ওয়াপদা খালের ভাঙনে লক্ষীপুর সদর উপজেলার পাঁচটি গ্রামের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পিয়ারাপুর বাজার, চাঁদখালী বাজার ও স্কুল-মাদরাসাগুলো কয়েক দফা ভাঙনের শিকার হয়ে কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়াসহ সাধারণ মানুষের হাটবাজারে যাতায়াত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
লক্ষীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, সদর উপজেলার টুমচর গ্রাম থেকে লাহারকান্দি ইউনিয়নের পিয়ারাপুর, তালহাটি, সৈয়দপুর, রামানন্দী ও চাঁদখালী গ্রামের পূর্ব সীমানার কাপ্তান ব্রিজ পর্যন্ত ভাঙনের মুখে রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলে মেঘনা নদীর স্রোতের টানে বেশি ভাঙন দেখা দেয়। এবারের ভাঙনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে- সদর উজেলার পিয়ারাপুর বাজার তৎসংলগ্ন এলাকা একই উপজেলার চাঁদখালী বাজার ও কালাগাজী বাড়ি এলাকা, চাঁদখালী বাজারের দক্ষিণ গলি, বাজারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সড়কের ওয়াপদা খালের উপর নির্মিত স্টিলব্রিজের দু’পাড়ের মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যে কোনো মুহূতে এটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে ভাঙনের কবলে পড়ে চাঁদখালী এরব উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি খেলার মাঠ বিলীন হয়েছে। চাঁদখালী বাজরের দক্ষিণ পাশে বালুর বস্তা ফেলে কিছু কাজ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
বাজারের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ লোক দেখানোর জন্য লক্ষীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এ কাজ করেছেন, এর কোনো স্থায়ীত্ব ছিল না। স্রোতের টানে বালুর বস্তা চলে গেছে। বসতভিটা হারানো কালাগাজী বাড়ির জানোরা বেগম জানান, ‘আমার স্বামী নাই, এক খন্ড ছোট জমিতে আমার একটা বসতঘর ছিল, তাও সর্বনাশা খালে বাইঙ্গা নিয়া গেছে। আমি এখন কোথায় জামু কোথায় তাকমু আল্লায় জানে।’ ওই বাড়ির রহিমা বেগম জানান, ‘আমার স্বামী রিকশাচালক, বসতভিটা ছাড়া আর আমাদের কোনো জমি নেই যে কোনো মুহূর্তে বসতঘরটা বাইঙ্গা পড়বো, তখন আমাদের কি হবে?’ রামনন্দি গ্রামের হাসান ও হোসেন দুই ভাই বসত ভিটাসহ সকল জমি হারিয়ে একবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তারা অন্যের আশ্রয়ে তাকে। দুই ভাই রিকশা চালায়, বয়স বৃদ্ধির কারণে তাও এখন পারছে না, তাদের সংসার চলে খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে, প্রায় সময় বাজারে এসে খালপাড়ে গিয়ে নিজের হারানো বসতবাড়ির দিকে নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। একইভাবে সদর উপজেলার পাঁচটি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর ওয়াপদা খালের দুপাড়ে বিলীন হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী চলতি শুকনো মৌসুমে বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গলা বাঁধ দিয়ে ছোট ছোট চর দেয়া জায়গা গুলোকে ড্রেজিং করে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জনান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন পাটওয়ারী জানান, ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি ইতোমধ্যে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা-উপজেলা কর্মকর্তা, সদর উপজেলা চেয়ারম্যন এমনকি আমাদের মন্ত্রী এ কে এম শাজাহান কামালসহ সকল কর্মকর্তার কাছে মৌখিক ও লিখিত আবেদন করেছি, এর মধ্যে অনেকে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে আশ্বাস দিলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাজাহান আলী জানান, উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কতৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করা হয়েছে। লক্ষীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা জনান, লক্ষীপুর সদর উপজেলার ওয়াপদা খালের ভাঙন রোধে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন