আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : সিলেটের ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ উপজেলায় তিন দিনের মুষলধারে বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বোরো ধান পানির নিচে। ধানের উপর দিয়ে বৃষ্টির পানি ঢেউ খেলছে। দুশ্চিন্তায় কাটছে কৃষকের দিন রাত। দুটি উপজেলার অধিকাংশ বোরো ধান পানি নিচে। অন্যদিকে শিলা বৃষ্টি ও প্রবল ঝড়ে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি অফিস জানিয়েছে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ৫০ হেক্টর বোরো ধান পানির নিচে। তবে অন্য সূত্র জানিয়ে ডুবে যাওয়া বোরো ধানের পরিমাণ অনেক বেশি। বালাগঞ্জ উপজেলার পূর্ব প্রান্তে স্লুইসগেট খোলা থাকায় কিছু পানি কুশিয়ারা নদী থেকে প্রবেশ করে। খবর পেয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা কর্মকর্তা দ্রুত স্লুইসগেট বন্ধ করে দেন। স্থানীয়রা মনে করছেন বোরো ধান যা এখনো অনুকুলে রয়েছে তা ধীরে ধীরে আক্রান্ত হয়ে পড়বে। চলতি মৌসুমে দুটি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদন করা হয়। বালাগঞ্জে ৭ হাজার ২৭৫ হেক্টর ও ওসমানীনগরের ৮ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। সরেজমিন দেখা যায়, কৃষকের কষ্টে ফলানো সোনালি বোরো ফসল তিন দিনের ৯ ঘণ্টার বৃষ্টির পানি কেড়ে নিয়েছে। এবার দুটি উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ বোরো ধান হয়েছিল। বোরো জমির দিকে তাকালে ধান আর ধান দেখা গিয়েছিল। যা বিগত কয়েক বছরেও এভাবে ফলেনি। হাওরের নি¤œাঞ্চলের বোরো ধান কাটার আশা ছেড়ে দিয়েছেন কৃষকরা। থামছেনা হাওর পাড়ের মানুষের কান্না। তাদের একমাত্র ভরসা বোরো ধান তলিয়ে যাওয়ায় অন্ধকার দেখছেন। হাওরের উজানে অর্ধ পাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। বৃষ্টির পানির আক্রান্তের ভয়ে পুরোপুরি পাকার চিন্তা বাধ দিয়ে ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে কাজের লোকের অভাব দেখা দিয়েছে। অনেককে জমির পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলতে দেখা গেছে। কোথাও শিলাবৃষ্টিতে পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। প্রচ- শীতকে উপেক্ষা করে ঋণ করে বর্গা চাষ করেছেন অনেকে। বোরো ফসল তুলতে পারলেই ঋণ পরিশোধ করবেন পাওনাদারের কাছে ছিল ওয়াদা। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া কৃষকদের লোকসানে ফেলে দিল। উপজেলার কালাসারা, লেংড়া বিল, রউয়া, ফেকুয়া, গৌরীপুর হাওরগুলোতে বাড়ছে পানি। পানি দ্রুত নিষ্কাষণ হওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। কোথাও খালে বাধ রয়েছে। কালাসারা হাওরের পানি নিষ্কাষণের দুটি খাল, গাঙ্গিনার খাল ও দাসপাড়া খাল। কিন্তু দাসপাড়া খালে অপরিকল্পিতভাবে ভরাট করে ব্রীজ নির্মাণ করায় পানি উল্টো হাওরের দিকে ডুকছে। বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের তাৎক্ষণিক করনীয় বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। ফসল পাকার সাথে সাথেই দেরি না করে দ্রুত ফসল সংগ্রহ করা, সম্ভব হলে পানি অপসারনের জন্য ব্যবস্থা বরা, এক্ষেত্রে যে কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উপসহকারী কৃষি অফিসার অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। পানিতে অর্ধ নিমজ্জিত ধান নষ্ট করতে না পারে সে জন্য বাশ বা ডাল পালা দিয়ে কচুরিপানা আটকে রাখার ব্যবস্থা করা, উঁচু স্থানে আউশের বীজতলা তৈরি করুন। ডাল, সবজি ও অন্যান্য খরিপ ফসলে পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা নেয়া। কোন এলাকার স্লুইসগেট খোলা বা বন্ধ করার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা নেয়, আবহাওয়া পূর্বাভাস ও কৃষি বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত আগাম সতর্কতা বার্তাসমূহ নিয়মিত শুনুন এবং অনুসরণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনের ৯ ঘণ্টায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছ। বৃষ্টিপাতের সময় মেঘালয়ে ভূমিকম্প হয়েছে বলেও জানা যায়। পাশাপাশি মুষলধারে বৃষ্টি, বজ্রপাত ও ঝড়ে সিলেটের জনজীবন স্থবির করে তুলেছে। ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের রাস্তাঘাটে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে এইচএসসি পরীক্ষার্থী, স্কুল শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত যাতায়াতেও সমস্যা হয়। সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে সোমবার সন্ধ্যা থেকে সিলেটে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গত বৃস্পতিবার পর্যন্ত ৫৩ মিলিমিটার পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে কালাসারা হাওরের কৃষক মোশাহীদ আলী বলেন, হঠাৎ বৃষ্টির পানি এসে আমাদের স্বপ্ন তছনছ করে দিল। বৃষ্টির পানি যেভাবে বাড়ছে আমার মনে হয় না নি¤œাঞ্চলের বোরো ফসল তোলা সম্ভব হবে। আমার মত শত শত কৃষকরে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আব্দুল মালেক ইনকিলাবকে জানান, এবারের বোরো ফসল ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় বোরোর ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৫০ হেক্টর বোরো ফসর পানির নিচে রয়েছে। আকাশে বৃষ্টি বন্ধ হলে আশা করি ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন কৃষকগণ। পাশাপাশি এ মুহূর্তে কি করণীয় এ বিষয়ে পরামর্শমূলক লিফলেট বিতরণ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন