নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
ঘুম নেই স্বরস্বতী পালের (২০) চোখে। রাতদিন সমানতালে রং করে চলেছেন মাটির খেলনাগুলোতে। আসছে বৈশাখকে ঘিরে তার এই আয়োজন। স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি গড়ছেন মাটির গাছ, পাখি, ফুল, ফুলের টব, ব্যাংক, ফলমূল আর কত কী? এসব রং করার দায়িত্ব পেয়েছেন স্বরস্বতী। স্প্রে মেশিনে মনের মাধুরী মিশিয়ে রং ছড়াচ্ছেন তিনি মাটির খেলনাগুলোতে। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে চওড়া পালপাড়া গ্রাম। অবস্থান সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নে। এ গ্রামের ৩০০ পরিবার কুমারের কাজ করেন। মাটি এ কাজের প্রধান উপকরণ। পাশের চিকলী, যমুনেশ্বরী প্রভৃতি নদীর পলিমাটি সংগ্রহ করে গড়েন ওই পরিবারগুলো মাটির তৈজষপত্র, হাঁড়ি, কলসি, পিঠা তৈরির সরঞ্জামসহ কত কিছু। এর পাশাপাশি কেউ কেউ গড়েন খেলনা। কুমাররা জানান, খেলনা সামগ্রীর অনেক চাহিদা। ঈদ, দুর্গাপূজা, মহররম গ্রামীণ মেলায় এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা। পুঁজির অভাবে আমরা চাহিদা অনুযায়ী খেলনা তৈরি করতে পারি না। সরেজমিনে গেলে কথা হয় স্বরস্বতী পালের সঙ্গে। তিনি জানান, হাতে সময় নেই। সামনে পহেলা বৈশাখ, তাই ফুরসত কম। স্বরস্বতী পাশের হাজারীহাট কলেজের ছাত্রী। ব্যস্ততার কারণে কিছুদিন ধরে কলেজে যাওয়া হচ্ছে না তার। বললেন, স্বামীকে সহযোগিতা করছি। তাছাড়া সবাই বলে, আমার হাতে রং করা নাকি খুব সুন্দর হয়। আমি নাকি রংয়ের শিল্পী, এই বলে হাসলেন তিনি। স্বরস্বতীর স্বামী দীপক পাল। তিনি জানান, বৈশাখী মেলা উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে অর্ডার পেয়েছি। পাঁচ লাখ টাকার খেলনা নেবে তারা। এজন্য কুমার পাড়ার মানুষের ঘুম নেই। আমরা দুমাস ধরে কাজ করছি। মাটি দিয়ে খেলনা তৈরি, পোড়ানো, রং করা এসব অনেক কষ্টের কাজ। দু একদিনের মধ্যেই ট্রাক আসবে। ওই ট্রাকে চেপে চলে যাবে খেলনাগুলো চট্টগ্রামে। পালপাড়ার গোপলা চন্দ্র রায়ও খেলনা তৈরি করছিলেন। সুন্দর সুন্দর মুখাবয়ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের প্রতিকৃতি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের আব মূর্তি। আরও কত কী? অজয় পাল বললেন, পুঁজি সংকটে আমাদের অনেকেই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। কিšুÍ যদি এখানে ব্যাংকগুলো জামানতহীন ঋণ দেয়, তাহলে আমাদের তৈরি এসব খেলনা কেবল দেশে নয়, বিদেশেও বাজার পাবে। তিনি জানান, পালপাড়ার কুমারেরা ভালো কাজ করতে চায়। এবার বৈশাখে আমরা পাঁচ লাখ টাকার খেলনা বিক্রি করবো। প্রতিটি খেলনার পাইকারী দাম নিচে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এজন্য অবশ্য পুঁজির জোগান দিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকসহ কিছু কিছু স্বেচ্ছসেবী সংস্থা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন