শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে রাসূল (সঃ) এর প্রতি বে-আদবির ও অবমাননার পরিণাম

নাজীর আহ্মদ জীবন | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৫ এএম

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে ঃ ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকাল ও পরকালে অভিসম্মাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননা কর শাস্তি।’ (সূরা ঃ আহ্যাবÑ৫৭)

আরো এরশাদ করেন ঃ ‘যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক (কষ্টকর) শাস্তি।’ (সূরা ঃ তাওবাÑ৬১) সুতরাং যে কেউ রাসূল (সাঃ) কে হেয় প্রতিপন্ন করে; তাঁকে গালী দেয়, তাঁর দোষ চর্চা করে; তাঁর বংশধর ও তাঁর দ্বীন ও পবিত্র স্ত্রীদের নিয়ে কালিমা লেপন করে, তাহলে কুফরীর কারণে তাকে হত্যা করা বা মৃত্যু দন্ডের নির্দেশ রয়েছে। (দ্রঃ মহানবী (সাঃ) এর জীবনী বিশ্বকোষ পৃÑ৬৪৪)

আল্লামা আলিমুন হুদা; “বাহরুল মুহীত” কিতাবে ও এমত পোষণ করেছেন। (দ্রঃ মীলাদে বেনযীরÑপৃÑ৩২২) রাসূল (সাঃ) বলেছেন ঃ ‘মিথ্যা পাপের পথ দেখায়; আর পাপ জাহান্নামে (নরক) নিয়ে যায়’। (বুখারী, মুসলিম)
তাই রাসূল বলেছেন ঃ আমার প্রতি আরোপ করা অন্য কারো প্রতি মিথ্যা আরোপ করার মত নয়। সুতরাং, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে সে যেন; জাহান্নামে তার ঠিকানা প্রস্তুত রাখে।’ (বুখারী; মুসলিম)

হযরত ইমাম শা’রনী (রঃ) বলেছেন ঃ “জানা থাকা আবশ্যক যে, যে কথায় রাসূল (সাঃ) এর সম্মান প্রকাশ পায় তাতে কারো পক্ষে তর্কÑবিতর্ক বা কোন রূপ যুক্তি কিংবা প্রমাণ তালাস করার অধিকার নেই। কারণ, এতে বেÑআদবী নিহিত আছে।” (দ্রঃ জাওয়াহিরুল বিহারÑ১ম খন্ড-পৃ ৪২২)

রাসূল (সাঃ) এর সম্মানে কটাক্ষ করে বেয়াদবি করা যে কত দুঃখজনক, সে হত ভাগ্যের জন্য একটা উদাহরণ, ওলিদÑবিন মগীরা। এ হত ভাগা রাসূল (সাঃ) কে ‘পাগল’ বলে অপবাদ দিয়েছিল। এতে হুজুর (সাঃ) মনে কষ্ট পান। যা আল্লাহর নিকট অসহ্যকর ছিল। আল্লাহ তাঁর হাবীব (মহান বন্ধু) কে সান্তনা দিয়ে বলেন, “আপনার প্রতি পালকের অনুগ্রহে আপনি ‘পাগল’ নহেন; আপনার জন্য রয়েছে, ‘নিরবিচ্ছিন্ন পুরস্কার’ এবং আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।” (দ্রঃ সূরাঃ কলমÑ১ম রুকু)

আর ওলীদ এর বে-আদবী ও গোস্তাখীর নিন্দা করে তার দশটি দোষ আল্লাহ বর্ণনা করে, আল্লাহ বলেন, “হে রাসূল! আপনি তার কথার প্রতি কর্ণপাত করবেন না। সে মিথ্যা শপথকারী; ঘৃণিত; অপমানিত; নিন্দাকারী; চোগলখোর; সৎকাজে নিষেধকারী; সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠ পাষানÑহৃদয়; এবং সে হারামজাদা।” (আলÑকোরআন)

একবার আবু লাহাব; রাসুল (সাঃ) কে বলেছিল Ñ“আপনার হাত ধ্বংস হউক। এতে আল্লাহর ক্রোধের সমুদ্র উদ্বেলিত হয়ে উঠে। আল্লাহ বলেন; “আবু লাহাবের দুই হাত ধ্বংস হউক; এবং সে নিজেও। তার ধন সম্পদ, তার উপার্জন ও তার কোন উপকারে আসে নাই। সে প্রজ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে এবং তার স্ত্রীও। যে জ্বালানির কাষ্ঠ বহন করে এবং তার গলদেশে রয়েছে খেঁজুরের আঁশের রশি (সূরাঃ লাহাবÑ১ম রুকু)।

আবু লাহাবের একটা কুটুক্তির জবাবে আল্লাহ তার ও তার স্ত্রী সম্পর্কে এভাবে জবাব দিয়েছেন। তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটনা; এ সূরার সত্যতার জ্বলন্ত প্রমাণ। একদা তার স্ত্রী উম্মে জামীল, রাসূল (সাঃ) এর যাতায়াত পতে কাঁটা দেবার জন্য কাঁটার বোঝা মাথায় করে আসছিল। সে পথে ক্লান্ত হয়ে একটা পাথরের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো।
আল্লাহর নির্দেশে একজন ফেরেস্তা তার কাঁটার বোঝাকে পিছনের দিক হতে টান দিল। ফলে সে পড়ে গেল এবং বোঝার রশি দ্বারা তার গলায় ফাঁস লেগে গেল। এতেই তার মৃত্যু হলো।

রাসূল (সাঃ) এর দুই কন্যা রুকিয়া ও উম্মে কুলসুম (রাঃ) এর বিবাহ হয়েছিল আবু লাহাবের দুই পুত্র উত্তবা ও উতাইবার সাথে। সে সময় মুশরিকদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল না। পরে এটা নিষেধ হয়। সূরা লাহাব নাযিল হবার পর লাহাব তার পুত্রদ্বয়কে বললো Ñ “মোহাম্মদের কণ্যাদ্বয়কে তালাক দিতে। উতাইবা, রাসূলের পবিত্র দরবারে হাজির হয়ে তার অপারগতা প্রকাশ করে তালাক দেয়। কিন্তু উতবা তার স্ত্রীকে অপমান করে তালাক দেয়। এতে রাসূল (সাঃ)দুঃখ পেয়ে বলেছিলেন Ñ“হে আল্লাহ! তোমার কোন হিংস্র জন্তুকে উতবার উপর জয়ী কর। এ কথা শুনে লাহাব তার পুত্রের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে লাগলো। কিছুদিন পর ব্যবসার জন্য উতবা বাইরে গেলে; লাহাব তার চাকরকে সর্বদা খেয়াল রাখার জন্য বলেছিল এবং সবার মধ্যবর্তী স্থানে শুতে বলেছিল।

এক রাতে কোথাও বিশ্রাম নেবার সময় নিকটবর্তী জঙ্গল হতে একটা বাঘ এসে নিদ্রিত অবস্থায় সবাইকে শুকতে শুকতে উতবার বুক চিরে ফেললো। আল্লাহ বলেন; হে রাসূল! তোমার আগেও অনেক রাসূলকে ঠাঠ্রাÑবিদ্রæপ করা হয়, পরিণামে তারা যা নিয়ে ঠাঠ্্রা করত তাই বিদ্রæপকারীদেরকে ঘিরে ফেলেছিল।” (সূরা ঃ আম্বিয়া ঃ ৪১)

কোরান ও হাদীস হতে জ্ঞান পেয়ে বিশ্বের সমস্ত ইসলামী আইনবিদ ও শরীয়তের ইমামরা একমত যে, “ কোন ব্যক্তি আল্লাহপাক কে মন্দ বললে পরে তওবা গৃহীত হবার ব্যবস্থা ইসলামে আছে। কিন্ত কোন ব্যক্তি আল্লাহর এ মহান বন্ধুর পবিত্র ও মহান মর্যাদায় সামান্যতম মান হানিকর কথা বললে মৃত্যু পর্যন্ত তার তওবা গৃহনীয় হবে না। যদিও সে ভুলবশতঃ অজানা হেতু বলে থাকে।

ওলামাগণ, এ বিষয়ে আরও একমত যে; “হুজুর (সাঃ) কে গালী প্রদানকারী, মানÑসম্মান ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টাকারী, নিঃসন্দেহে কাফের এবং তারা তার কুফরী ও শাস্তি হওয়া প্রসঙ্গে সন্দেহ পোষণকারী, তারাও কাফের।

এ নিয়ম তাঁর রাসুল (সাঃ)। জীবিত কালে এবং দুনিয়া হতে চলে যাবার পরও। রাসূল (সাঃ) হযরত আবু বকরকে সাথে নিয়ে মক্কা ছেড়ে মদীনায় হিজরত করার সময় সাওর পর্বতের গুহায় কিছু সময় আশ্রয় নেয়। গুহার ভেতর ঢুকে আবু বকর (রাঃ) দেখেন ভেতরে অনেকগুলো গর্ত। সাথের রুমাল ছিড়ে গর্তগুলো বন্ধ করে দেন। কিন্তু একটা ছিদ্র বা গর্ত রুমাল শেষ হওয়ায় নিজ পায়ের গুড়ালি দিয়ে বন্ধ করেন। এ জন্য যে সাপ থাকতে পারে। একটা সাপ তার পায়ে ছোবল মারে। যে পায়ের উরুতে মাথা রেখে রাসূল ঘুমাচ্ছিলেন। নবীর ঘুম ভেংগে যাবে তাই উনি পা সরান নায়। বিষের যন্ত্রনায় হযরত আবু বকর (রাঃ) এর চোখে পানি এসে যায়। তার এক ফোটা পড়ে নবীর গায়ে।

এতে দয়াল নবীর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আবু বকর কে বললেন কাঁদছ কেন। আবু বকর (রাঃ) বললেন; হুজুর পায়ে ছোবল মেরেছে সাপে। নবীজি নিজ পবিত্র থুথু পায়ে লাগিয়ে দেন। আবু বকর (রাঃ) সুস্থ হলেন। এদিকে সাপটি বাহির হয়ে এসে নবীজি কে সালাম দিয়ে বলে; আমার নাম হারিছা। আমি মানুষ ছিলাম। তৌরাত কিতাব হতে আপনার নাম মোবারক মুছে ফেলায়, আমার এ দুঃখজনক অবস্থা। তাই বহু পথ; বহু কষ্টে অতিক্রম করে আপনাকে দেখার আশায়ও ক্ষমা চাইতে এ গর্তে অপেক্ষা করছি। কিন্তু আবু বকর, গর্তের মুখ বন্ধ করে রাখায়Ñবাধ্য হয়ে ছোবল মেরেছি।

আপনি, আমাকে ক্ষমা করে দয়া করে মুক্তি ব্যবস্থা করে দিন। তখন; দয়াল রাসূল দোয়া করলেন। হারিছার আত্মা মানব আত্মায় রূপ নিল। সে মুক্তি পেল। ((দ্রঃ আলকোরানের মারেফাত তত্ত¡ÑপৃÑ৪২৮)
আসুন, হে মানুষ ভাই, মানুষের নবী; সৃষ্টির নবীর প্রতি সম্মান দেখাই। তা না হলে এ দুনিয়া অথবা পরকালে আত্মার মুক্তি সম্ভব নয়। কথায়; কাজে এ শেষ নবী ও বিশ্বনবী (সাঃ) কে ভালোবাসি; সম্মান অক্ষুন্ন রাখি। আল্লাহ, আমাদের দয়া করুন।

লেখক : গবেষক, শিক্ষাবিদ, তরীবত পন্থী।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন