খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতায় ও গোলাকান্দাইল দিয়ে এশিয়ান বাইপাস সড়কের সংযোগ স্থল। এ পথে নিত্য হাজারো মালবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যান বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম থেকে দেশের উল্টরাঞ্চলের একমাত্র রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়াও দেশের বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়ার অবস্থান থাকায় নিত্য যানজটের এলাকা হিসেবে ভোগান্তির পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত। তাই এ সমস্যার সমাধানে সরকার একটি মেগা প্রকল্পের কাজ হাতে নেয় ২০১৫ সনের অক্টোবর মাসে। ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ শুরু করেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে মেগা প্রকল্পের আওতায় এ ফ্লাইওভারটি ২০১৮ সনের জুন মাসের পূর্বেই খুলে দিবেন বলে সরকারের উর্ধ্বতন মহল বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে এসে ঘোষণা দেন। তবে এখনো ফ্লাইওভারটির গোলাকন্দাইল অংশের ৩৫শতাংশ কাজ বাকী, চলছে মে মাস, জুন মাসের আর কদিন মাত্র। তবে শীঘ্রই কাজ শেষ করে উদ্বোধন করে জনগণের জন্য খূলে দেয়া হবে বললেল স্থানীয় এমপি।
সূত্র জানায়, ভুলতা ফ্লাইওভার উড়াল সেতুটি নির্মাণ করছে চীনা কোম্পানী চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ ও ¯েপক্টা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও এমএন বিল্ডার্স লিমিটেড। নির্মাণাধীন ভুলতা ফ্লাইওভার প্রকল্প দেশীয় অর্থায়নে ২০১৫সনের অক্টোবরে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণ শুরু হয়। ব্যস্ততম গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় স্বাভাবিকভাবে পথচারী, ক্রেতা, বিক্রেতা আনাগোনা দেশের যে কোন স্থানের তুলনায় একটু বেশি। ফলে এখানকার প্রশাসন এ সমস্যা নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়েও ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাওয়ায় আশায় দিন গুনলেও সে অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছে না। আর শেষ হলেই সকল সমস্যার সমাধা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে সম্প্রতি সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এ ফ্লাইওভারটি পরিদর্শনে এসে ২০১৮সালের জুন মাসের পূর্বেই এ উড়াল সেতুর কাজ শেষ হবে বলে ঘোষণা দেন। আর সে সময়ের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে জানান। বাস্তবে কিছু সমস্যা থাকায় এ কাজের ধীর গতি দেখা গেছে। ফ্লাইওভারটির ঢাকা সিলেট মহাসড়ক অংশের ৮০ভাগ কাজ শেষ হলেও এশিয়ান বাইপাস গোলাকান্দাইল অংশের ৩তলার কাজ শেষ হলেই কুলে দেয়া হতে পারে এ মেগা প্রকল্পটি। এছাড়াও গ্যাং রোড, ড্রেনেজ,পাইলিং,পার্কওয়ে সহকাজ গুলো শেষ হলে যথাসময়ে এ কাজ সমাপ্ত হবে।
সূত্র জানায়, সপ্তাহে প্রতি ম্ঙ্গলবারের জন্য হকার্স ও পরিবহন শ্রমিকরা এ ফাঁড়িকে চাঁদা দিয়েই তাদের অবৈধভাবে দোকানের পসরা বসিয়ে ও মহাসড়কে চলমান অবৈধ কার পার্কিং রাখায় ফ্লাইওভার কাজে ধীর গতি হয়েছে। তবু রোধ করা যাচ্ছে না অবৈধ হকার ও পরিবহন শ্রমিকদের অবৈধ পার্কিং।
স্থানীয় সাংবাদিক মাহবুব আলম প্রিয় বলেন, রাজধানীর সন্নিকটে উপজেলাটির উপর দিয়ে এশিয়ান বাইপাস ও ঢাকা সিলেট মহাসড়কের অবস্থান থাকায় ভুলতা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যপক ভুমিকা রয়েছে। তেমনি শিল্পাঞ্চলখ্যাত রূপগঞ্জের সার্বিক উন্নয়নের মাইল ফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে এ প্রকল্পটি।
নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যে জানা যায়, দেশের প্রত্যঞ্চ অঞ্চলে উপজেলা পর্যায়ে ৪ লেন বিশিষ্ট ৩ তলা যুক্ত এই প্রথম কোন মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে রূপগঞ্জের ভুলতা ও গোলাকান্দাইলে। দেশের গুরুত্বপূর্ন বিভাগ চ্ট্টগ্রাম ও সিলেটের সাথে যোগাযোগে এ মহাসড়কের উপর নির্মাণ করা ফ্লাইওভার কার্যকরী ভুমিকা রাখবে। এ উড়াল সেতুটি ১দশমিক ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হবে। যার উভয় গার্ডার অভ্যন্তরে চারলেন বিশিষ্ট হবে। একই সাথে ৩তলা বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি দেখতেও হবে দৃষ্টিনন্দন। এশিয়ান বাইপাস,ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সংযোগস্থলে এ ফ্লাইওভার এলাকায় সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১২ কোটি টাকা। যা মূল কাজের ব্যয় হচ্ছে ১২০ কোটি টাকা। অন্যান্য ব্যায় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। নির্মাণ চুক্তিতে এ উড়াল সেতুর কাজ ২ বছরেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা সমস্যার কারণে ২য় দফায় ২০১৮ইং সনের জুন মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন হবার কথা ছিল। তবে বাস্তবে মাত্র ৬৫ভাগ কাজ শেষ হলেও এখনো ৩৫ ভাগ মুল কাজই বাকী রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের রয়েছে হতাশা। তাই সল্প সময়ে এ কাজ শেষ হওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
হকার্স ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিকরা জানায়, প্রতি মঙ্গলবার গাউছিয়া মার্কেটে দেশী বিদেশী পাইকাররা কাপড় কিনতে আসে। তাই হকার্স ব্যবসায়ীরা সপ্তাহে একদিনই তাদের ব্যবসা করেন। আবার এ দিনে পাইকারদের ক্রয়কৃত কাপড় বহনে পরিবহন যানবাহন এখানেই রাখতে হয়। তাই এদিন একটু সমস্যা হয়। তাদের দাবি এ দিন এখানে ব্যবসা করতে না দিলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা। তাই তাদের বিকল্প ব্যবস্থা রেখে উচ্ছেদ করলে কোন আপত্তি নেই বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক রিয়াজ হোসেন বলেন, সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী যথাসময়ে কাজ বুঝিয়ে দিতে পারতাম। কিছু অভ্যন্তরীন সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে খুব শীঘ্রই শেষ হবে এর নির্মাণ কাজ। উপজেলা প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, মেগা প্রকল্প আওতাধীন এ উড়াল সেতুর কাজ যথাসময়েই শেষ হতো। ব্যস্ততম সচল মহাসড়কে কাজ করতে যেয়ে নানা বাঁধা পেতে হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। তবু দুএকম মাসেরই মধ্যেই শেষ হবে এ প্রকল্পটি।
রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কলামিষ্ট লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, রূপগঞ্জের উন্নয়নে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প আরো নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিবে। এখানকার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ‚তপূর্ব উন্নয়নে আমরা গর্ববোধ করছি।
ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বলেন, এখানে পুলিশ ফাঁড়িকে ম্যানেজ করে কেউ ব্যবসা করছে না। তবে প্রশাসনের নির্দেশনায় ফ্লাইওভার অভ্যন্তরে হকার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রূপগঞ্জে দুটি বৃহৎ মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে আড়াইশো কোটি টাকা ব্যয়ে ভুলতা ফ্লাইওভার অপরটি একশো কোটি টাকা ব্যয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। যা ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যেই শেষ না হলেও পরবর্তি ২ মাসের মধ্যেই শেষ হবে আশা করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন