শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে রাজাপুরের ধানসিঁড়ি পোনা ও জাঙ্গালিয়াসহ খরস্রোতা নদীগুলো

শুষ্ক মৌসুমে দেখা দেয় পানি সঙ্কট

প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:০৭ পিএম, ৭ এপ্রিল, ২০১৬

রাজাপুর (ঝালকাঠি) উপজেলা সংবাদদাতা : ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি, পোনা ও জাঙ্গালিয়াসহ এক সময়ের খড়¯্রােতা নদীগুলো বেপরোয়া দখল-দূষণে নাব্য সঙ্কটে জৌলস হারিয়ে দিন দিন মরে যাচ্ছে। এখন নদীগুলো শুকিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পরে মরা খালে পরিণত হয়েছে, অনেকগুলো আবার নালায় পরিণত হয়েছে। ফলে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পরেছে। এ উপজেলার প্রধান প্রধান নদী ধানসিঁড়ি, বিষখালি, পোনা, জাঙ্গালিয়াসহ অসংখ্য শাখা নদী শুকিয়ে গেছে। সামান্য অংশজুড়ে অস্তিত্ব নিয়ে কোনোমতে টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়িসহ এক সময়ের খড়¯্রােতা এসব নদীগুলো। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার প্রধান নদীগুলোয় নাব্য না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ জনপদের মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা দেয় তীব্র পানি সঙ্কট। ধানসিঁড়ি নদী, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ ধানসিঁড়ি নদী নিয়ে তার কবিতায় লিখেছিলেন, আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায় হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে....। নেই ধানসিঁড়ি আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে কবি বেঁচে থাকলে হয়তো ধানসিঁড়ির এ দুর্দশা নিয়েও কবিতা লিখতেন। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ধানসিঁড়ি নদীর উৎসমুখ থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে খননের একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ওই সময় সাড়ে চার কিলোমিটার খনন করা হয়েছিল। নিয়মিত বরাদ্দ না দেয়ায় পরের সাড়ে তিন কিলোমিটার আর খনন করা হয়নি। প্রায় আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ধানসিঁড়ি নদীর রাজাপুর অংশের অবস্থা বড়ই করুণ। ধানসিঁড়ি নদীর রাজাপুর অংশে খননের অভাবে ও বাগড়ি বাজার গরুর হাট এলাকায় দখল হওয়ার কারণে নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডে মাধ্যমে ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজাপুর অংশের প্রিংড়ি-বাগড়ি-বাঁশতলার মোহনা পর্যন্ত খনন করা হয়েছিল। কিন্তু উৎসমুখ ভরাট হওয়ায় নদীর ওই অংশ আবারও ভরাট হয়ে গেছে। পুরো খনন না হওয়া আরও খননকৃত অংশ সঠিকভাবে গভীর না হওয়ায় খননকৃত অংশও দ্রুত ভরে গেছে। তাছাড়া যত্রতত্র মাছ ধরার ঝাউ দেয়ার কারণেও বাঁশতলা মোহনার বিভিন্ন পয়েন্টে পলি জমে নাব্যতা হারিয়েছে ধানসিঁড়ি। জাঙ্গালিয়া নদী : উপজেলা সদরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ধানসিঁড়ি ও বিষখালি শাখা নদী জাঙ্গালিয়া। জাঙ্গালিয়া নদীটি বাগড়ি, মেডিকেল মোড় ও বাজার এলাকায় ব্যাপক দখল হওয়ায় এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। নদীর উভয় তীরে নদী দখল করে বসতবাড়ির পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে ভূমিদস্যুরা। তাই নদীর অনেকাংশ ছোট হয়ে মরা খাল হয়ে গেছে। পোনা নদী : রাজাপুর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুরের আংগারিয়া গ্রামের সত্যনগর এলাকার জাঙ্গালিয়া নদী থেকে শুরু করে আংগারিয়া, আলগী, জীবনদাসকাঠি, কৈবর্তখালী, গালুয়া, চাড়াখালি গ্রাম হয়ে ভান্ডারিয়ার কচানদী পর্যন্ত বাঁকে বাঁকে প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পোনা নদী। এক সময় নদী থেকে আসা পলি মাটির কারণে নদীর দু’পাশের কৃষকরা অধিক ফসল ফলাতো। মাছও জন্মাতো প্রচুর। কিন্তু বর্তমানে এ নদীটি মরা খালে পরিণত হওয়ায় তীরবর্তী অনেক গ্রামে পানি সঙ্কট দেখা দেয়ায় কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছেন না। ১৯৫০ সালের পরবর্তী সময়ে মাত্র ১০ ফুট গভীরতায় এ নদীটি খনন করা হয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নাম মাত্র কয়েকবার খনন করা হলেও পূর্বের যৌবন ফিরিয়ে আনতে না পাড়ায় নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। রাজাপুর শহরের খালগুলো দিন দিন ভূমি দস্যুরা বিভিন্ন কৌশলে দখল করলেও সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ কারোই মাথা ব্যথা নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন