শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

দামুড়হুদায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে হাজারো মানুষ

নিষিদ্ধ পলিথিনের বেচাকেনা ও ব্যবহার বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) উপজেলা সংবাদাতা : দামুড়হুদায় পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের বেচাকেনা ও ব্যবহার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। উপজেলার হাট-বাজার ও দোকানপাটে পলিথিন ছাড়া প্যাকেটকৃত জিনিষ খুঁজে পাওয়া ভার। সম্প্রতি নুতন করে পলিথিনের ব্যবহার যোগ হয়েছে বিভিন্ন ফল উৎপাদনেও। পলিব্যাগের বিকল্প হিসাবে পাট, কাগজ ও কাপড়ের ব্যাগ চালুর সরকারি সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না। পলিথিনের পাশাপাশি সিমেন্ট, সার ও কীটনাশকের ব্যবহৃত বস্তা কেটে তৈরি করা ব্যাগে সয়লাব হয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার হাট-বাজারগুলো। জানা যায়, প্রাণিদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন বন্ধে ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকায় এবং একই বছরের ১মার্চ থেকে সারা দেশে পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পরিবেশ আইন ১৯৯৫ সংশোধন করা হয়। এই আইনে কেউ এই পলিথিন উৎপাদন করলে দশ বছরের সশ্রম কারাদ- ও অনধিক দশ লাখ  টাকা জরিমানা এবং বাজারজাত করার জন্য ছয় মাসের জেল ও দশ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা  হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে অবাধে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার বেড়েই  চলেছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রকাশ্যেই ব্যবহার হচ্ছে রং-বেরঙের নানা সাইজের পলিথিন ব্যাগ। বর্তমানে পলিথিন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা না থাকায় অনেকেই এখন পলিথিন ব্যবহার বৈধ বলেই জানে। অনেকে জানান, পাটের তৈরি বাজার ব্যাগ সহজে বহনযোগ্য নয় আবার দামও বেশি। আর কাপড়ের ব্যাগের দাম তো আরও বেশি। কিন্তু পলিথিন ব্যাগের দাম কম এবং সহজলভ্য হওয়ায় সাধারণ মানুষ পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে মাছ, মাংশ ও কাঁচাবাজারের বেশিরভাগ পণ্যই ভেজা থকে এ কারণে ক্রেতারা পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করেন। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানগুলোতে বাইরে খাবার দিতে ব্যাপকহারে পলিব্যাগের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, দোকানে পলিথিন রাখলে বেচাকেনা ভাল হয়। তাই আইন মানতে গিয়ে কেউই ব্যবসায় লোকসান করতে চান না। ফলে সব দোকানেই পলিথিন ব্যাগ থাকে। পাইকারী দোকানগুলোতে প্রকাশ্যেই বিভিন্ন সাইজের পলিব্যাগ প্রতি কেজি  ২৮০ থেকে ২৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, অনেক ক্রেতাই মাছের বাজারে ব্যাগ নিয়ে আসেন না। ফলে ক্রেতা সাধারণের সুবিধার কথা ভেবেই দোকানে পলিথিন রাখতে হয়। একদিকে পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য ক্রেতারা দায়ী করছেন প্রশাসন ও ব্যবসায়ীদের। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন ক্রেতাদের। ক্রেতারা জানান, বিভিন্ন দোকানে খুব সহজেই পলিথিন পাওয়া যায় বলে তারা পলিথিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। আবার ব্যবসায়ীরা বলেন, ক্রেতারা বাজারে করতে ব্যাগ না আনার কারণে তাদের সুবিধার কথা ভেবে বাধ্য হচ্ছেন পলিথিন রাখতে। মাঝখান দিয়ে বেড়েই চলেছে প্রাণিদেহ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। এদিকে ব্যাবহৃত ফেলে দেওয়া পলিথিনের কারণে মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে আবর্জনার সাথে পরিত্যক্ত পলিথিন জমে শহর ও গ্রামাঞ্চালের ছোটবড় ড্রেনগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন হতে না পারায় বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে এক সময় ড্রেনগুলা অকেজো হয়ে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়ে এলাকার মানুষ। এছাড়া অনবরত পরিত্যক্ত পলিথিনের কারণে কৃষি জমি উর্বরতা হারিয়ে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নানাভাবে গুড়ো হয়ে বাতাসে মিশে যাওয়া পলিথিন শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষের অকাল মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করছে। মাঝে-মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন হাটে-বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে পলিথিন বিক্রি ও রাখার দায়ে জরিমানা করা হয়ে থাকে কিন্তু পলিথিনের উৎস্য সম্পর্কে কোন তদন্ত কর হয়না। ক্রেতারা জানান, বাজারে পলিথিন না থাকলে আমরা অবশ্যই এটা ব্যাবহারের প্রতি আগ্রহী হব না। বাজার নিয়ে যেতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন