শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

আরবি ভাষার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব

মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৮:০৮ পিএম, ২৮ মে, ২০১৮

 আরবী ভাষা শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের ধর্মীয় কর্তব্য এবং সন্তানদের আরবী শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করে দেওয়া মুসলিম পিতামাতা ও অভিভাবকদের দায়িত্ব। কোরআন তেলাওয়াত করার মত যোগ্যতা অর্জণ করা সকলেরই করণীয়। অন্তত নামাজ পড়ার মত সূরা কেরাত ও আনুষাঙ্গিক দোয়াদরূদ জানা অবশ্যই কর্তব্য। কেননা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে এসব জানা থাকলে নামাজ, রোজা ফরজ হওয়ার বয়সে কোরআনের সূরা কেরাত সহজ হয়ে যায়। নামাজের জন্য এগুলো জানা থাকা অবশ্যই অপরিহার্য জরুরী। আমাদের দেশে ধর্মীয় প্রাথমিক শিক্ষার জন্য মকতব ও ফোরকানি হাফেজিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা পূর্বে বিপুল পরিমাণ ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সংখ্যায় ভাটা পড়েছে। এনজিও গুলো সে স্থান দখল করে নিয়েছে। মুসলিম শিশু-কিশোরদের এনজিও স্কুল গুলোতে ভর্তি করার প্রবণতা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে ওরা ধর্মীয় ও কোরআন শিক্ষা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও দেশের লাখ লাখ মসজিদ-মকতবে কোরআন শিক্ষা প্রচলিত, ব্যহত হয়নি। 

হাজার হাজার মাদ্রাসায় কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি অর্থ-ব্যাখ্যা বলা হয়, কোরআনের তফসীর পড়ানো হয়। যার ফলে অধিক জ্ঞান লাভ করা ছাত্র সমাজের পক্ষে সহজ হয়ে উঠছে। এ কোরআনী ভাষা তথা আরবী শিক্ষার জ্ঞান এ দেশের মাদ্রাসা পড়–য়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও ধর্ম চর্চার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। এসব মাধ্যমের সহযোগিতায় সাধারণ মুসলমানগণ উপকৃত হলেও কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষা দেওয়ার বাস্তব কোন ব্যবস্থা এরা করেছেন কিনা আমাদের জানা নেই, করে থাকলে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।
সর্বস্তরে আরবী ভাষা চর্চা, অধ্যয়ন ও গবেষণা ইত্যাদির ক্ষেত্রে এক উজ্জল সম্ভাবনার প্রতীক হচ্ছে আরবী বিশ^বিদ্যালয় কায়েম হওয়া। শত বছরের এ পুরাতন দাবি দ্রæততার সাথে পূরণ হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে ইনকিলাব সম্পাদক এ.এম.এম. বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন’র বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং শেখ হাসিনা সরকারের বদওলতে।
আনন্দ ও আশার কথা যে, নব প্রতিষ্ঠিত আরবী বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করার পর কাল বিলম্ব না করে যে উৎসাহব্যঞ্জক বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নিয়েছে, মাদ্রাসাছাত্রদের আরবী চর্চা, অনুশীলনের জন্য আরবীতে উপস্থিত বক্তৃতা এবং লিখিত রচনা প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করে মাদ্রাসা ছাত্র সমাজে দারুণ সাড়া জাগিয়েছে। এ জন্য ইসলামী আরবী বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
প্রসঙ্গত: আরবী ভাষার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও প্রয়োজনীয়তার ওপর সামান্য আলোকপাত করা জরুরী মনে করি। আমাদের দেশে আরবী ভাষা শেখা এবং শিক্ষা দেওয়ার যে অনুশীলন আবহমানকাল হতে বিদ্যমান তা সকলের জানা। আরবী বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে নানা প্রক্রিয়ায় এ ভাষার চর্চা, অনুশীলন এবং গবেষণার ক্ষেত্র ব্যাপক ভিত্তিতে প্রশস্ত করা হলে এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আগামী প্রজন্মের জন্য অপেক্ষা করছে। এ প্রেক্ষিতে আরবী ভাষার তাৎপর্য প্রথমে কোরআন এর আলোকে তুলে ধরা হল:
১. আলিফ-লাম-রা এইগুলো সুস্পষ্ট কিতারের আয়াত। এটি আমিই অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কোরআন, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা: ১২ ইউসুফ, আয়াত: ১-২)
২. এইভাবে আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি বিধানরূপে আরবী ভাষায়। (সূরা: ১৩ রা’দ, আয়াত: ৩৭)
৩. এই রূপেই আমি কোরআনকে অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী যাতে তারা ভয় করে অথবা এটা হয় তাদের জন্য উপদেশ। (সূরা: ২০ তা-হা, আয়াত: ১১৩)
৪. আরবী ভাষায় এই কোরআন বক্রতা মুক্ত, যাতে মানুষ সাবধানতা অবলম্বন করে। (সূরা: ৩৯ জুমার, আয়াত: ২৮)
ব্যাখ্যা: আরবী ভাষার বৈশিষ্ট্য, শ্রেষ্ঠত্ব, গুরুত্ব, তাৎপর্য, মর্যাদা, প্রয়োজন প্রভৃতি দিকনির্দেশক বহু আয়াত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। দুনিয়ার সকল ভাষার মধ্যে আরবী ভাষার স্থান সর্বোচ্চ। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, সর্বশেষ আসমানী কিতাব ‘আল কোরআন’ আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর প্রতি। এই বিশুদ্ধ, ব্যাপক অর্থবোধক, অলংকারসমৃদ্ধ, সুবিন্যস্ত আরবী ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামের যাবতীয় আহকাম বা বিধিনিষেধ বর্ণিত হয়েছে। জান্নাত বাসীদের ভাষাও সেখানে আরবী হয়ে যাবে। পবিত্র কোরআনের বিখ্যাত ভাষ্যকার ইবনে কাসীরের মতে; ‘সর্বাধিক মর্যাদাবান ফেরেশতার মাধ্যমে, সর্বাধিক মর্যাদাবান রাসূলের প্রতি, সর্বাধিক মর্যাদাবান ভাষায়, সর্বাধিক মর্যাদাবান গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর তার অবতরণের সূচনা হয়েছে সর্বাধিক মর্যাদাবান ভূখন্ডে, সর্বাধিক মর্যাদাবান মাসে- আর তা হচ্ছে রমজান। অতএব, সর্ব দিক দিয়ে এই ভাষা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।’- (তফসীরে উসমানী)
আরবীকে ‘ভাষার জননী’ বলা হয়। অতএব, কোরআন শিক্ষা করা, অনুধাবন করা, তেলাওয়াত করা এবং কোরআন এর অনুসরণ-অনুকরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য কর্তব্য। ছেলে-মেয়েদের শিশুকাল থেকেই কোরআন শিক্ষাদান করা পিতা-মাতা কিংবা অভিভাবকদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন