শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

মহারশী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

ধ্বংস হচ্ছে পাহাড় : হুমকিতে সেতু ও বাড়িঘর

শেরপুর থেকে মো. মেরাজ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০১৮, ১২:১৮ এএম

ভারত থেকে নেমে আসা শেরপুরের ঝিনাইগাতির পাহাড়ি নদী মহারশী। এ নদীতেই কোনো রকম নিয়ম-নীতি না মেনে অবৈধভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে যত্রতত্র উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। যে কারণে নদীর দুই পাড়ের উঁচু পাহাড় ধসে পড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে সামাজিক বনায়নের গাছপালা। একযুগেও হাইকোর্টের একটি রিট নিষ্পত্তি না হওয়ার সুযোগে এ ধ্বংসলীলা চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পাহাড়ি পার এখনই ভাঙতে শুরু করায় পাহাড়ি ঢল আসলে ব্যাপকভাবে শুরু হবে ভাঙন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পাহাড়ি বাড়িঘর, এ আশঙ্কা স্থানীয়দের।
অপরদিকে, সীমান্ত সড়কের সন্ধাকুড়া সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন করায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটিও হুমকির মুখে পড়েছে। সেতুটির পিলারের কাছ থেকে ৮-১০ ফুট পর্যন্ত বালু সরে গেছে। ফলে পাহাড়ি ঢল এলেই সেতুটির পিলারের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এখানকার ছামিউল ইসলাম ফকির নামের এক বালু ব্যবসায়ী ২০০৬ সালে বালু উত্তোলনের জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় বালু মহালের ডাক নেয়। কিন্তু নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র বালু উত্তোলন শুরু করলে জেলা প্রশাসন বালু মহালের ইজারা বাতিল করে। তিনি এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। আর এ রিটের আলোকেই সে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করে আসছে। সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে বিধিনিষেধ থাকা এলাকাতেও সে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে গারো পাহাড় ও জীববৈচিত্র। আর স্থানীয় প্রভাবশালী মহলসহ বন বিভাগের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে তার এ অপকর্ম। ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না স্থানীয়রা। প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা কিছু বলতেও পারছেন না।
যে কারণে বনের এত ক্ষতি হওয়ার পরও বন বিভাগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তার নির্ধারিত স্থানের বাইরে বন বিভাগের জায়গা কেটে বালু উত্তোলন করলেও তা বন্ধ করা হয়নি। দীর্ঘ একযুগেও বালু খেকো ছামিউল ফকিরের দায়ের করা রিটের নিষ্পত্তির উদ্যোগও নেয়া হয়নি বন বিভাগ, জেলা প্রশাসন ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্যই কোনো ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবার নোম্যান্স ল্যান্ডের জায়গায় বালু উত্তোলন করা হলেও বিজিবির পক্ষ থেকে বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এ ঘটনার মূল হোতা ছামিউল ফকিরের বক্তব্য চাইতে গেলে সাংবাদিকদের সামেন কথা বলতে রাজি না হয়ে দ্রæত স্থান ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তারা বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিষেধ আছে, তার অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দেয়া যাবে না। তবে তারা বলেন, আমরা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা শুধু জেলা প্রশাসেনর দায়িত্ব না। এটা বন বিভাগ ও বিজিবিরও দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি জানান, বন বিভাগকে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর আমরা এ বিষয়ে দ্রæতই ব্যবস্থা নেব। সরকারি কৌশলির কাছে রিট নিষ্পত্তির জন্য আমরা লিখেছি। আর এ বিষয়ে বন বিভাগের মূখ্য দায়িত্ব পালন করা উচিত। তবে বন বিভাগের দায়িত্বহীন ভ‚মিকার জন্য হতাশ স্থানীয়রা। সচেতন মহলের দাবি, বালু উত্তোলনের নামে গারো পাহাড়, সেতু ও জনসাধারণের বাড়িঘরকে হুমকির মধ্য ফেলা ঠিক হচ্ছে না। তাই এখনই সম্পদ রক্ষা করতে বালু উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন