সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সোমবার রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১২

অভ্যন্তরীণ ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৮, ১০:০৯ এএম | আপডেট : ১১:০৯ এএম, ২২ মে, ২০১৮

সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কুমিল্লা, নীলফামারী, চট্টগ্রাম, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, দিনাজপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন
 
দেশের বিভিন্ন জেলায় গত আট দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেন ৪২ জন। তাদের মধ্যে ৩৪ জন মাদক ব্যবসায়ী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করেছে।
 
চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে আলমডাঙ্গা শহরের রেলস্টেশনের পাশে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কামরুজ্জামান ওরফে সাধু (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।
পুলিশের ভাষ্য, কামরুজ্জামান জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তার বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নে।
 
বন্দুকযুদ্ধের স্থান থেকে একটি পিস্তল, তিনটি গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ। তারা বলছে, এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছে।
 
সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-সদর) আহসান হাবীবের ভাষ্য, বিপুল পরিমাণ মাদক আসার খবর পায় পুলিশ। এই খবরের ভিত্তিতে আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গতকাল দিবাগত রাতে স্টেশনের পাশে অবস্থান নেয়। দিবাগত রাত একটার দিকে সন্দেহভাজন কয়েকজনকে থামতে বলে পুলিশ। এ সময় সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। বন্দুকযুদ্ধে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা।
 
পুলিশ বলছে, বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হামিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল মাসুদ রানা আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
 
আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, কামরুজ্জামানের লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে। কারাভোগের পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরে আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। 
 
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় গতকাল দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই ব্যক্তি নিহত হন। তারা হলেন শহরের নিচু কলোনি এলাকার জনি (৩৪) ও ইসলামবাগ এলাকার শাহিন (৩২)।
 
পুলিশ বলছে, জনি ও শাহিন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। বন্দুকযুদ্ধের স্থান থেকে ইয়াবা ও ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে।
 
এলাকাবাসীর ভাষ্য, জনি ও শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নিয়ে গিয়েছিল। আজ মঙ্গলবার ভোরে গোলাহাট এলাকায় তাদের লাশ পাওয়া যায়।
 
সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পালের ভাষ্য, আটকের পর জনি ও শাহিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় জসিয়ার রহমান ও নূর বাবু নামে দুই মাদক ব্যবসায়ী মাদকের বড় চালান নিয়ে আসবেন। এই তথ্যের সূত্র ধরে আটক দুজনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি চালায়। ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনায়। পুলিশ পাল্টা গুলি করে। এ ঘটনায় জনি ও শাহিন নিহত হন। আহত হন পুলিশের তিন সদস্য।
 
পুলিশ জানায়, নিহত দুজনের লাশের ময়নাতদন্ত হবে। এ জন্য লাশ দুটি মর্গে পাঠানো হবে।
 
দিনাজপুর অফিস জানায়,  বিরামপুর পৌর শহরের মনিরামপুর এলাকায় গতকাল দিবাগত রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রবল হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, প্রবল হোসেন মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তার বাড়ি উপজেলার দক্ষিণ দামোদরপুর-বাসুপাড়া গ্রামে। বাবার নাম খলিলুর রহমান।
 
পুলিশের ভাষ্য, ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিনটি গুলি, পাঁচটি ককটেল ও ৯২ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছে।
 
দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. মিজানুর রহমানের ভাষ্য, গতকাল দিবাগত রাতে পুলিশের একটি দল মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে মনিরামপুর এলাকায় যায়। এ সময় ১০-১২ জন মাদক ব্যবসায়ী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এতে মাদক ব্যবসায়ী প্রবল হোসেন ঘটনাস্থলে নিহত হয়। আহত হয় পুলিশের তিন সদস্য।
 
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সবুর জানান, ময়নাতদন্তের জন্য প্রবলের লাশ দিনাজপুরের এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
 
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শরীফ ও পিয়ার আলী নামে তালিকাভুক্ত শীর্ষ দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে জেলা সদরের অদূরে বিবিরবাজার অরণ্যপুর (বাজগড্ডা) এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২ রাউন্ড গুলিসহ একটি রিভলবার, একটি পাজেরো জিপ, ৫০ কেজি গাঁজা এবং ৫০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানকালে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুপ কুমারসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া।
 
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকের একটি বড় চালান আসছে, গোপন সূত্রে এমন খবর পেয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমনের নেতৃত্বে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া, ডিবির ওসি নাছির উদ্দিন মৃধা, কোতোয়ালির ওসি (তদন্ত) মো. সালাহ উদ্দিনসহ ডিবি পুলিশের একাধিক টিম ওই এলাকায় অবস্থান নেয়।
 
রাত পৌনে ১টার দিকে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। অভিযানে অংশ নেয়া ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম জানান, ঘটনাস্থলে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শরীফ (২৬), পিয়ার আলী (২৮) ও সেলিম গুরুতর আহত হন।
 
তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার মাদক ব্যবসায়ী শরীফ ও পিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতদের মধ্যে মো. শরীফ জেলা সদর দক্ষিণ উপজেলার মহেষপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৫টি মাদক মামলা রয়েছে।
 
আর নিহত পিয়ার আলী আদর্শ সদর উপজেলার শুভপুর গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে ১৩টি মাদকের মামলা রয়েছে। এদিকে ওই অভিযান চলাকালে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) রুপ কুমার, এসআই শাহ আলম, কনস্টেবল তানভীর এবং ডিবির এএসআই শাহীনুর আলম আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
 
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরীর বায়েজিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শুক্কুর আলী (৪৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন। র‌্যাব ৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মিমতানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার বাঞ্ছারামপুরে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ধন মিয়া (৩৫) নামে একজন নিহত হয়েছেন।
 
র‌্যাব-১০ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, র‌্যাব সদস্যরা মঙ্গলবার ভোররাতে বাঞ্ছারামপুরে উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় অবস্থান নেন।
 
এ সময় নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি মাদকের চালানসহ ধন মিয়া সেখানে পৌঁছলে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলিবর্ষণ করলে র‌্যাবও পাল্টা গুলি করে। এ সময় বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। নিহত ধন মিয়া উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে। তার স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করা হয়েছে।
 
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, ফেনীতে র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু (৪৯) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
 
সোমবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লেমুয়া নামক স্থানে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
 
মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার রুপকানিয়া গ্রামের হাজি আবদুল করিমের ছেলে।
 
র‍্যাবের দাবি, মঞ্জুরুল আলম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম জেলায় ডাকাতি ও মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
ফেনীস্থ র‍্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক সাফায়াত জামিল ফাহিম জানান, রাতে র‍্যাব ফেনী ক্যাম্পের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফেনীর লেমুয়ায় অভিযান চালায়।
এ সময় মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুর নেতৃত্বে একদল মাদক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন। পথে লেমুয়া এলাকায় পৌঁছলে উপস্থিতি টের পেয়ে তারা র‍্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র‍্যাবও পাল্টা গুলি চালালে মঞ্জু গুলিবিদ্ধ হন।
 
গুলিবিদ্ধ মঞ্জুরুলকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
 
ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, ৫টি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এই র‍্যাব কর্মকর্তা।
 
নেত্রকোনা জানান, নেত্রকোনা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আমজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
 
সোমবার দিনগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের বড়য়ারী এলাকায় এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
 
পুলিশের দাবি, নেত্রকোনা শহরের পশ্চিম নাগড়া এলাকার বাসিন্দা আমজাদ এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।
 
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, সোমবার রাতে আমজাদ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে সদর উপজেলার বড়য়ারী এলাকায় অভিযান চালানো হয়।
 
এ সময় আমজাদের সহযোগীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা জবাব দিলে উভয়পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়।
 
পরে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ আমজাদ হোসেনকে উদ্ধার করে থানায় নেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
 
বন্দুকযুদ্ধে সদর থানার উপ-পরিদর্শক মহসিন, মামুন, মকবুল ও কনস্টেবল মালেক আহত হয়েছেন। তাদের নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
২২ মে, ২০১৮, ৭:৫২ এএম says : 0
Good, to be continue until single one. General people's entier support
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন