শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। শনিবার শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নালিতাবাড়ী উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁনসহ ৫ জনকে জেলা আ. লীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কার করা অন্য ৪ জন হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল হক ও নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ।
এ ছাড়া নকলা উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর স্থলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. বুরহান উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
শনিবার শেরপুর জেলা আ. লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাতে জেলা আ. লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সভার এসব সিদ্ধান্তসমূহ সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়। শহরের চকবাজার জেলা আ. লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আ. লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় কার্যনির্বাহী কমিটির ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫২ জন উপস্থিত ছিলেন।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল, জাতীয় পরিষদ সদস্য মো. খোরশেদুজ্জামান চেয়ারম্যান, সহ-সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন মিনাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল বক্তব্য রাখেন।
এ ছাড়াও কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা, সরকার গোলাম ফারুক, শাহ মো. বুরহান, সদর উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান, ঝিনাইগাতী উপজেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু, শ্রীবরদী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম লিটন, শহর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল জানান, সভায় ৫টি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- ১. মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর জেলা থেকে প্রত্যাহার। ২. শেরপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক চাঁন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, নালিতাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিয়াউল হক মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক মো. ফজলুল হক ও নকলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে শেরপুর জেলা আ. লীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ৩. দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে নালিতাবাড়ী উপজেলা আ. লীগের কমিটির কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে। ৪. দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় নকলা উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জিন্নাহকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তার স্থলে ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. বুরহানকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫. প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেরপুর জেলা আ. লীগের নেতাদের সাক্ষাতের সময় আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আ. লীগের দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলে প্রভাব বিস্তার নিয়ে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগে বিরাজ করছে অস্থিরতা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পুরনো দ্বন্দ্ব কাটিয়ে শেরপুর আওয়ামী লীগে সুবাতাস বইতে শুরু করে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কমিটি গঠন, স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নসহ বিভিন্ন কারণে দলে বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর জেলা আ. লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পর পরই জেলা আ. লীগ মূলত: দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। জেলা আ. লীগের সভাপতি হুইপ আতিক এমপি ও শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর মাঝে ক্ষমতার ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। আতিক বিরোধী নেতৃবৃন্দ মতিয়া চৌধুরীর ছায়াতলে আশ্রয় নেন। মতিয়া’র আশীর্বাদ ধন্য নেতৃবৃন্দ জেলা আ. লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে কেন্দ্রীয় আ. লীগের নিকট আপিল করেন। কিন্তু অদ্যাবধি সেই আপিলের কোন সুরাহা না হওয়ায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যেকার বিরোধ দিন দিন বাড়তেই থাকে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলা আ. লীগের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ ধারণ করে এবং দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন।
এদিকে, ২০১৭ সালের ১০ নবেম্বর জেলা আ. লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় পর পর ৫ সভায় অনুপস্থিত থাকায় দলের ৫ নেতাকে শোকজ (কারণ দর্শাও) নোটিশ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে তাদেরকে শোকজ করার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কেউই শোকজের জবাব দেননি। ওই সভায় জেলা আ. লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির ১নং সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী পর পর ৫ সভায় অনুপস্থিত থাকায় তাঁর বিষয়ে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবরে সভার কার্যবিবরণী প্রেরণ করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন