টানা ৪বছর ধরে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর থেকে মাদক নির্মূলে বহুমুখী কর্মসূচি চলছে। এবার যশোরের পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান বিপিএম, পিপিএম (বার) একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি গতকাল যশোরের সকল থানা, ফাঁড়ি, ক্যাম্প, তদন্ত কেন্দ্র, ট্রাফিক, ডিবি ও ডিএসবিসহ পুলিশের সকল ইউনিটের ইনচার্জদের মাদক নির্মূলে কঠোর হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআন ও গীতা ছুঁয়ে পপথ করিয়েছেন।
পুলিশ কর্মকর্তারা অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন ‘আমরা ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ কিংবা অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি কোনরূপ অনুকম্পা ও নমনীয়তা প্রদর্শন করবো না। আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা ও মাদকের ব্যবহার ও ব্যবসা বন্ধে সর্বান্তকরণে সচেষ্ট হবো। আমার অধীনস্তদেরও একই লক্ষ্যে পরিচালিত করবো’।
অনুষ্ঠানে যশোরের পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান বিপিএম, পিপিএম (বার) তার ঘোষিত মাদক নির্মূলে বহুমুখী প্রোগ্রাম বিশেষ করে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ গ্রহণ করে অনেকটাই সফল হওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন, শুধু মাদক বিক্রেতা, ব্যবসায়ী, পৃষ্টপোষক গডফাদার, আশ্রয়দাতা জনপ্রতিনিধি যেই হোক না কেন ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি পুলিশের যেসব সদস্য পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা করবে তারাও রেহাই পাবে না। ইতোমধ্যে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা দেশ ও জাতির শত্রু, তাদের সঙ্গে বিন্দুমাত্র আপোষের সুযোগ নেই। মাদক সন্ত্রাসের ব্যাপারে জিরো টলারেন্সে কাজ করছি। তার কথা, সমাজ দেহকে ক্ষতবিক্ষত করা মাদক সন্ত্রাস শূন্যের কোটায় আনতে লাগাতার যুদ্ধ চলছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এডিশনাল এসপি মোঃ সালাউদ্দিন শিকদার। মোট ৬০জন ইউনিট ইনচার্জ শপথ নেন।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সুত্র জানায়, মাদক নির্মূলে যশোর হয়েছে মডেল। এসপি আনিস যশোরে যোগদানের পর সাংবাদিকদের সামনে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অব্যাহত ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, মাদক ব্যবসায়ীদের ছবিসহ পোস্টার ও লিফলেট বিলি, তাদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ-ছাত্র কাউন্সিলিং, মাদক সম্রাটের আস্তানা গুড়িয়ে সেখানে গাছ রোপন। আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া, ‘এসড্রাইভ’ ও ‘ডোর টু ডোর’ প্রোগ্রাম। মাদক সন্ত্রাসীদের সন্ত্রস্ত করা, মাদক পরিহারকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাসহ বহুমুখী কর্মসুচীর মাধ্যমে এসপি আনিস সফল হয়েছেন। একসময় সীমান্তবর্তী জেলাটি ভারতীয় ফেনসিডিলের ব্যবসা চলতো রমরমা। ছিল ট্রানজিট পয়েন্ট। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই জেলার বেনাপোল, চুড়ামনকাঠি ও চৌগাছাসহ বিভিন্ন স্পটে বসতো ভারতীয় ফেনসিডিলের বাজার। এখন সেই দৃশ্য অনেকটাই নেই। অব্যাহত ক্র্যাশ প্রোগ্রামে চিহ্নিত ৮ মাদক সম্রাটের আস্তানা গুড়িয়ে সেখানে রোপন করা হয়েছে ফলের চারা। গত এক বছরের ব্যবধানে যশোরে মাদক বিক্রেতা আটক হয়েছে প্রায় ১হাজার ৫শ’৪৩জন। মাদক মামলা হয়েছে সহস্রাধিক। এ সময়ে ১৪ জন মাদক স¤্রাট বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অস্ত্র গোলাবারুদের উদ্ধার হয় দেড় শতাধিক। মাদকদ্রব্য আটক হয়েছে প্রায় কোটি টাকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন