শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা

| প্রকাশের সময় : ২ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৬ এএম

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এবং শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থগার চত্বরে এই হামলা চলে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী গত শনিবার বেলা ১১টায় কোটা বাতিলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও পরবর্তী কর্মসূচী জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে আন্দোলনকারী সংগঠন ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের’ আহŸায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহŸায়ক ফারুক হাসান ও নূরুল হক নূরসহ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে নূরুল হক নুরুর অবস্থার গুরুতর। তাকে ও আরো কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে হামলা ও মারধোরের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থগারিক ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. এস এম জাভেদ আহমেদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলে হেনস্থার শিকার হন। বেলা দেড়টার দিকে শাহবাগে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরো কিছু নেতাকর্মী হামলার সম্মুখীন হয়। পত্রপত্রিকায় খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ছাত্রলীগের মারমুখী নেতাকর্মীরা দুই গ্রন্থাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের খুঁজে খুঁজে বের করে মারধোর করে। তারা এমন কি আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধাদান করে এবং হাসপাতালে পর্যন্ত মহড়া দেয়। ছাত্রলীগের নেতারা হামলার কথা অস্বীকার করেছে। বলেছে, আন্দোলনকারীদের একটি গ্রæপ বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সাধারণ ছাত্ররা তাদের প্রতিহত করেছে। তারা যাই বলুক, হামলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই যে করছে, সব পত্রপত্রিকার খবরে সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা হামলায় অংশ নিয়েছে, তাদের নাম ও সাংগঠনিক পরিচয়ও তুলে ধরা হয়েছে।
যে কোনো বিবেচনায় হামলার এ ঘটনা অনভিপ্রেত, দু:খজনক ও নিন্দনীয়। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় শিক্ষকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কোটা সংস্কারের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই। সরকারও সেটা স্বীকার করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং কোটা বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, গত এপ্রিলের প্রথম দিকে একদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশের বেপরোয়া হামলার ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গভীর রাতে ভিসির বাস ভবনে হামলা ও ভাংচুরের দু:খজনক ঘটনাও ঘটে। ওইদিন আন্দোলনকারীদের অনেকে আহত হয় এবং অনেককে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার প্রতিক্রিয়া হিসাবে সারাদেশের প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতির এই পটভূমিতে প্রধানমন্ত্রী ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আশ্বস্থ হয়ে আন্দোলনকারীরা আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করে। স্বভাবতই আশা করা গিয়েছিল, অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। ফলে আন্দোলনকারীরা প্রজ্ঞাপন জারির দাবিতে ফের সোচ্চার হয়ে উঠে। শনিবারের হামলা আন্দোলনকারীদের বাধ্য করতে পারে ফের আন্দোলনে নামতে এবং এতে শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে, যা কারো কাম্য হতে পারে না। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে এর মধ্যেই একটা কর্মসূচী দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। বলেছে, রোববার সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হবে। ওইদিন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মসূচী পালিত হবে না। সোমবার সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হবে বিক্ষোভ কর্মসূচী। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবরোধ বা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচী পালিত হবে।
কি উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, আমরা বুঝতে অক্ষম। ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র সংগঠনটির এটা অজানা থাকার কথা নয় যে, ন্যায়সঙ্গত ও জনপ্রিয় কোনো দাবি বা আন্দোলন পেশীশক্তিবলে দাবিয়ে রাখা যায় না। সে অপচেষ্টা হলে আন্দোলন আরো সুসংগঠিত ও জোরদার হয়ে ওঠে এবং অবশেষে তার বিজয় হয়। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী এই হামলা চালিয়েছে, তারা সঠিক কাজ করেনি। এতে সংগঠনটির এবং সরকারের কোনো লাভ হয়নি। দু:খজনক হলেও আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর এতদিন অতিবাহিত হলেও প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ার কোনো ব্যাখ্যাই গ্রহণযোগ্য হবে না বা হতে পারে না। যুক্তিসঙ্গত সময়ে প্রজ্ঞাপন জারি হলে আন্দোলনকারীদের মাঠে নামার কোনো প্রশ্নই উঠতো না এবং আন্দোলন দমাতে কিংবা আন্দোলনকারীদের ‘শিক্ষা’ দিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরও এরূপ মারমুখী ও অভব্য আচরণ প্রদর্শন করতে হতো না। সমাধান একটাই এবং তা হলো, প্রজ্ঞাপন জারি করা। প্রজ্ঞাপন জারিতে এত সময় লাগছে কেন, সরকারই বলতে পারে। অভিজ্ঞজনদের মতে, সরকার ইচ্ছা করলে খুব কম সময়ের মধ্যেই এটা করতে পারে। যা হবার তা হয়েছে, আমরা আশা করি, সরকার যতদ্রæতসম্ভব প্রজ্ঞাপন জারি করে দীর্ঘদিনের এই দাবী ও আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটাবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন