বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গাজা সীমান্তে স্নাইপারদের গুলিতে ৫২ ফিলিস্তিনির শাহাদাত : আহত ২৪০০

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর : জিহাদের ডাক আয়মান আল-জাওয়াহিরির

প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৩ এএম, ১৫ মে, ২০১৮

আরব লীগের জরুরী বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত : যুক্তরাষ্ট্র ‘সমস্যার অংশ’ বললেন এরদোয়ান
ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনির রক্ত ঝরিয়ে জেরুজালেমে দূতাবাস উদ্বোধন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ও জামাতা জারেড কুশনার উপস্থিত থেকে গতকাল নির্বাচনি প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে আনা মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করলেন। ভূমি দিবস উপলক্ষে ফিলিস্তিনিদের লাগাতার আন্দোলনের শেষ দিন মানবতার শত্রæ ইহুদীবাদী ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেছে কমপক্ষে ৫২ জন ফিলিস্তিনি। তাদের মধ্যে ১৪ বছরের একজন কিশোরও রয়েছে। আহত হয়েছে ২ হাজার ৪শ’
জনের মতো। ইসরাইলের ‘ভয়াবহ গণহত্যা’র প্রতিবাদে গতকালের বিক্ষোভে অংশ নেবার জন্য ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়। তারা ইসরাইলের মুহুর্মুহূ টিয়ার গ্যাস শেল ও স্নাইপারদের গুলির বিরুদ্ধে গুলতি আর পাথর ছুঁড়ে জবাব দেয়। অনেকে টায়ার জ্বালালে এলাকাটি কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায়।
গতকাল জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধনের ফলে একদিকে যেমন ইসরাইলে
বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা, তেমনি শাহাদাতের দিনে সমগ্র ফিলিস্তিনে শোনা যাচ্ছে কান্নার রোল।
গত ডিসেম্বর মাসে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুসালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর সে সময়ের প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরিত করলো। ইসরাইলি পদক্ষেপগুলোর প্রতিবাদে আল-কায়েদার প্রধান আইমান আল-জাওয়াহিরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনার জন্য তার গ্রæপের অনুসারীদের ডাক দিয়েছেন। রাশিয়া বলেছে, দূতাবাস স্থানান্তরের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর ঝুঁকির কারণ হিসেবে দেখা দেবে। তুরস্ক বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন হয়ে গেল ‘সমস্যাটির অংশ’। আরব লীগ আমেরিকার ‘অবৈধ’ দূতাবাস স্থানান্তরের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনার জন্য একটি জরুরী সভার পরিকল্পনা করছে। ওদিকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতে গিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জারেড কুশনার বলেছেন, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে খোলাখুলি দেখানো হল যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বস্ত হতে পারে এবং ‘ট্রাম্প যে প্রতিশ্রæতি দেন, তিনি তা রাখেন’।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রত্যেক বছর এই দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা ‘বিপর্যয়’ বা ‘নাকাবা’ দিবস হিসেবে পালন করে। ওই বছর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের নিজ ভূখÐ থেকে বিতাড়িত হয়।
একই সঙ্গে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার বিরুদ্ধেও সোমবার প্রতিবাদ করছেন ফিলিস্তিনিরা। গত ৬ ডিসেম্বরে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার সকাল থেকেই অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার অত্যন্ত সুরক্ষিত সীমানা বেড়া পেড়িয়ে ইসরাইলে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিতে গাজায় লাখো ফিলিস্তিনি পৌঁছেছেন। তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রতিবাদে পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ ও হেবরনেও বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনিরা। জেরুজালেম থেকে উত্তরাঞ্চলের রামাল্লাহকে বিভক্তকারী কালানদিয়া সামরিক তল্লাশি চৌকির কাছেও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন তারা।
ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে এই বিক্ষোভ করে আসছে। আজ মঙ্গলবার এই বিক্ষোভ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যূত হয়। ইসরাইলি অবৈধ ভূমি দখলকে ফিলিস্তিনিরা বিপর্যয় হিসেবে মনে করে। ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিজ ভূখÐ ফেরতের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে ইসরাইল বলছে, তাদের উচিত গাজা এবং পশ্চিম উপত্যকায় ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
স্থানীয় সাংবাদিক মারাম হুমাইদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বিক্ষোভে যত সংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছেন তা নজিরবিহীন। গত সাত সপ্তাহের প্রতিবাদে এমন জনসমাবেশ দেখা যায়নি।’
গাজা উপত্যকার ২০ লাখ মানুষের ৭০ শতাংশ উদ্বাস্তু হয়ে জীবন কাটাচ্ছে। গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছে আরো কমপক্ষে সাড়ে ৮ হাজার।
এমনকি আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র সউদী আরব বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য চরম এক উস্কানি। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইলি সৈন্যরা সোমবার ৫২ জন ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে আরো ২৪০০।
প্রাচীন এই শহরটি ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি বিরোধের একদম কেন্দ্রে। শুধু এই শহরটি নিয়ে দশকের পর দশক ধরে থেকে থেকেই সহিংসতা হয়েছে, প্রচুর রক্তপাত হয়েছে।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা ইয়োল্যান্ডে নেল বলছেন, জেরুসালেমের অবস্থার যে কোনো পরিবর্তনের প্রভাব নানাবিধ এবং তা যে কোনো সময় আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। প্রথম কথা, ধর্মীয় দিক থেকে জেরুসালেম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর একটি শহর। ইসলাম, ইহুদি এবং খ্রিস্টান ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র ধর্মীয় স্থাপনার অনেকগুলোই এই শহরে। এছাড়া, এর রাজনৈতিক গুরুত্ব হয়তো এখন ধর্মীয় গুরুত্বকেও ছাপিয়ে গেছে। ইসরাইল বলে “অভিন্ন জেরুসালেম তাদের চিরদিনের রাজধানী।” আসলে ১৯৪৮ সালে ইসরাইলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই ইসরাইল জেরুসালেমের পশ্চিমাংশে দেশের সংসদ ভবন স্থাপন করে। ১৯৬৭ সালে আরবদের সাথে যুদ্ধে জিতে ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেমও দখল করে নেয় এবং পুরো জেরুসালেম শহরটিকে ইসরাইলি রাষ্ট্রের অংশ হিসাবে ঘোষণা করে।
‘সীমান্তের সংঘাত অবশ্যই ইসরাইলকে বন্ধ করতে হবে’
সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্বিচার গুলি, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও সহিংস পদক্ষেপ অনতিবিলম্বে বন্ধে তেলআবিবের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেয়া এক বার্তায় ফিলিস্তিন সীমান্তে এ সহিংসতা বন্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে তেলআবিবের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন জেইদ রাদ আল হুসেইন। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে ব্যবস্থা নেয়ার আহŸান জানিয়ছেন জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা।
“ইসরাইলের লাইভ গোলাবর্ষণের কয়েক ডজন মানুষের হত্যা ও শত শত মানুষের আহত হয়েছে। এটি অবশ্যই এখনই বন্ধ করতে হবে।”
জেরুজালেমে এমন একদিনে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের রক্ত বন্যা বইছে। সোমবারের এ হতাহতের ঘটনা একদিনে সর্বোচ্চ ফিলিস্তিনির প্রাণহানির অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
নজরুল ১৫ মে, ২০১৮, ৩:৪১ এএম says : 0
এখন বিশ্ব মানবতা কোথায় ?
Total Reply(0)
কাজল ১৫ মে, ২০১৮, ৩:৪২ এএম says : 0
আর কবে মুসলমানরা এক হবে ?
Total Reply(0)
hasan h rahman ১৫ মে, ২০১৮, ১১:২৫ এএম says : 0
Israil killing filistine people who are protesting for their won land and religion. Bangladesh govt and political party should raise a voice against this
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন