শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

তানোরে আনন্দ স্কুলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা
রাজশাহীর তানোরে আনন্দ স্কুলের সমন্বয়কারি আকতারুজ্জামানের বিরুদ্ধ ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তানোরে প্রাথমিক স্তরে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় রস্ক প্রকল্পের অর্থায়নে ১০৯টি আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু সমন্বয়কারির ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের এই মহতী উদ্যোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে। প্রকল্পের সমন্বয়কারি ও শিক্ষকরা যোগসাজশ করে ভুয়া ছাত্রছাত্রী দেখিয়ে প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ লোপাট করছে। সরেজমিন পরিদর্শন করলেই এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তানোরে দুই ধাপে ১১৭টি আনন্দ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ৮টি স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় এখন ১০৯টি স্কুল চলমান রয়েছে। এসব স্কুলে একজন শিক্ষক ও কমপক্ষে ঝড়ে পড়া ২৫ জন শিক্ষার্র্থী দেখাতে হবে। সেই হিসেবে ১০৯টি স্কুলে কমপক্ষে দুই হাজার ৭২৫ জন শিক্ষার্র্থী রয়েছে। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদিউজ্জামান জানান তানোরে প্রাথমিক স্তরের ঝরেপড়া মাত্র ৫২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ফলে সাধারণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এসব আনন্দ স্কুলে ঝরেপড়া দুই হাজার ৭২৫ জন শির্ক্ষাথী এলো কোথা থেকে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, তানোরে আনন্দ স্কুলের টিসি আকতার সাহেবের কথায় শেষ কথা। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বললেই চাকরিচ্যুত করার হুমকি দেন। তিনি শুধু ছাত্রদের টাকা না শিক্ষকদের বেতন ভাতার টাকা থেকেও কমিশন আদায় করেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আনন্দ স্কুলের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা মাথাপিছু প্রতি মাসে ৮০ টাকা করে বছরে ৯৬০ টাকা, প্রতিবছর পোশাকের জন্য ৪০০ টাকা, শিক্ষা উপকরণ ২৮০ টাকা ও পরীক্ষার ভাতা ২৪০ টাকা। প্রাথমিকের ঝরে পড়া প্রতিটি শিশুকে স্কুলগামি করতে বিশ্বব্যাংক বছরে মাথাপিছু এক হাজার ৭০০ টাকা করে ব্যয় করছে। অপরদিকে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বছরে এক হাজার ৭৪০ টাকা করে পাচ্ছেন। এছাড়াও প্রতি বছর স্কুল ঘরের ভাড়া হিসেবে ৪ হাজার ৮০০ টাকা ও মেরামতের জন্য এক হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই হিসেবে ১০৯টি স্কুলের দুই হাজার ৭২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য বছরে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪৬ লাখ টাকা ও স্কুল ঘরের ভাড়া বাবদ ৫ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা এবং মেরামতের জন্য এক লাখ ৯ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রতি বছর স্কুল ঘর মেরামতের জন্য ঘর প্রতি বরাদ্দ এক হাজার টাকা করে হলে একশ’ নয়টি স্কুল ঘরের জন্য বরাদ্দ রয়েছে এক লাখ ৯ হাজার টাকা। স্কুল ঘর ভাড়া প্রতি মাসে ৪০০ টাকা করে ১০৯টি স্কুলের মাসে ৪৩ হাজার টাকা ও বছরে ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তানোরে একশ’ নয়টি আনন্দ স্কুলে প্রায় দুই হাজার সাতশ’ ছাত্রছাত্রী দেখানো হয়েছে এসব স্কুল ঘরের ভাড়া, মেরামত ও শিক্ষার্র্র্র্র্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব আনন্দ স্কুলে খাতা-কলমে দুই হাজার নয়শ’ শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে এর অর্ধেক শিক্ষার্থীও নাই বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে আনন্দ স্কুলের টিসি আকতারুজ্জামান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সবকিছুই নিয়ম মাফিক চলছে কোনো ধরনের অনিয়ম নাই। এ ব্যাপারে তানোর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদিউজ্জামান বলেন, তাদের জরিপ অনুযায়ী মাত্র ৫৫ জন ঝরেপড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি নিজেও প্রশ্ন করেন এসব স্কুলে দুই হাজার সাতশ’ শিক্ষার্থী এলো কোথা থেকে। তিনি বলেন, আনন্দ স্কুলের বেশির টাকাই লোপাট হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন