ইত্যাদিতে প্রায় দুই যুগ ধরে বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে আমাদের লোকজ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়মিত তুলে ধরা হচ্ছে। শুরুর দিকে বিষয়টি ১০/১২ জন বিদেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা শতকের ঘরও অতিক্রম করে। এই বিদেশিদের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। বিদেশিদের দিয়ে তাদের মাতৃভাষার বদলে বাংলা ভাষায় গ্রামের সহজ সরল মানুষের চরিত্রে অভিনয় করিয়ে তুলে ধরা হয় আমাদের লোকজ সংস্কৃতি। ইত্যাদির চরিত্রানুযায়ী বিদেশিদের দিয়ে করানো নানা ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে চমৎকার একটি মেসেজের মাধ্যমে। বিদেশিরা মনে করেন, এটি তাদের জীবনে একটি নতুন অভিজ্ঞতা এবং আনন্দ। পাশাপাশি একটি শিক্ষণীয় বিষয় উপস্থাপন। ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিদের কাছে হানিফ সংকেত ও ইত্যাদি দু’টি জনপ্রিয় নাম। প্রতি বছর দর্শকরা যেমন এই পর্বটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন, তেমনি ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিরাও অপেক্ষায় থাকেন কখন তাদের ডাক পড়বে ইত্যাদি থেকে। বছরের এই সময়টাতে বিদেশিদের ছুটি থাকে বলে তাদের পাওয়া খুবই কঠিন। তারপরও অনেকেই ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করার জন্য ছুটি ভোগ করেন না। তাদের প্রিয় এই অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রতিবারের মত এ বছরও তারা নিজেরাই গ্রুপ তৈরী করেন ‘ইত্যাদি বিদেশি টিম-২০১৮’। এবারের পর্বে অংশগ্রহণ করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ জন বিদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন ২৫ জন এবং বাকীরা অভিনয়ে। এবারের বিষয় ‘পারিবারিক শান্তি’। হানিফ সংকেতের নির্দেশনায় অল্প ক’দিনের মহড়ায় বাংলায় বিভিন্ন সংলাপ মুখস্ত করে তারা অভিনয় করেছেন। হানিফ সংকেত বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে কয়েকদিনের মেলামেশায় বিদেশিদের সাথে যে আত্মীক বন্ধন হয় তা কখনোই ভোলার নয়।’ পতুগার্লের নাগরিক জন ভ্যান রিজন বলেন, ‘ইত্যাদির শূটিংয়ে এসে মনে হয় পিকনিকে এসেছি। ভালো লাগে হানিফ সংকেত-এর সমাজ সচেতনতামূলক কাজ।’ ডাচ্ নাগরিক ইরিন বলেন, ‘আমি অনেকের কাছে ইত্যাদির গল্প শুনেছি এবং ইত্যাদিতে এসে বুঝলাম ইত্যাদিতে না এলে আমি অনেক কিছু মিস করতাম। শূটিংয়ের পুরো দিনটাই আনন্দে কেটেছে।’ ব্রিটিশ নাগরিক ক্রেইগ বলেন, ‘ইত্যাদি টিম খুবই ভালো, অর্গানাইজড-আমি ইত্যাদিকে ভালোবাসি। এই নিয়ে তিনবার আমি ইত্যাদিতে অংশ নিলাম।’ আমেরিকান নাগরিক স্কট বলেন, ‘সুযোগ হলে আগামী বছরও শুধু ইত্যাদি করার জন্যই বাংলাদেশে আসবো।’ স্পেনের নাগরিক রোসা বোরাজো বলেন, ‘অনেক গরম তারপরও ইত্যাদির কাজ করতে কোন ক্লান্তি আসে না।’ ইংল্যান্ডের নাগরিক ক্যাথরিন ডিকসন বলেন, ‘হানিফ সংকেতের সাথে কাজ করলে বোঝা যায় যে কোনদিন অভিনয় করেনি, তাকেও তার পক্ষে শিল্পী বানানো সম্ভব। তার প্রমাণ আমরা।’ বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে হানিফ সংকেত বলেন, ‘এরা অপেশাদার তবে অনেক পেশাদার শিল্পীরও এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে ওদের সময়জ্ঞান, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কষ্ট সহিষ্ণুতা, আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। যেহেতু দর্শকরা এই পর্বটি অনেক পছন্দ করেন, তাই আমরাও অনেক যতœ নিয়ে এই পর্বটি করতে চেষ্টা করি। আশা করি, প্রতিবারের মত এবারও এই পর্বটি দর্শকদের অনেক আনন্দ দেবে।’ ইত্যাদি প্রচার হবে ঈদের পরদিন রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের পর বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন, স্পন্সর করেছে কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড।
ছবিঃ ইত্যাদি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন