মোঃ গোলাম ফারুক, দুপচাঁচিয়া (বগুড়া) থেকে : দুপচাঁচিয়া উপজেলায় গ্রীষ্মের শুরুতেই ব্যাপক হারে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুতের এই ভেলকি বাজিতে চৈত্রের এই ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে উপজেলার চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও কলকারখানার মালিকসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এতে করে গ্রাহকরাও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। যে কোন সময় বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনসহ বড় ধরনের ঘটনার আশঙ্কা বিরাজ করছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান দেশে কাগজ কলমেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থাপিত ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু গড়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়ার্টের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই করুণ পরিস্থিতিতে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা কমেনি। বরং বহুগুণ বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে উপজেলাগুলোর অবস্থা আরও করুণ। এ ব্যাপারে দুপচাঁচিয়া উপজেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ কেন্দ্রের অধীনে ৩টি হিমাগার, ২টি বিস্কুট কারখানা, ১টি বৃহৎ আকারের পেপার মিল, ১টি টাইলস কারখানা, ৫টি অটো রাইচ মিল, ২টি ময়দার মিল, ৬টি অ্যালুমিনিয়াম কারখানা, ৭শ’ রাইচ মিল এবং প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার বাসাবাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এই কেন্দ্রের অধীনে মাত্র ৪ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ চাহিদা থাকলেও তা পূরণ করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে বিদ্যুৎ এর এই ঘনঘন লোডশেডিংয়ে পড়ে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ না থাকায় পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগ আরো বেশি। এ ব্যাপারে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বৈশাখী আক্তার, মাহিসা ইসলাম মিম, আশা আলমঙ্গীর ‘দৈনিক ইনকিলাব’-কে জানায়, লোডশেডিংয়ের ফলে তারা ভালোমতো পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছে না। তাদের লেখাপড়ার চরম বিঘœ ঘটছে। এদিকে বিদ্যুৎ গ্রাহক ঊষা ব্রেড এন্ড বিস্কুট মালিক দ্বিজেন্দ্রনাথ বসাক মন্টু জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে তার কারখানার উৎপাদন বহুলাংশে নেমে গেছে। বিভিন্ন মোকামে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা থাকলেও তা সরবরাহ করতে না পারায় মোকামগুলোতে মোটা অংকের টাকা বাকি পড়েছে। সারাদিন ও রাতে মাত্র ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ধান-চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিক আলহাজ আব্দুর রাজ্জাক সরদার জানান, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে চাতালের চাল উৎপাদন কমে গেছে। এদিকে সারাদিনের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ মানুষ সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে রাতের বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ে খপ্পরে পড়ে আরও দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিগত বেশ কয়েকদিন যাবৎ উপজেলায় দিনে রাতে ৮ থেকে ১০ বার লোডশেডিং চলছে। সন্ধ্যার পর লোডশেডিংয়ের ফলে বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চা আর বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে বৃদ্ধ রোগীদের অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক। এ ব্যাপারে উপজেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ উপজেলায় চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। এ ছাড়াও বগুড়ায় বিদ্যুৎ গ্রেডের সমস্যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে। তারপরও ঢাকা লোড ডেস্ট পার্টস সেন্টার (এলডিসি) বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করায় এ উপজেলায় বিদ্যুতের এই করুণ দশা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন