রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘বুমেরাং হবে বাংলা কোরআনে কথিত ভুল সংশোধন-প্রয়াস’

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জুমা বারের খুতবা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপের পর আরো একটি অভিনব-চমক সৃষ্টি করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সাহেব। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি কোরআন শরীফের বাংলা অনুবাদের ভুল সংশোধন করছেন। এ কাজ করার জন্য নাকি প্রধানমন্ত্রী তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ডিজি সাহেব আরো বলেছেন, বাজারে প্রচলিত প্রায় শ’ খানিক অনুবাদেই ভুল রয়েছে।
ইমলামিক ফাউন্ডেশন প্রধানের পরিবেশিত এ তথ্য অভিনব নজীরবিহীন। তিনি শ’ খানিক বাংলায় অনূদিত কোরআনে ভুল উদ্ধার করতে পেরেছেন। এটি তাঁর অসাধারণ সাফল্য(!) হিসেবে মুসলিম দুনিয়ার কাছে বিবেচিত হওয়ার মত। এ বিপুল সংখ্যক কোরআনের বাংলা অনুবাদে কোথায় কোথায়, কি কি ভুল তিনি দেখতে পেয়েছেন এবং কিভাবে ভুল নির্র্ণয় করেছেন, সে সম্পর্কে তিনি কোন তালিকা বিবরণী প্রদান করলে তার অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেত। প্রধানমন্ত্রী তাকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন নাকি লিখিত নির্দেশ প্রদান করেছেন, প্রকাশিত খবরে তারও উল্লেখ নেই। প্রশ্নে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কে ডিজি সাহেব কি তার কথিত ভুলগুলোর তালিকা বিবরণী প্রকাশ করেছেন, যা দেখে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছেন? আর এটা কি সম্ভব, ভুলের যথার্থ প্রমাণাদি না দেখে প্রধানমন্ত্রী কথিত নির্দেশ দিতে পারেন?
বর্ণিত সংখ্যক কোরআনের বঙ্গানুবাদের কত সংখ্যক কোরআন ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক সম্পাদিত প্রকাশিত সে সংখ্যাও বলা হয়নি। ফাউন্ডেশনের পক্ষ হতে যত গুলোই প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলোতে ভুল। সে ভুলগুলো সংশোধনের দায়িত্ব ফাউন্ডেশনেরই, সেগুলো সংশোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রয়োজন হবে কেন? প্রকাশের সময় কি তাঁর নির্দেশ ছিল? আর যে সব কোরআনের অনুবাদ ব্যক্তি বা কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রকাশিত সেগুলোর অনুবাদে ভুল থাকলে, তা সংশোধনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সকলের। তাতে নাক গলানোর অধিকার কি ডিজি সাহেবের আছে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একটি মাত্র কোরআনের বাংলা অনুবাদ রয়েছে। ডিজি সাহেবের বয়ানে এ কোরআনের কথা উল্লেখ নেই। এর অনুবাদে ভুল থেকে থাকলে তা যদি বর্তমান ফাউন্ডেশন প্রধানের দৃষ্টি এড়িয়ে না যায় তা সংশোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ চাওয়া হলে তা একেবারে অযৌক্তিক নয়। কেননা, এ ফাউন্ডেশন সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি প্রকাশনা ও গবেষণাধর্মী ইসলামী প্রতিষ্ঠান। বিশে^ সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী ধর্ম গ্রন্থ আল-কোরআনের বঙ্গানুবাদে কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করা অবশ্যই ফাউন্ডেশনের জরুরী দায়িত্ব। একথা অস্বীকার করা যায় না।
বাংলা, আরবী, উর্দু, ইংরেজি এবং ফার্সি - এগুলোর প্রত্যেক ভাষায় বিশেষজ্ঞ গণের ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিরাট দল কর্তৃক কয়েক বছরের সাধনা-গবেষণার মাধ্যমে বাংলায় অনূদিত ‘আল-কুরআনুল করীম’ নামে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবার চার বছর পূর্বে। এখন আমাদের সামনে ‘দ্বাবিংশ মুদ্রণের’ কপি রয়েছে। বাংলাভাষায় সর্বাধিক প্রচারিত এবং অতিজনপ্রিয় এ কোরআনের এতগুলো সংস্করণে কেউ ভুল ধরতে পারেনি। প্রথম মুদ্রণটি পুন: পুন: অবিকল মুদ্রিত হয়ে আসছে। বিগত অর্ধ শতাব্দী যাবত নির্ভুল অনুবাদ হিসাবে যার অসংখ্য সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে অর্থ ও মর্মের দিক থেকে ছিদ্র অনুসন্ধান বা ভুল উদঘাটনের প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়নি এবং সেই তথা কথিত ভুল সংশোধনের যে কোন উদ্যোগ ব্যুমেরাং হতে বাধ্য একথা ডিজি সাহেবের স্মরণে না থাকার কথা নয়।
মূল আরবী কোরআনের অনুবাদ দুনিয়ার নানা ভাষায় হয়েছে এবং অহরহ হচ্ছে। আমাদের দেশে বাংলায় অধিকাংশ উর্দু থেকে অনুবাদ হয়েছে। অর্থাৎ অনুবাদের অনুবাদ। অতএব যে ভুল সংশোধনকারী ও অনুবাদকের আরবী, উর্দু ও ফার্সি ভাষা জ্ঞানের অভাব, তার পক্ষে এ পথে পা বাড়ানো কোরআন নিয়ে তামাশা করা তথা কোরআনের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের শামিল।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
আবদুল হান্নান ১৯ মে, ২০১৮, ২:১৬ এএম says : 1
এই ডিজি কে অনেকেই ............... মনে কনে করে--- এখন মনে হয় এই ......... সত‌্যিই ...........।
Total Reply(0)
বিপ্লব ১৯ মে, ২০১৮, ৩:০৮ এএম says : 1
এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী হুজুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
তামিম ১৯ মে, ২০১৮, ৩:১১ এএম says : 1
এই বিষয়ে যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে দেশের প্রখ্যাত আলেম ওলামাদের নিয়ে বোর্ড গঠন করে করতে হবে বলে আমি মনে করি।
Total Reply(0)
পারভেজ ১৯ মে, ২০১৮, ৩:১১ এএম says : 2
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুক
Total Reply(0)
mohammad sirajullah ১৯ মে, ২০১৮, ৩:৪৭ এএম says : 1
Every interested person has the right to translate any book. But sometime one can make mistake. If another person finds any mistake he/she should pint it to the original author and/or Publisher. It will be their right to accept or reject the proposed correction. No person or board has the right to correct some else's writings or translations. Government has the right to band the publication if it is found to be a distorton but has no right to correct it.
Total Reply(0)
Javid ১৯ মে, ২০১৮, ৪:০৭ এএম says : 1
Era allahr dushmon, gozobe porbe.
Total Reply(0)
smrity ১৯ মে, ২০১৮, ১০:১৬ এএম says : 2
মুশরিকরা কুরআনের ভুল শোধরাতে এসে নিজের জীবনের ভূল শোধরাতে পেরেছেন। আর আমাদের আলচ্য লোকটি কুরআনের ভুলশোধরাতে এসে নিজের জিবনটাকে মুশরিক হিসাবে পরিচিত করাবেন হয় তো!
Total Reply(0)
AI ১৯ মে, ২০১৮, ১:০১ পিএম says : 1
কারোর চাপে ভুল অনুবাদ করলে খুবই খারাপ হবে।
Total Reply(0)
bashir ১৯ মে, ২০১৮, ১:১৩ পিএম says : 1
এই শামিম আফজাল কোন মাদ্রাসায় লেখাপরা করেনি অতছ এইরকম একটা বিষয়ে যার জার্রা পরিমান ইল্ম নাই সে কেন এটাতে হাত দিতে জাচ্ছে?
Total Reply(0)
Mahbub ২১ মে, ২০১৮, ১০:৩০ পিএম says : 0
এখানে আপনি আপনার মন্তব্য করতে পারেন The Daily Inqilab .....love for Islam.
Total Reply(0)
২৪ মে, ২০১৮, ২:০০ পিএম says : 0
ভুলসংশোধন করে সঠিক অনুবাদটি সকলের সামনে আসাই উচিৎ
Total Reply(0)
Mostafa Kamal ২৫ মে, ২০১৮, ৩:৫২ এএম says : 0
ভুলে ভরা যার জীবন, সে কোরআনকেও তার দৃষ্টিতেই দেখবে।
Total Reply(0)
Mostafa Kamal ২৫ মে, ২০১৮, ৩:৫২ এএম says : 0
ভুলে ভরা যার জীবন, সে কোরআনকেও তার দৃষ্টিতেই দেখবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন