বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

আসছে বৈশাখ-বর্ষবরণ - ব্যস্ত সময় পার করছেন কাউখালির দুই পল্লীর মৃৎশিল্পীরা

প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কাউখালী (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা

বর্ষবরণ আর বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে কাউখালীর মৃৎ শিল্প পল্লী যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কালের আবর্তে জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া পিরোজপুরের কাউখালী উত্তর বাজার ও সোনাকুরের ওই পল্লী দু’টির বাসিন্দারা প্রচ- খড়ার মাঝে যেন এক ফোঁটা বৃষ্টির পরশ পেয়েছে। সিরামিক, মেলামাইন ও প্লাস্টিক সামগ্রীর সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া দেড় শতাধিক পরিবারের মাঝে টিকে থাকা মাত্র ৮ থেকে ১০ পরিবার টিকে রয়েছে পূর্ব পুরুষের এ পেশায়। বছরের অন্যান্য কর্মময় দিনের তুলনায় এখন নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে বেশ ব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। বছরের বারটি মাস অতিক্রম করে একটি নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানানোর জন্য কতইনা আয়োজন চলে চৈত্রের শেষ প্রান্তে। বর্ষ বরণের আয়োজন সকল বাঙালীকে উদ্বেলিত করে। বাংলার কুলবধূরা পুরানো বাসন-কোসন বদলানো, ধোয়ামোছা, ঘর গোছানো, পরিপাটি করা কত কি না চলে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে। কেবল পহেলা বৈশাখই নয়, পুরো মাস জুড়েই বাঙ্গালী জাতির প্রাণের উৎসব চলে। এ উৎসবকে ঘিরে গোটা দেশের মানুষ হয়ে ওঠে প্র্র্রাণচঞ্চল। একসময় গ্রামে গ্রামে বসত মেলা। এক সময় ওই মেলায় শোনা যেত বাঁশের বাঁশির সুমধুর সুর, বেলুনের বাঁশির সুর, ছোট শিশুদের ঢোল বাজানোর শব্দ। বাড়ি ফিরত একটি দু’টি মাটির তৈরি হাতি, ঘোড়া, বাঘ ভালুকসহ বিভিন্ন ধরনের পুতুল নিয়ে। ওই মেলা থেকে কেনা হত বছরের প্রয়োজনীয় গেরস্থলি কাজের তৈজসপত্র। আধুনিক সভ্যতার চোখ ধাঁধানো নাচ, গান, মাইক বা সাউন্ড বক্সের কান ফাটানো শব্দে সব যেন হারিয়ে গেছে। সংখ্যায় কম হলেও আজো বিভিন্ন স্থানে বসছে গ্রাম্য মেলা। তথাকথিত আধুনিকতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সব হারিয়ে গেলেও শেষ প্রান্তটি যেন ধরে রেখেছে কাউখালীর মৃত প্রায় মৃৎ শিল্প পল্লীর শিল্পীরা। বৈশাখের দিনগুলোর জন্য বড় আশা নিয়ে সারা বছর অপেক্ষা করে থাকা ওই পল্লীবাসীদের প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। সরেজমিনে উপজেলার উত্তর বাজার ও সোনাকুরের মৃৎশিল্প পল্লীতে গিয়ে দেখা গেছে, আট বছরের শিশু সুমন পাল থেকে শুরু করে বয়স্কা রাধারানী পাল আর সত্তরোর্ধ্ব সুধির পাল, শুশিল পাল সকলেই কাজে মহাব্যস্ত। চর্কা ঘুরিয়ে খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অনিল পাল। একটু পরেই একটি কাঠের তক্তার ওপর তৈরি খেলনা নিয়ে শুকানোর জেন্য বেরুতেই অবাক। কারো সাহায্য ছাড়াই অনেক পুতুলের মাঝ দিয়ে বেরিয়ে তক্তাটি নামিয়ে আবার চলে গেলেন। কথা বলার কোন সুযোগ নেই তবুও কাজের ফাঁকে কথা হয় তাদের সাথে। রংয়ের কাজে ব্যস্ত রবিন পাল জানান, বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে মেলার দিনের জন্য তারা একেকটি পরিবার প্রায় ৪-৫ হাজার খেলনাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করেছেন। বৈশাখী মেলার এখনো কয়েকদিন বাকি থাকার কারণে অনেক খেলনা এখনো সম্পূর্ণ শুকায়নি তাই অর্ধেক খেলনায় রং করা হয়ে গেছে। অনেকটা বাকি তাই দিন রাতের প্রায় বেশির ভাগ সময়ই তাদের এখন রংয়ের কাজ করতে হচ্ছে। ওই পল্লীর কারিগরদের মাটি দিয়ে তৈরিকৃত জিনিসপত্রের মধ্যে রয়েছে হাঁড়ি-পাতিল, বাঘ, হরিণ, হাঁস, ময়ূর, হাতি, নৌকা, ঘোড়া, গরু-গাভী, ঘর, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিমা। খেলনা সামগ্রী এক একটি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বাজারে বিক্রি করা হবে তবে খেলনা বিশেষে বাহারি ও বড় আকৃতির অনেক খেলনা ৮০ থেকে ১শ’ টাকায়ও বিক্রি হবে বলে কুমাররা আশা করছেন। বছরের অন্য সময় তেমন একটা কাজ থাকে না। মৌসুমি আয় দিয়েই তাদের বছর কাটে। বছরের অন্যান্য দিনে তারা বেশ দূরবস্থায় থাকলেও গ্রাম-গঞ্জের মেলা ও পূজা-অর্চনা আসলেই তারা একটু কয়েকদিনের জন্য ধার-দেনা পরিশোধের সুযোগ পান। তখন কর্মমূখর হয়ে ওঠে চিরচেনা ঐতিহ্যময় প্রাচীন ওই কাউখালীর মৃৎশিল্প পল্লী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন