বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উপ সম্পাদকীয়

ভূমিকম্প : প্রয়োজন সতর্কতা ও সচেতনতা

প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী : প্রাচীনকাল থেকে ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের মধ্যে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের সীমাহীন চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বহু লোকের আজও এ অন্ধবিশ্বাস মনের মধ্যে সদা জাগ্রত রয়েছে যে পৃথিবীটা চারটা বিশালাকৃতি হস্তীর ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং ওই হস্তীরা যখন গা নাড়াচাড়া করে ওঠে তখনই পৃথিবীটা কেঁপে ওঠে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। অবশ্য এরকম ধারণার আদৌ কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অনেকে বলেন এসব কুসংস্কার। ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রধান কারণ হল পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরের শিলাখ-ের স্থিতিস্থাপকীয় বিকৃতি। তদুপরি বিংশ শতাব্দীতে বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্প সৃষ্টির অন্য এক কারণও উদ্ভাবন করেছেন, সেটা হল-জলাশয় বেষ্টিত কম্পন।
ভারতের মহারাষ্ট্রের শিবাজিসাগর জলাশয়ের সন্নিকটবর্তী অঞ্চলে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ৬.৫ রিখটার স্কেলের মাপে বেশ কয়েকটা ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বিশ্বের বেশ কিছু জলাশয় অঞ্চল যেমন- ভাগরাও লেক (সুইজারল্যান্ড), মারাথান লেক এবং ক্রেমাস্টা লেক (গ্রিস), গ্র্যান্ড ভেল লেক, (ফ্রান্স), লেক মিয়াড (যুক্তরাষ্ট্র), কার্ভিরা লেক (রোডেসিয়া-জিম্বাবুয়ে) ইত্যাদি এসব অঞ্চলে এ রকম ভূমিকম্প হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও আগ্নেয়গিরির উৎপত্তির ফলে চুনাপাথরে দ্রবণ ক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট গহ্বরে স্তর পতনের ফলে ভূমিকম্পের উৎপত্তির সম্ভাবনা থাকে। অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে ভূমিকম্পের সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জসহ ফিলিপাইনস অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। ১৮৮৩ সালে জাভার ক্রকাটোয়ায় অগ্ন্যুৎপাতের সঙ্গে ঘন ঘন ভূকম্পন হয়েছিল তবে বেশিরভাগ ভূমিকম্পের মুখ্য কারণ যে ভূ-অভ্যন্তরের সংঘটিত ক্রিয়াকা-ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সে কথা আজ প্রায় সুনিশ্চিত।
১৯০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিকোতে সংঘটিত প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পর বিজ্ঞানী মিঃ এইচএফ রিড শিলাস্তরের স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেন, যখন শিলাস্তরের নিজস^ প্রতিরোধী ক্ষমতার ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি হয় তখনই সে শিলাস্তর সঞ্চিত চাপ মুক্ত করতে শিলাচ্যুতির মাধ্যমে ভূ-আন্দোলনের সৃষ্টি হয় এবং তখনই ভূমিকম্পের উৎপত্তি ঘটে। এভাবে ভূস্তরে ঘটা বিচ্যুতির জন্যই ক’বছর আগে ভারতের গুজরাটে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হয় বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন।
ভূমিকম্প উৎপত্তির কারণ অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা সক্ষমতা লাভ করেছেন এবং সে সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত ভূমিকম্প মাপক যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের উপকেন্দ্র (epicentre) নির্ণয় সম্ভবপর হয়ে উঠেছে এবং এর দ্বারা সম্ভাব্য ভূমিকম্পের স্থল বা বলয় চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। ভূকম্পের এ বলয় পৃথিবীতে দুটো অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে আছে যেমন- (১) প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পূর্ব উপকূলের রকি, অ্যান্ড্রিজ ইত্যাদি পর্বত শ্রেণী অঞ্চল এবং পশ্চিম উপকূলের জাপান, ফিলিপাইন ইন্দোনেশিয়া দ্বীপপুঞ্জ, কেরিবিয়ান উপকূল, নিউগিনি, নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণ কুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে (Circum Pacific Belt সংক্ষেপে CPB)। (২) ভূমধ্যসাগরের চারদিকে আল্পস ককেসাস ইত্যাদি পর্বতের আশপাশে, হিমালয় পর্বতমালার চারপাশ, মায়ানমার, নেপাল, আসামসহ কাশ্মীর ও পশ্চিম ভারত এবং পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এ বলয়ের অন্তর্ভুক্ত।
ভূ-তাত্ত্বিকরা ভূমিকম্পের আন্তর্জাতিক বলয়ের ও ভূমিকম্পের প্রাবল্যের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের পাঁচটি ম-লে বিভক্ত করেছেন। এগুলো হল (১) জম্মু কাশ্মীরের এক বৃহৎ অংশ (২) হিমাচল প্রদেশসহ মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের একাংশ (৩) উত্তরপ্রদেশের পশ্চিম পাহাড়ি অঞ্চল (৪) বিহার, সিকিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যসমূহ (৫) আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং বাংলাদেশ।
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস : ভূমিকম্পের সম্ভাব্য স্থান নির্ণয়ে বিজ্ঞানীরা সক্ষম হলেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস প্রদান ও প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণে এখনও তেমন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে সক্ষম হননি। তবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য কতকগুলো পন্থার উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেগুলো হল (ক) ছোট ছোট মধ্যম আকারের ভূমিকম্প বরাবর সংঘটিত হওয়া (খ) প্রাকৃতিক ও গৌ তরঙ্গের গতিবেগের ব্যবধান (গ) পূর্বে সংঘটিত হয়ে যাওয়া ভূমিকম্পের সময়ের ব্যবধান (ঘ) ভূমিকম্পের পূর্বে নির্দিষ্ট অঞ্চলে ফাটলের সৃষ্টি এবং শিলাস্তরের আয়তন বৃদ্ধি (ঙ) ভূমিকম্পের পূর্বে জীবজন্তুর অস্বাভাবিক আচরণ এবং প্রাকৃতিক পরিবর্তন। বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যানুসারে ভূমিকম্পের পূর্বে ভূগর্ভে অতি মৃদুকম্পন সঞ্চারিত হয় যা শুধুমাত্র সংবেদনশীল পশুপক্ষীরা অনুভব করতে পারে। তাই ওই সময় ওদের মধ্যে অস্বাভাবিক আচার-আচরণ লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়া, ভূমিকম্পের পূর্বে পানিপৃষ্ঠের পরিমাপের বিভিন্ন তারতম্য ঘটে। এসব বিষয়ের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯৭৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি চীনের হেইচেঙ্গে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়। ভূতাত্ত্বিকদের মতে, প্রায় ৪০ শতাংশ উচ্চমানের ভূমিকম্পের পূর্ব-প্রঘাত অনুভূত হয়। ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট আসামে সংঘটিত প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পূর্ব-প্রঘাত অনুভূত হয় ১২ আগস্ট। চীনের হেইচেঙ্গে সংঘটিত ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সঠিক হলেও ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই সে দেশের তাঙ্গশানে সংঘটিত বিশ্বের বৃহত্তম প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়নি। সে ভূমিকম্পের পরিমাপ ছিল ৭.৮ রিখটার স্কেল, এতে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে। সরকারি মতে, সাত লক্ষ পাঁচ হাজার। সুদীর্ঘকাল ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সম্পর্কীয় গবেষণা চালাচ্ছেন এ রকম ত্রিশ জনের একটি গোষ্ঠীর সদস্য ইতালির ত্রিয়েস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূকম্পীয় বিভাগের অধ্যাপক বিশিষ্ট ভূকম্পবিদ মিঃ পাঞ্জার অভিমত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তার মতে ‘ভূমিকম্পের বিষয়ে এখনও আমরা প্রাক- নিউটন স্তরেই রয়েছি।’
১৮৮০ সালে জন মিলন নামের একজন বাস্তুকার ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র (Seismograph) উদ্ভাবন করেন এবং তখন থেকেই ভূমিকম্প নিয়ে বৈজ্ঞানিক চর্চার উদ্ভব হয়। বিগত শতাধিক বছর যাবৎ ভূমিকম্পের পূর্বলক্ষণ সমূহ ও পূর্বাভাস নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান এবং রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণা করে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, ১৯৭৫ সালের পরও একটি মধ্যম এবং ছয়টি বৃহৎ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ১৯৬০ সালে গামবেল নামের জনৈক বিজ্ঞানী একটা নতুন পরিসংখ্যান তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন এবং তাতে দেখা যায় বৃহৎ ভূমিকম্পের সংখ্যা ক্ষুদ্র ভূমিকম্পের চেয়ে অনেক কম। গুটেনবার্গ নামের একজন বিজ্ঞানী ভূমিকম্পের সংখ্যা এবং রিখটার স্কেলে দেখা ভূমিকম্পের মাত্রার মধ্যে একটা সমীকরণ উদ্ভাবন করেন যার দ্বারা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া কিছুটা সম্ভবপর হয়।
১৯৭৯ সালে রিকিটেক নামের আরেক বিজ্ঞানী একটা পন্থা উদ¢াবন করেন যার সাহায্যে ভূমিকম্পের ঘুরে আসার সময় নির্ণয় করা যায়। ওই পরিসংখ্যানের মাধ্যমে ৭ রিখটার স্কেলের উপরে সংঘটিত ভূমিকম্পে আক্রান্ত অঞ্চলে ফের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা বা পূর্বাভাস দেওয়া কিছুটা সম্ভবপর হয়েছে। ১৯৬৪ সালে জাপানের নিগটা অঞ্চলে একবড় ভূমিকম্প হয়েছিল, যার রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭.৫। টুসনেজি বিকিটেকি নামের জনৈক জাপানি বিজ্ঞানী লক্ষ্য করেছেন বিশ বছর যাবৎ ওই স্থানের উচ্চতা ক্রমে বেড়ে বেড়ে হঠাৎ কমতে শুরু করেছিল এবং সে সময়েই ওই স্থানে ভূমিকম্প সংঘটিত হল। ওই বিজ্ঞানীর মতে, ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার পূর্বে দুই ধরনের তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। ওই দুটি তরঙ্গের সাধারণ অনুপাত হল ১:৭৩। কিন্তু ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার বহু আগে থেকেই এ অনুপাত কমতে শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্লু মাউন্টেন লেক নামের একটি অঞ্চলে মাঝারি মাপের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন কেনীয়বাসী মিঃ যশ অগ্রবাল এবং সে পূর্বাভাস অনুসারে ১৯৭৩ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় রিখটার স্কেলে ২.৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। অগ্রবাল তখন আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছিলেন। তিনি যে পদ্ধতিতে ওই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন সে পদ্ধতি ১৯৬৯ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন। ওই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে পরে California Institute of Technology-i এক দল বিজ্ঞানী ক্যালিফোর্নিয়ার রিভার সাইড নামক স্থানে একটা ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন এবং সে পূর্বাভাস অনুসারে নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময় ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ভবিষ্যদ্বাণী মতে ভূমিকম্পের রিখটার স্কেলের মাত্রা সঠিক হয়নি।
ভারতের হায়দরাবাদের National Geophysical Research Institute--এর সঞ্চালক ডঃ হর্ষকুমার গুপ্তা একজন সহযোগীর সাহায্যে শিলং অঞ্চলে ভূমির গতিবেগের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৯৮০ সালে ভবিষ্যদ্ববাণী করেছিলেন যে মেঘালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের ভূমির আয়তন প্রসার ঘটার কারণে উত্তর-পূর্ব ভারতে একটা বৃহৎ ভূমিকম্প ঘটতে পারে। তবে তার সঠিক সময় ক্ষণ দিতে পারেননি। ওই ভবিষ্যদ্বাণীর প্রায় চার বছর পর ১৯৮৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর রিখটার স্কেলে ৬.১ মাত্রার এক ভূমিকম্প উত্তর-পূর্ব ভারতকে কাঁপিয়ে তুলেছিল এবং ওই ভূমিকম্পের প্রাবল্য ছিল আসামের কাছাড় এবং বাংলাদেশের সিলেট জেলায় সর্বাধিক। ঐ সময় এসব জেলায় বেশ কিছু লোকের মৃত্যু হয় এবং অনেক লোক গৃহহারা হয়। পরে ডঃ হর্ষকুমার গুপ্তার গবেষণার প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তি স্থল (epicentre) ছিল ১৯৮০ সালে তাঁরই উল্লেখিত মেঘালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের ওই অঞ্চলটি। ১৯৭৭ সালে (World Congress on Engineering Seismology) ভারতের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ জয়কৃষ্ণ ঘোষণা করেন, আগামী দশকে উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি বৃহৎ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে। ১৯৭৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হনলুলুতে অনুষ্ঠিত Strong Motion Instrumentation সম্পর্কীয় আন্তর্জাতিক কর্মশালায় আসামও উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে পৃথিবীর ছয়টি বৃহৎ ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আগস্ট ২০০১ সালের আমেরিকার ‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিনের একটি সংখ্যায় আমেরিকা ভারতের ঐ তিনজন বিশিষ্ট ভূ-তত্ত্ববিদের একটি যৌথ সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এ রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বত্র সম্ভাব্য ভূমিকম্প নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। সরকারি ও বেসরকারি স্তরে বিভিন্ন পন্থা উদ্ভাবনের কথা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে যাতে সম্ভাব্য ভূমিকম্পের করাল গ্রাস থেকে জনজীবন ও সম্পত্তি কিছুটা হলেও রক্ষা করা যায়। ওই সমীক্ষার রিপোর্টটি তৈরি করেন আমেরিকার কলোরাডো ও বোলডার বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ভূতত্ত্ববিদ, যথাক্রমে রগার বিলহাস ও পিটার মলনার এবং ভারতের বাঙ্গালোরের আইআইএ-র বিশিষ্ট ভূতত্ত্ববিদ প্রফেসর বিনোদ গোড়। ওই ভূতত্ত্ববিদরা সুদীর্ঘকাল হিমালয়ের বিভিন্ন পর্বত শিখরে আরোহণ করে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখেন, হিমালয়ের শিলাস্তরের পে-টের দুটো সীমার মধ্যে ফাঁকের (ঝবরংসরপ মধঢ়) কোনও বিচ্যুতি ঘটেনি বিগত দুইশ বছর সময়ের মধ্যে তাই ভূতত্ত্ববিদরা অনুমান করেন হিমালয়ের শিলাস্তরের বিচ্যুতি ঘটতে চলেছে অতি নিকট ভবিষ্যতে এবং তখন এক ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে গোটা হিমালয় বলয়ে যা বিগত দুইশ বছরের মধ্যে সংঘটিত ভূমিকম্পের প্রাবল্যের চেয়েও হবে প্রায় দশ গুণ বেশি। প্রায় পাঁচ কোটি জনবসতি অঞ্চলজুড়ে এ ভূমিকম্পের প্রসার ঘটবে। রিপোর্টে প্রফেসর বিনোদ গোড় বলেন, ‘This is not a prediction, it is an assessment based on logical assumptions and buttressed by arguments based on field data.’ ওই ভূতত্ত্ববিদরা যদিও বিগত দুইশ বছর সময়ের মধ্যে না ঘটা এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের সম্ভাব্যতার কথা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন কিন্তু কবে সে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হবে সে বিষয়ে সঠিক কোনও সময়কাল দিতে সক্ষম হননি।
পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বহু প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। মানব সভ্যতা সৃষ্টি পরে খিস্টপূর্ব ৭০০ সালের পরবর্তীকালে প্রায় ১,০০০টা প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের তথ্য পাওয়া যায়। ৩৪২ সালে তুরস্কর আন্টাকিয়ায় এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে মারা যায় প্রায় ৪,০০০। সর্বাধিক লোকের মৃত্যু ঘটে ১৫৫৬ সালের চীনের চাংচি অঞ্চলে সংঘটিত এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে। মৃতের সংখ্যা ছিল ৮ লক্ষ। ১৯২০ সালে জাপানে সংঘটিত এক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে মারা যায় ২ লক্ষ লোক। ১৯২৩ সালে জাপানে সংঘটিত আরেক প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় প্রায় দেড় লক্ষ লোকের এবং ধ্বংস হয় প্রায় পাঁচ লক্ষেরও অধিক ঘরবাড়ি।
এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত ভূমিকম্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ১৯৩৫ সালে পাকিস্তানের বালুচিস্তান, ১৯৮৮ সালে আর্মেনিয়া, ১৯৯০ ও ১৯৯৭ সালে ইরান, ১৯৯০ সালে ফিলিপাইনস, ১৯৯১ সালে আফগানিস্তান, ১৯৯২ সালে ইন্দোনেশিয়া, ১৯৯৫ সালে জাপান এবং ১৯৯৯ সালের ১৭ আগস্ট তুরস্কে সংঘটিত একটি প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প, মৃত্যু হয় প্রায় ১৬,০০০ লোকের। স্যার এডওয়ার্ড গেইটের লেখা ‘অ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ অংংধস’ গ্রন্থে আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংঘটিত বহু ভূমিকম্পের বিস্তৃত তথ্য পাওয়া যায়। ওই গ্রন্থে উল্লেখ করা মতে ১৫৪৮, ১৫৯৬, ১৬৪২, ১৬৯৬ এবং ১৭১৪ সালে আহোম রাজা রুদ্র সিংহের রাজত্বকালে আসামে প্রবল ভূমিকম্প হয় এবং বহু লোক হতাহত হয়। বিগত শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পগুলো সংঘটিত হয় যথাক্রমে ১৯৮১, ১৯৩০, ১৯৫০, ১৯৬৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯৫ সালে।
১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে অবিভক্ত আসামের কামরূপ, গোয়ালপাড়া, দরং, নওগা এবং মেঘালয়ের শিলং ও বাংলাদেশের সিলেট জেলার প্রায় ৩,৮১,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে বলতে গেলে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। ওই ভূমিকম্পে বরপেটা জেলার মন্দিরা, সরুক্ষেত্রী, পালহাজী, সর্থেবারী ইত্যাদি অঞ্চলকে জলাভূমিতে পরিণত করে। ওই ভূমিকম্পের চেয়ে আরও প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সংঘটিত হয় ১৯৫০ সালের ১৫ আগস্ট অপরাহ্নে। রিকটার স্কেলে যার মান ছিল ৮.৭। ওই প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে আসামের সুবর্ণশিরি, দিহিং এবং লোহিত নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয় এবং ব্যাপক ভূমিখলনের ফলে কৃত্রিম হ্রদের সৃষ্টি হয়। ডিব্রুগড় শহরের বহু ঘর-বাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ওই শহর সংলগ্ন ব্রক্ষপুত্র নদীর তলদেশ প্রায় ৩.৪ মিটার উঁচুতে উঠে যায়। শদিয়া শহরের নিকটবর্তী এবং নদীর তলদেশ প্রায় ছয় মিটার উঁচুতে উঠে পড়ে যার ফলে নদীর পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পায় এবং এর ফলে বর্ষার প্রবল বন্যার কবলে পড়ে উজান আসামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
আসামে ঘটে যাওয়া প্রবল ভূমিকম্পের আগে ও পরে ভারতে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। সে গুলোর মধ্যে যেমন কুমায়ুন (১৮০৩), হিমাচল প্রদেশের কাংড়া (১৯০৫), কাশ্মীরের শ্রীনগর (১৯২৪)। বিহারের মুঙ্গের (১৯৩৪), (১৯৮৮) এবং ১৯৯১ সালে ২৩ অক্টোবর উত্তর কাশীতে সংঘটিত (রিখটার স্কেল ৬.১) ভূমিকম্পে প্রায় এক হাজারেরও অধিক মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৯৭ সালের ২২ মে জব্বলপুরে সংঘটিত ভূমিকম্পে পঞ্চাশ জন লোকের মৃত্যু হয় এবং বহু লোক আহত হয়। ১৯৯৯ সালের ২৩ এপ্রিল উত্তরাঞ্চলের চামলি রুদ্র প্রয়োগে ভূমিকম্পে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়। ১৯৯৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের লাটুর অঞ্চলের ভূমিকম্প (রিখটার স্কেল ৬) বিস্তর ক্ষতিসাধন করে এবং ওই ভূমিকম্পে প্রায় দশ হাজার লোকের মৃত্যু হয়।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা : এ কথা স্পষ্ট করে বলা যায় যে ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস এবং তা প্রতিরোধ করা অতীতের মত অদূর ভবিষ্যতেও সম্ভব হয়ে উঠবে না। তবে বিজ্ঞানীরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন উপগ্রহ ও অন্যান্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যে ভাবে ঝড়-বাদলের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে ঠিক সে ভাবেই হয়ত একদিন ভূমিকম্পের পূর্বক্ষণে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠতে পারে। তবে ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলের যে দিকচিহ্ন রেখা বিজ্ঞানীরা অংকিত করেছেন আজ অবধি সে দিকচিহ্ন রেখার অভ্যন্তরেই ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তাই ভূমিকম্পের করাল গ্রাস থেকে কীভাবে ঘরবাড়ি ও জন-প্রাণী রক্ষা করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা উচিত।
১৯৭৬ সালে চীনে টাংস্নেনে হওয়া বিধ্বংসী ভূমিকম্পে কমপক্ষে সাত লক্ষ লোক হতাহত হয়। প্রায় অর্ধেক লোকের মৃতদেহ পনেরো দিন পরে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। বহু লোক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয়জলের অভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সে সময় চীনে সরকার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দুর্যোগ পরিচালন (Disaster Management) ব্যবস্থা ছিল না বলেই বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। ১৯৯৩ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের লাটুরে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পরে যদিও Disaster Management গঠন করা হয় কিন্তু এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ততটা গুরুত্ব দেয়নি, যার ফলে ২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি গুজরাটে সংঘটিত বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব হয়নি এবং ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যে যথেষ্ট ত্রুটি ছিল বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
ভারতে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় এতটাই অপারদর্শী যে ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপের ভেতরে প্রাণস্পন্দন খুঁজে বের করতে সুইজারল্যান্ডের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের সহায়তা নিতে হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বাধা দেওয়ার শক্তি মানুষের নেই কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস করা সম্ভব হয় যদি দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য সরকার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রী ও জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসেন এবং এ জন্য জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এ সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই ১৯৯০-২০০০ সালের দশক ‘বিশ্ব প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতির হ্রাসকরণ দশক’ (International Decade for Natural Disaster Reduction IDRD) হিসেবে পালন করা হয়েছিল। ওই দশকে বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিচালন শাখা নিম্নলিখিত উদ্দেশ্যসমূহ নিয়ে গঠন করা হয়। (১) প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করা (২) প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ (৩) সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা যাতে বাধাগ্রস্ত হতে না পারে তার ব্যবস্থা গ্রহণ (৪) দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার অব্যবহিত পরেই তৎকালীন উদ্ধার ও সাহায্যের কাজে অগ্রসর হওয়া (৫) চিকিৎসা, পানীয়জল, খাদ্য ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যাতে দুর্যোগ হলে বাধাগ্রস্ত হতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ।
অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে ভূমিকম্পই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দুর্যোগপূর্ণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এ ভূমিকম্প অতি কম সময়ের মধ্যে বিস্তর ক্ষতি সাধন করে। ভূমিকম্প কোনও প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শুধুমাত্র আমাদের সচেতনতা ও সাবধানতার অভাবের ফলেই ভূমিকম্পে এত জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধন হয়। আসাম তথা উত্তর পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশ প্রবল ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল এবং এ অঞ্চলে যে কোনও মুহূর্তে একটা বড় ভূমিকম্প হতে পারে। এমন ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
স্মরণ রাখতে হবে, ১৮৯৭ সালের বড় ভূমিকম্পের পরে আসামে ও সিলেট অঞ্চলে ‘আসাম টাইপ’ ঘরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল যা পুরোপুরি ভূমিকম্প প্রতিরোধকারী হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বর্তমান প্রজন্মের লোকেরা ‘আসাম টাইপ’ ঘরের আবশ্যকতা প্রায় ভুলে গেছেন। রুরকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ভূমিকম্পের কম্পন প্রতিরোধকারী ঘরবাড়ি ও সেতু নির্মাণের পরামর্শ দিয়ে এক বিস্তৃত প্রতিবেদন তৈরি করেছে। জাপানে অবস্থিত International Association for Earthquake Engineering অনুষ্ঠানে ১৯৮৬ সালে ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের ঘরবাড়ি নির্মাণের বিষয়ে একটা পুঁথি প্রকাশ করেছে। ভারতের মহারাষ্ট্রে লাটুর ভূমিকম্পের পরে রাজ্য সরকারের Earthquake Engineering Rehabilitation সংস্থাও ভূমিকম্পের কম্পন প্রতিরোধকারী ঘরবাড়ি নির্মাণের বিষয়ে পথপ্রদর্শক জাতীয় পুঁথি প্রস্তুত করেছে। (মহারাষ্ট্রের পুনের Disaster Management--এর বৈজ্ঞানিক ডঃ বিনোদ মেননের মতে- ‘Civic authority in urban centres located in earthquake prone areas have to seriously inforce building regulations and adopt earthquake resistant techniques such as lintel beams retrofiting and seismic strengthening.’)
কিন্তু সাধারণত দেখা যায় Development Authority গুলো এ কথাগুলো চিন্তাভাবনা না করেই ঘরবাড়ি তৈরির ব্লু প্রিন্টের নক্সার কাগজপত্রের অনুমতি দেয়। ডঃ মেননের মতে, ১৯৯৯ সালের আগস্ট তুরস্কে হয়ে যাওয়া-ভূমিকম্পের চেয়ে ওই বছর সেপ্টেম্ব^রে টার্বাইনে হওয়া ভূমিকম্পে ক্ষতি যথেষ্ট কম। এর একমাত্র কারণ ওই দেশের ঘর, ফ্ল্যাট ইত্যাদি নির্মাণের ক্ষেত্রে নেওয়া কঠোর নিয়ম ও নির্দেশিকা পালন। ২০০১ সালের গুজরাটে ভূমিকম্পে এত ঘর-বাড়ি ধ্বংসের মূলে ছিল ঘর-বাড়ি নির্মাণে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা মেনে না চলা। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করে মহারাষ্ট্রের লাটুর শহরটি ভূমিকম্প প্রতিরোধকারী শহর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। লাটুর জেলাশাসক রাজীব জালোটা ঘর নির্মাণ বিষয়ে গর্ব করে বলেছেন- ‘‘Their houses have lintel, beams, dome shaped & roof, and thick iron netting in their construction. This Will enable them to withstand a quake of even seven on the Richter Scale.’
ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কায় অযথা আতঙ্কিত না হয়ে যাতে ভূমিকম্পের পরবর্তী দুর্যোগের মোকাবিলায় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন ও নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিধি বহির্ভূতভাবে নির্মাণ করা এবং ভূমিকম্প ডিজাইন না থাকা ঘরবাড়িগুলো শনাক্ত করে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করাও উচিত।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন