দেশে যথেষ্ট কর্মসংস্থান না থাকায় শিক্ষিত-অশিক্ষিত তরুণেরা পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এভাবে গত চার দশকে প্রায় দেড়কোটি প্রবাসি কর্মী দেশের রেমিটেন্স আয় ও অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে মুখ্য ভ’মিকা পালন করে চলেছে। এরপরই রয়েছে দেশের রফতানমুখী গার্মেন্ট খাত। এ দুটি খাতের হাত ধরেই বিগত দশকের সূচনা পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে আমাদের অর্থনীতি একটি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণের কারণে শেষ রক্ষা হলনা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে দেশে একটি একতরফা কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় সাংবিধানিক-রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদধারি ব্যক্তিরা নিজেদের আইনগত নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে বলে মনে করছে। এরা এবং এদের ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তিরা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে ভেতর থেকে ফোঁকলা করে দিয়েছে। অন্যদিকে জনগণের উপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে বেশকিছু মেগা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে দেশে যে তথাকথিত উন্নয়নের ঢোল বাজানো হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত তা ফুটো বেলুনের মত চুপসে যেতে চলেছে। দেশ এখন চরম অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত। দেড় দশক আগে বিএনপি জোট সরকারের আমলে বিদ্যুতখাতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। সেই সরকারের এই ব্যর্থতায় সাধারণ মানুষ হতাশ ও বিরক্ত হয়েছিল। সে অভীজ্ঞতার আলোকে আওয়ামীলীগ সরকার বিদ্যুত খাতের উন্নয়নকে অন্যতম অগ্রাধিকার কর্মসূচি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। গ্যাস, কয়লা এবং সমুদ্রের বøকগুলো থেকে জ্বালানি সম্পদ উত্তোলনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং রাষ্ট্রায়াত্ত পেট্টোলিয়াম কোম্পানি বাপেক্সকে শক্তিশালী করে জ্বালানি খাতের উন্নয়নে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার বদলে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া কুইকরেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের সাথে অসম-অস্বাভাবিক চুক্তি করে একযুগ ধরে লক্ষ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের সাথে এমন চুক্তি করা হয়েছে, এক ওয়াট বিদ্যুত না নিয়েও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে শত শত কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। এখন দেশে গ্যাসের চাপ না থাকা, এলএনজি, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রেখে সারাদেশকে রুটিন লোডশেডিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তবে সার্ভিস চার্জের নামে অলস বসে থাকা বিদ্যুতকেন্দ্রের মালিকদের পকেটে ভতুর্কির টাকা দেয়া বন্ধ হয়নি। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং করোনাকালীন মন্দায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য যখন রেকর্ড হারে হ্রাস পেয়েছিল, মূল্য সমন্বয়ের নামে তখনো আমাদের দেশে বার বার জ্বালানির মূল্য বাড়ানো হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও গত তিনমাস ধরে তা আবারো নি¤œমুখী রয়েছে। যে মুহূর্তে ক্রুড অয়েলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে, তখন আমাদের দেশে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ৩৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে বোঝার উপর বালির বস্তার মত আরেকদফা মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ।
করোনাভাইরাস মহামারীর প্রথম লকডাউনে দেশের কোটি কোটি নি¤œ আয়ের মানুষ তাদের কর্মসংস্থান হারিয়ে হতদরিদ্র শ্রেণীতে পরিনত হয়। দ্য পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার(পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট(বিজিআইজিডি) পরিচালিত এক সমীক্ষায় বলা হয়, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় দেশে নতুন করে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। সারাবিশ্বেই করোনা লকডাউনের সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুনরুদ্ধার কর্মসূচি হাতে নিয়ে সুফল পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে লক্ষকোটি টাকার কর্মসূচি তেমন কোনো কাজে আসেনি। করোনা চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, করোনাভাইরাস ভ্যাক্সিনেশন থেকে শুরু করে পুনরুদ্ধার কর্মসূচি পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা ও পিছিয়ে পড়ার চালচিত্র দেখা গেছে। কর্মচ্যুত ও বেকার কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চেয়ে উন্নয়নের ডুগডুগি এবং পদ্মাসেতু উদ্বোধনের মহাসমারোহে সরকারের মনোযোগের আতিশয্য লক্ষ্য করা গেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট অঞ্চলের কোটি মানুষের জীবনে যখন মানবিক বিপর্যয় চলছিল তখন পদ্মাসেতু উদ্বোধনের এমন আড়ম্বরতাকে অনেকেই ভাল চোখে দেখেননি। পদ্মাসেতু আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ হলেও কোটি কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন ও দুর্দশা লাঘবের চেয়ে এর উদ্বোধন ও প্রচারণার গুরুত্ব নি:সন্দেহে বেশি নয়। পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ঢাকায় যাতায়াতের সময় অর্ধেকে নেমে এলেও যাতায়াতের খরচ বেড়ে গেছে। পদ্মাসেতু দিয়ে সহজে ও দ্রæত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিপণ্য ঢাকায় নিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হলেও ঢাকার কাঁচাবাজারে তার কোনো ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়নি। উপরন্তু ঢাকার রাস্তায় যানজট ও বিশৃঙ্খলা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গতিশীলতা আগের চেয়ে মন্থর হয়েছে। পাঁচ মিনিটের রাস্তা পেরোতে দেড়ঘন্টা লাগে, এই বাস্তবতা কোনো উন্নয়নের পরিচয় বহন করে না। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেতু, উড়ালসেতু নির্মান করছি, অথচ এসব অবকাঠামো জনগণের প্রত্যাশিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছে না। ফ্লাইওভারের উপরে যানজট, নিচে ময়লার ভাগাড়, খানাখন্দ ও যানজটের স্থবিরতায় নাগরিক সমাজ বিরক্ত, হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। বাংলাদেশে সামাজিক অর্থনৈতিক এই সংকট হঠাৎ বা আকষ্মিকভাবে দেখা দেয়নি। একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থায় ্এটি দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, নিয়ন্ত্রণহীন অর্থপাচারের সুনিশ্চিত ফল। হঠাৎ কওে কোনো যাদুর কাঠির বলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই। আইএমএফ বিশ্বব্যাংকের মত পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদ নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের জন্য কতটা কল্যানকামী তা নিয়ে বিতর্ক ও সংশয় থাকলেও আমাদের মত দেশে মোটাদাগে ধরা পড়া অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও নীতি কৌশলগুলো পরিবর্তন করে ব্যাংকিং সেক্টরসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের এবং দেশী-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও তাগিদ কোনো কাজে আসেনি।
দেশের দেড়কোটি প্রবাসি কর্মী, এককোটি গার্মেন্টস শ্রমিক ও কোটি কোটি কৃষকের মাথার ঘামে অর্জিত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সোপান কতিপয় রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, সরকারি আমলা, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীর লুটপাটের মৌরসিপাট্টায় পরিনত হয়েছে। একদিকে সরকারের অদূরদর্শী পরিকল্পনা অন্যদিকে অর্থপাচারের মচ্ছব রুখতে অনীহা ও ব্যর্থতার দায় গুণতে হচ্ছে দেশের সব মানুষকে। এক দশকের বেশি সময় ধরে বিদ্যুতখাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার পর এখন বিদ্যুতের রেশনিং সিস্টেমে দৈনিক চার-পাঁচ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের অন্ধকার বরণ করতে হচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে যখন প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের পথ ধরে রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থা দেখা দিল, অবশেষে সে দেশের কর্তৃত্ববাদী শাসক পরিবারের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে শুরু করল, তখন বাংলাদেশেও অনেকে সম্ভাব্য অনুরূপ পরিস্থিতির আশঙ্কা করার প্রেক্ষিতে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা অনেকটা ব্যঙ্গাত্মক স্বরে বলেছিলেন, বাংলাদেশের তুলনা শ্রীলঙ্কার সাথে নয়, ইউরোপ-আমেরিকার সাথে হবে। সে সব প্রত্যয়ী কণ্ঠস্বর এখন আর শোনা যাচ্ছে না। পদ্মাসেতু নিয়ে যখন বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ’র সাথে টানপোড়েন চলছিল তখন বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সাথে পরোক্ষে এক ধরণের বাহাসে লিপ্ত হয়েছিলেন। অর্থনীতিতে বাংলাদেশের শক্ত ভিত্তি ও আত্মনির্ভরতা এবং মধ্য আয়ের উন্নত বাংলাদেশের ফিরিস্তি দিয়ে একটি রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা সিরিজ চালু রেখেছিল। এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে খবর বেরোচ্ছে, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর এবার বাংলাদেশও সংকট উত্তরণ ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র কাছে ঋণের জন্য ধর্না দিচ্ছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, নেপাল, মিয়ানমারের মত দেশও আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, আইএমএফ’র শর্ত পুরণের জন্যই নাকি সরকারকে জ্বালানি তেলের সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিতে হয়েছে। সরকারের জোটের শরীকদলের এক নেতা ঋণ পেতে আইএমএফ এর শর্ত মেনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে সরকারের ‘বিষ গেলা’ বলে উল্লেখ করেছেন। দেশে ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষম জনসংখ্যার বিপরীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা এবং পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক স্ফীতির মধ্যে জনজীবন যখন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য নিম্মমুখী হওয়া সত্তে¡ও দেশে প্রায় ৪০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির অপরিনামদর্শি সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ হতবাক, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জনগণের কাছ থেকে বাড়তি মূল্য আদায় করে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে সাধারণ মানুষকে স্বস্তির জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কোনো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কর্মসূচীও দেখা যাচ্ছে না। এখনো বসিয়ে রাখা বেসরকারি বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। বাজারে ডলারের সঙ্কট এবং প্রায় প্রতিদিনই টাকার মূল্য কমে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ থেকে অর্থ পাচারের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কাই প্রমাণিত হচ্ছে। গত একযুগে দেশ থেকে প্রায় ৮ লক্ষকোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পাচারকৃত অর্থের অর্ধেকও দেশে বিনিয়োগ করা হলে আজকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভিন্নতর হতো।
গত এক দশকে বৈদেশিক ঋণের বোঝা অন্তত চারগুণ বেড়েছে। এবার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর ঋণ মঞ্জুর হলে মানুষের মাথাপিছু ঋণের বোঝা আরো অনেক বেড়ে যাবে। জাতীয় বাজেটের একক বৃহত্তম খাত হিসেবে ঋণের সুদ দিতে ব্যয় করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ বাবদ বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ চলমান ঋণের সুদ যুক্ত হলে এ অঙ্ক হয়তো দ্বিগুনের কাছাকাছি চলে যাবে। গত অর্থবছর নাগাদ বাংলাদেশের নাগরিকদের গড় মাধাপিছু দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমান ছিল প্রায় ১ লাখ টাকা। ঋণের এ হার ভারত ও বাংলাদেশ প্রায় সমান হলেও পাকিস্তানে মাথাপিছু ঋণ ৭০ হাজার টাকার কম এবং শ্রীলঙ্কার ২ লাখ টাকার বেশি। তবে আগামী অর্থবছর নাগাদ বাংলাদেশ সরকারের ঋণের হার শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি পৌছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের নেয়া সব ঋণ জনগণের উপর বর্তায়। দেশে যে শিশুটি আজ জন্মগ্রহণ করল, সেও লাখটাকা রাষ্ট্রীয় ঋণ মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করল। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটাই এমন যে, উন্নত-উন্নয়নশীল সব দেশকেই জাতীয় বাজেট সংস্থানে ঘাটতি ও বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর করতে হয়। আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের শর্তের জালে আবদ্ধ হলে এ থেকে মুক্তির পথ খুব দূরূহ হয়ে উঠতে পারে। গেøাবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি(জিএফআই) এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে বছরে ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। কয়েক বছর আগে বিবিসি’র বরাতে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় কর্মীরা বছরে ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ দেশ থেকে পাচার হওয়া বেশিরভাগ অর্থই ভারতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টর, আইটি, ওষুধশিল্প এবং এনজিও খাতে কর্মরত ভারতীয়দেন বেশিরভাগই অবৈধ কর্মী। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আইনগত প্রক্রিয়া ছাড়াই এরা কাজ করে টাকা দেশে পাঠিয়ে দিলেও সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। দেশ এখন বড় ধরণের অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নেই। লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার কর্মসংস্থানের জন্য দেশ ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তখন দেশ থেকে শত শত কোটি ডলার অবৈধ বিদেশি কর্মীরা নিয়ে যাচ্ছে! এ বাস্তবতার পরিবর্তন দরকার। আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কারিগরি ইনিস্টিটিউটগুলো যদি দেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের যোগান দিতে না পারে, সে সব প্রতিষ্ঠান নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, কানাডায় সম্পদ ক্রয়ের তথ্য যাচাই করে তিনি দেখতে পেয়েছেন, সরকারি চাকরিজীবীরাই সেখানে বেশি টাকা পাচার করেছেন। এটা যদি সত্য হয়, দেশের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী সরকারি কর্মকর্তারাই বেশি অর্থ পাচার করছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। বিচারহীনতা ও জবাবদিহিতামুক্ত বল্গাহীন ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী। জাতির এই ক্রান্তিকালে দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার, স্বচ্ছতা ও গণতন্ত্রায়ণ নিশ্চিত করার জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। আগামী প্রজন্মকে ঋণভারে জর্জরিত করে যাওয়ার আগে ঋণ পরিশোধ ও নিরাপদ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।
bari_zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন