\ তিন \
এখানে রাসূলুল্লাহ স. -এর দু’টি উক্তি প্রণিধানযোগ্য: যে ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা‘আলা মুসলিমদের দায়িত্বপূর্ন কাজসমূহের কর্তৃত্ব প্রদান করবেন, সে যদি জনগণের প্রয়োজন পূরণ ও অভাব মোচনের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে, তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলাও সে ব্যক্তির প্রয়োজন ও অভাব মোচন থেকে বিরত থাকবেন।
যে রাষ্ট্রনায়ক অভাবগ্রস্ত লোকদের জন্য নিজের দরজা বন্ধ করে রাখে, অভাব পূরণ করে না, আল্লাহ তা‘আলাও তার অভাব, প্রয়োজন ও দরিদ্র্যতার সময় আসমানের (রহমতের) দরজাসমূহ বন্ধ করে দেন।
হাদীস দু’টি থেকে এ কথা সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হচ্ছে যে, জনগণের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ ও অভাব দূর করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন না করা হলে আল্লাহর তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়া অবধারিত। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল কাঠামোই যে জনকল্যাণমূলক, তা খিলাফাতের সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। সালমান ফারিসী রা. বলেছেন: খলীফা (ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক) তিনি, যিনি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং জনগণের প্রতি পিতার ন্যায় দরদ সহকারে স্নেহ ও দরদ প্রদর্শন করেন। সাধারণ মানুষের যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব পালন মূলত জনগণের সে কল্যাণ কামনার অন্তর্ভূক্ত, যা ইসলামের দিক থেকে রাষ্ট্রনায়কের প্রধান দায়িত্বরূপে ঘোষিত হয়েছে। যে রাষ্ট্রনায়ক এ দায়িত্ব পালন করবে না, তার পরিণাম অত্যন্ত মর্মান্তিক হবে। রাসূলুল্লাহ স. বলেন: যে লোককে আল্লাহ্ তা’আলা জনগণের শাসক বা পরিচালক মনোনীত করেন সে যদি তাদের পরিপূর্ণ কল্যাণ সাধন না করে, তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও লাভ করতে পারবে না। বায়তুলমালে জমাকৃত সম্পদে দরিদ্র জনসাধারণের অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্রের মালিকানাধীন সম্পদ কোন ব্যক্তি নিজের সম্পদে পরিণত করতে পারবে না। বরং তা রাষ্ট্রের হাতে থাকবে, যাতে সবাই তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে। বায়তুলমালে সংগৃহীত ‘যাকাত ফান্ড’ যদি ফকির মিসকিনদের প্রয়োজন পূরণে সক্ষম না হয়, তাহলে অন্যান্য ফান্ড থেকে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে হবে। গনীমতের এক-পঞ্চমাংশে, ফাইয়ে, খারাজে এবং সব ধরনের অভাবী, নিঃস্ব লোকদের হক বা অধিকার রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন: জেনে রাখ, যুদ্ধে যা তোমরা লাভ কর তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহর, রাসূলের, রাসূলের স্বজনগণের, ইয়াতিমদের, মিসকীনদের এবং পথচারীদের। তিনি আরো বলেন: আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট হতে তাঁর রাসূলকে যা কিছু দিয়েছেন তা আল্লাহর, তাঁর রাসূলের, রাসূলের স্বজনগণের, ইয়াতিমদের, অভাবগ্রস্ত ও পথচারীদের, যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।
বায়তুলমালের ‘যাকাত ফান্ড’ কেবলমাত্র দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। এ জন্য মুসলিম ফকীহগণ যাকাত ফান্ডের টাকা অন্য খাতে ব্যয়ের অনুমতি দেননি। তবে সেনাবাহিনীর বেতন বা এ ধরনের কাজে যদি বায়তুলমালের সাধারণ ফান্ডে সংকট দেখা দেয় এবং যাকাত খাতে প্রচুর টাকা থাকে, তখন যাকাত খাত থেকে সরকার ঋণ নিতে পারবে। সাধারণ খাতে টাকার আমদানি হলে যাকাত খাতের টাকা সে খাতে ফিরিয়ে দিতে হবে ইমাম মুহাম্মদ ইবন হাসান রহ. বলেন: বায়তুলমালের বিভিন্ন খাতের টাকা খরচের ব্যাপারে রাষ্ট্রপ্রধানের উচিত আল্লাহকে ভয় করা। তিনি ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রত্যেক ফকীর-মিনকীনকে যাকাত খাতের টাকা যথেষ্ট পরিমাণে দিবেন, যাতে তারা এবং তাদের পরিবার সচ্ছল হয়ে যায়। যদি কিছু সংখ্যক মুসলিম অভাবে পড়ে এবং বায়তুলমালে যাকাতের টাকা না থাকে, তাহলে মুসলিম শাসক খারাজের খাত থেকে তাদের অভাব মোচন করবেন। এটা যাকাত খাতের উপর ঋণ হবে না। কেননা, খারাজও মুসলিমদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য খরচ করা যায়। পক্ষান্তরে রাষ্ট্রপ্রধানের যদি সেনাবাহিনীর বেতন দেয়ার প্রয়োজন হয় এবং বায়তুলমালের খারাজ খাতে টাকা না থাকে, তখন তিনি যাকাত খাতের টাকা খরচ করতে পারবেন, তবে তা খারাজ খাতের ঋণ হয়ে থাকবে। কেননা, যাকাত হলো ফকীর-মিসকীনদের হক। রাষ্ট্রপ্রধান প্রয়োজনে তা অন্য কোন খাতে খরচ করবেন, তখন তা সে খাতের উপর ঋণ হয়ে থাকবে।
যদি ইসলামী রাষ্ট্রের কোষাগারের আয়ের উৎস এতই কম হয় যে, তা দিয়ে গরীব অসহায়দের, ভরণ-পোষণ অসম্ভব, তাহলে ইসলামী রাষ্ট্রের শাসকগণ ধনীদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করবেন এবং তা দিয়ে গরীব অসহায়দের জীবনের মৌলিক চাহিদা পূর্ণ করবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজ পারস্পরিক গভীর সম্পর্কযুক্ত একটি পরিবার। এ সম্পর্কের বুনিয়াদ হল ঈমান ও ইসলাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন