্যবসাকে ঘিরে বিরোধের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে খুনোখুনিতে মেতে উঠছে। গত ডিসেম্বর মাসে নগরীর সদরঘাট থানার শুভপুর বাসস্ট্যান্ডের বিপরীতে কদমতলীতে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুন হন পরিবহন ব্যবসায়ী হারুন চৌধুরী। অফিসে বসা অবস্থায় সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনায় গ্রেফতার মোঃ আলমগীর নামে এক আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। ওই আসামি স্বীকার করে ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন তিনি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ইসলামিয়া কলেজ মোড়ে ছুরিকাঘাতে খুন হয় মোহাম্মদ ইব্রাহিম। গত কয়েক বছরে নগরীতে মাদক ব্যবসা, আধিপত্য বিস্তার, জুট ও ডিস ব্যবসা নিয়ে আরও বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছরে নগরীতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী খুন হন দলীয় কোন্দলে। এসব খুনের বেশির ভাগের নেপথ্যে রয়েছে পাড়া ভিত্তিক নানান ব্যবসার বিরোধ। এসব খুনের ঘটনায় আসামি ধরা পড়লেও উদ্ধার হয় না খুনের ব্যবহৃত অস্ত্র। কথায় কথায় অস্ত্রবাজিতে জননিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন