শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ওভারব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প ৯ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি

ইজিবাইক ও রিকশা জটে নাকাল খুলনাবাসী

প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে

খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটে যানজট রাজধানীর যানজটে রূপ নিবে, তা নগরবাসী গত ৫ বছরে চিন্তাও করেনি। অথচ যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। রিকশার পাশাপাশি ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক এখন বিড়ম্বনাকে আরো সুদূর প্রসারিত করেছে। ইজিবাইক যানজটে রীতিমত নাকাল নগরবাসী। অদক্ষ চালক আর অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে রীতিমত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গত ৯ বছরে রিকশা যেভাবে বেড়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে তার চেয়ে গত ২ বছরে অটো রিকশায় সমস্যা আরো প্রকট করে তুলেছে। ইজিবাইক আর রিকশার নগরী খুলনায় গত কয়েক বছর যাবৎ যানজট তীব্র আকার ধারণ করায় তা নিরসনের জন্য তিনটি স্থানে ওভারব্রিজ নির্মাণ করার জন্য গৃহীত প্রকল্পটি দীর্ঘ প্রায় ১১ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। মন্ত্রণালয়ের আপত্তির মুখে দু’টি বাদ দিয়ে একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করার অনুমোদন পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত তাও নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বঞ্চিত খুলনাবাসীর যানজট কিন্তু পিছু ছাড়েনি। নগরীর নিরালার মোড়, গল্লামারীর, ময়লাপোতার মোড়, ফুলমার্কেটর মোড়, সাতরাস্তার মোড়, পিকচ্যার প্যালেস, ডাকবাংলার মোড়, শিববাড়ী মোড়, দৌলতপুর, সাতরাস্তার মোড়, শান্তিধামের মোড়, পিটিআইর মোড়সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওভারব্রিজ একান্ত প্রয়োজন। সব সরকারের আমলে খুলনাবাসী এ সকল ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই বর্তমান সরকারের কাছে এ অঞ্চলের মানুষের চাওয়া-পাওয়া অনেক। খুলনা নাগরিক সমাজের প্রশ্ন কোন কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় মাত্র দু’টি ওভারব্রিজের নির্মাণ প্রকল্প বাদ দিলো। তারপরও শেষ আশা ভরসা একটি ওভারব্রিজের অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু কোন অদৃশ্য কালো হাতের ইশারায় অনুমোদন পাওয়া ব্রিজটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। অনেক তালবাহনা পাশ কাটিয়ে খুলনাবাসীর আন্দোলনের মুখে একটি ওভারব্রিজের অনুমোদন হয়। অথচ তাও এখনো আলোরমুখ দেখলো না।
সূত্র মতে, ২০০৫ সালের দিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর যানজট নিরসনের জন্য একটি প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কেসিসির পক্ষ থেকে ২ কোটি ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পের মধ্যে ছিল নগরীর ডাকবাংলা, নিউমার্কেট ও দৌলতপুর মোড়ে পৃথক তিনটি ওভারব্রিজ নির্মাণ। এছাড়া একই প্রকল্পে নগরীর ৩টি স্থানে রিকশা স্ট্যান্ড নির্মাণ ও ৫টি অটো ইলেকট্রিক ট্রাফিক সিগনাল স্থাপনসহ সড়ক ডিভাইডার নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। জানা যায়, প্রকল্পটি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু তিনটি ওভারব্রিজের মধ্যে শুধুমাত্র ডাকবাংলারটি অনুমোদন দেয়া হয়। নিউমার্কেট ও দৌলতপুর এই দু’টি বাদ দেয়া হয়। ডাকবাংলার ওভারব্রিজটি শেষ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি। সূত্র বলছে, ডাকবাংলার ওভারব্রিজটি নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা পাওয়া যায়নি বলে যুক্তি দাঁড় করানো হয়েছে। সরকার জনস্বার্থে যে কোন স্থানে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গার অভাবের খোড়া অজুহাত দেখিয়ে প্রকল্পটি হিমাগারে পাঠানোকে নাগরিক নেতৃবৃন্দ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ নিউমার্কেট ও দৌলতপুর মোড়ে প্রস্তাবিত দু’টি ওভারব্রিজ মন্ত্রণালয় বাতিল করার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। ডাকবাংলা এলাকায় জায়গার সমস্যা থাকলেও নিউমার্কেট ও দৌলতপুরে জায়গার কোনো অভাব নেই। কারণ ওভারব্রিজ নির্মাণ করার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা থাকার পরও অনুমোদন না দেয়ায় যুক্তি সঠিক নয় বলে সূত্র থেকে দাবি করা হয়। খুলনা মহানগরীতে বর্তমান প্রচ- যানজট বিরাজ করছে। বিশেষ করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র ডাকবাংলা, গল্লামারী, নিরালা, ময়লাপোতা, সাতরাস্তা, ফুলমার্কেট, পিকচার প্যালেস, ফেরীঘাট, নিউমার্কেট, বৈকালী, নতুনরাস্তা ও দৌলতপুর মোড়ে যানজটের জন্য সড়ক পারাপারে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটছে সমান তালে। সূত্র জানায়, খুলনা মহানগরীতে বর্তমান অনুমোদন ছাড়া হাজার হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে। এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তায় লাইসেন্সবিহীন ইজিবাইক পরিচালিত করছে। হকার নেতারা পুলিশ প্রশাসনের দোহাই দিয়ে নগরীর গুরুত্বপর্ণ সড়কগুলোর দু’পাশ দিয়ে বসিয়েছে ফেরিওয়ালাদের। ফুটপাত দিয়ে এখন চলাফেরা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। নগরীর যানজট গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ওভারব্রিজ নির্মাণ এবং ফুটপাতগুলো থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে যে কোনো একটি জায়গায় তাদের বসার ব্যবস্থা করা এখন খুলনা মহানগরবাসীর দাবি। এ ব্যাপারে নাগরিক নেতা ও প্রবীণ আইনজীবী অ্যাড : লিয়াকত আলী মোল্লা ইনকিলাবকে বলেন, যানজট নিরসনে কমপক্ষে পাঁচটি ওভারব্রিজ নির্মাণ প্রয়োজন। তিনি এ ব্যাপারে সরকার প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন