শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

২টি স্লুইজ গেট বন্ধ : সঙ্কটে বোরো আউশ আবাদ : নষ্ট হচ্ছে বীজতলা

মঠবাড়িয়ায় পানির জন্য হাহাকার

| প্রকাশের সময় : ৩০ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) থেকে আবদুল হালিম দুলাল : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ১০ গ্রামের কৃষকসহ প্রায় ৫ সহাস্রাধীক মানুষ পানির জন্য হাহাকার করছে। ২টি সøুইজ গেট বন্ধ রাখায় পানি সংকটে বোরো ধান মাঠে নষ্ট হচ্ছে, শুষ্ক মাঠ চাষ করতে না পারায় আউশের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং রান্না-বান্নাসহ নিত্যব্যবহার্য্য কাজে পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। ভূক্তভোগি কৃষকরা অবিলম্বে সøুইজ গেট খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জানাযায়, উপজেলার মিরুখালী বাজার সংলগ্ন চালিতাবুনিয়া খালে এবং দধিভাঙ্গা বাজার সংলগ্ন খালে সøুইজ গেট দু’টি শুষ্ক মৌসুমে খুলে দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত খোলা হয়নি। নলবুনিয়া গ্রামে হাউদের কাছাড়ি ও হারজী নলবুনিয়া গ্রামে খাঁ বাড়ি খালে ২টি ব্রীজ নির্মাণ কাজের জন্য খালে বাঁধ দেয়ায় পানি সংকট চরম রুপ নিয়েছে। পানির সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাম সমূহ হলো নাগ্রাভাঙ্গা, মিরুখালী, চালিতাবুনিয়া, ঘটিচড়া, নলবুনিয়া, হারজী নলবুনিয়া, বড়হারজী, পাঠাকাটা, আঙ্গুলকাটা ও গিলাবাদ। সরেজমিনে এসকল গ্রামে গিয়ে কৃষকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার দেখা গেছে। কৃষি কাজ ব্যাহত হওয়া ছাড়াও খাল,বিল, পুকুর ও ডোবা শুকিয়ে পানি শূণ্য হওয়ায় পানীয় পানি, রান্না-বান্না, গোসল এমনকি অজুর পানিরও সংকট দেখা গেছে।
কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ি ১০ গ্রামের ২ শতাধিক একর জমিতে চাষ করা উফষী বোরো ধান নিয়ে কৃষকরা এখন শংকিত। ধানের এখন থোর বের হওয়ার সময়। দীর্ঘ দিন থেকে জমিতে পানি না থাকায় থোর ছোট ও ধান চিটা হয়ে যায়। পাঠাকাটা গ্রামের কৃষক জামাল আকনের (৪০) ৬৬ শতাংশ, আলম আকনের(৫০) ১ একর এবং আলম চৌকিদারের (৬০) দেড় একর জমির উফষী বোরো ধান অধিকাংশ চিটা হয়ে গেছে। নাগ্রাভাঙ্গা গ্রামের আঃ হামিদ মোল্লা(৫৫) জানান, তার প্রায় ১ একর জমির উফষী বোরো ধান অধিকাংশ চিটা হয়ে গেছে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র শীল জানান, দীর্ঘ দিন ক্ষেতে পানি না থাকা এবং আবহাওয়ার বিরুপ আচরণে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তিনি ফিলিয়া নামক ২এমএল ওষুধ ১লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫শতাংশে প্রয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে ক্ষেতে পানি অবশ্যই থাকতে হবে। বর্তমানে উফষী আউশ ধান আবাদের সময় হলেও ১০ গ্রামের প্রায় ২ হাজার কৃষক পানির অভাবে আমন আবাদ করতে পারছেনা। কৃষি অফিসের সূত্র মতে প্রায় ১ শত একর উফষী আউশের বীজতলা নষ্ট হওয়ার পথে। মিরুখালী গ্রামের কৃষক আ: মান্নান খাঁ (৭০), জাকির হোসেন (৫২), হেলাল (৪৪), কবির (৪০), কালু (৪৫), মিজান (৪০), জহির (৪২), খলিল (৩৫), মামুন (৪০), খোকন মুন্সি (৫০), রুস্তম খাঁ (৮০) ও লতিফ চৌকিদার (৮০) এই সংবাদ কর্মীর নিকট জড়ো হয়ে জানান, পানির কারনে জমি চাষ করতে না পারায় তাদের প্রায় ১০ কাঠি ধানের বীজ তলা নষ্ট হয়ে যাবে। হারজী নলবুনিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মহানন্দ হাওলাদার(৭২) জানান, তার গ্রামে কৃষকদের প্রায় ৬০/৭০ মন উফষী আউশ ধানের বীজতলা পানির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানির জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে বারবার অভিযোগ কোন ফল হয়নি বলে তিনি জানান।
একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া এ কৃষকরা জানান, আউশ ধান বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে। বর্তমান পূর্ণিমার জোবায় (জোয়ারে) সøুইজ গেট খুলে যদি পানি না ঢুকানো হয় তবে তাদের কিস্তি খেলাফি হয়ে আতœহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।
এদিকে পানির অভাবে ডোবা-পুকুর শুকিয়ে মিরুখালী গ্রামে পানীয় ও ব্যবহারের পানি সংকট প্রকট রুপ নিয়েছে। আ: মান্নান খাঁ (৭০) জানান, এক দেড় মাইল হেটে পিএসএফ/ টিউবয়েল তেকে তাদের পানীয় পানি সংগ্রহ করতে হয়। জাকির হোসেন (৫২) জানান, পানির অভাবে তাদের নিয়মিত গোসল হয় না।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দাউদখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুল হক রাহাত খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এলাকায় উন্নয়ন মূলক (ব্রীজ নির্মাণ) কাজের জন্য গেট বন্ধ থাকায় এলাকার লোকজনের সাময়িক কষ্ট হচ্ছে। তবে দ্রæত এ সমস্যা কেটে যাবে বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুনিরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পানির অভাবে উফষী বোরো ধান এবং উফষী আউশ বীজতলা সংকটের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি বর্তমান পূর্ণিমার জোয়রের পানি ঢুকাবার জন্য চেষ্টা চালান হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিএম সরফরাজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা হয়েছে। ২/৩ দিনের জন্য সøুইজ গেট খুলে পানি ঢোকার ব্যবস্থা করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন