স. ম. জাহাঙ্গীর আলম, ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) থেকে
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচনী উত্তাপ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আসছে আগামী ২৩ এপ্রিল শনিবার এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধেই নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী মাঠ এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রার্থীদের নিত্য-নতুন কৌশলের প্রচার-প্রচারণা এখন তুঙ্গে। গত ৬ এপ্রিলের পর প্রতীক বরাদ্দ থেকেই প্রার্থী ও কর্মীদের চোখে ঘুম নেই। চৈত্রে এই প্রচ- তাপদাহকে যেন হার মানিয়ে তারা নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ যেন ততই বেগবান হচ্ছে। প্রার্থীরা রাস্তার জটলায় এবং ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা এবং দোয়া কামনা করছেন। ইতোমধ্যেই প্রতিটি ইউনিয়নের আনাচে-কানাছে জুলছে প্রার্থীদের পোস্টার, আর হাতে হাতে দেয়া হচ্ছে লিফলেট। এদিকে ভোটারদের মাঝেও শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তাদের মনে চলছে প্রার্থীদের অতীত-বর্তমান নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ। এসব নিয়ে কোথাও কোথাও আবার ঠা-া বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে ভোটারদের মাঝে। তবে সুখের কথা, এ পর্যন্ত কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এ উপজেলায়। এ নির্বাচনে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নেই আ.লীগের একধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। এতে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থীরা বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আগুনে জ্বলছে। অপরদিকে বিদ্রোহী বিহীন অবস্থায় রয়েছে বিএনপির প্রার্থীরা। সরেজমিনে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ঘুরে নেতাকর্মী ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নেই আ.লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এতে করে আ‘লীগের মনোনীত প্রার্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবার এ এলাকার ২টি ইউনিয়ন ব্যতিত অন্য ৫টি ইউনিয়নের নির্বাচনে আ’লীগ বনাম বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, বরং নির্বাচন হচ্ছে আ.লীগ বনাম আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার নাজমা সুলতানা জানান, উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আ.লীগের নৌকা প্রতীকের ৭ জন প্রার্থী, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের ৭ জন প্রার্থী এবং ৯ জন আ.লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে শক্তভাবে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। এখন পর্যন্তও এ উপজেলায় নির্র্বাচন সংক্রান্ত বড় ধরনের কোন ঘটনার অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি নিয়ে সকল প্রার্থীর সমন্বয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন নির্বাচনে এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ১ লাখ ১১ হাজার ৯ জন ভোটার নির্বিঘেœ তাদের ভোটাধিকার ৬৩টি কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে পারবেন। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে যারা প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন- বলিভদ্র ইউনিয়নে ধনবাড়ী উপজেলার নব-গঠিত ২টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্যতম বলিভদ্র ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১০ হাজার ৯শ’ ২৫ জন। এ ইউনিয়নের নির্বাচনে ৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার (নৌকা), মো. নাজিম উদ্দিন (ধানের শীষ) এবং অপরজন আ‘লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুাহাম্মদ সুরুজ্জামান (আনারস)। এ ইউনিয়নে বিএনপির অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। তাই আসন্ন নির্বাচনে আ’লীগ বনাম আওয়ামী বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনাই বেশি। মুশুদ্দি : এ ইউনিয়নে খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ (নৌকা), মো. ইদ্রিস আলী (ধানের শীষ) এবং আ.লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আ.লীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. হযরত আলী (আনারস), উপজেলা যুবলীগের সদস্য মো. শাহাদৎ হোসেন (মোটরসাইকেল) ও আওয়ামী ঘরনার বাবলু আহম্মেদ প্রামাণিক (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এ ইউনিয়নেও বিএনপি প্রার্থী নিয়ে দলে দ্বিধা-বিভক্তি থাকায় মূলত আ.লীগের প্রার্থী খন্দকার মঞ্জুর মোর্শেদ নান্নু মাস্টার (নৌকা)’র সাথে আ.লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হযরত আলী (আনরস)-এর মধ্যেই দ্বিমুখী লড়াই হবে। পাইস্কা : পাইস্কা ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আরিফ বজলু (নৌকা,) বিএনপি’র প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম (ধানের শীষ), উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আঃ হামিদ (আনারস) ও আ‘লীগের স্থানীয় নেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম (মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এ ইউনিয়নে মূলত আ.লীগ মনোনীত আরিফ বজলু (নৌকা)’র সাথে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আঃ হামিদের আনারস প্রতীকের দ্বিমুখী লড়াই হবে। বীরতারা : এ ইউনিয়নে আহাম্মদ আল ফরিদ (নৌকা), মো. ছানোয়ার হোসেন (ধানের শীষ) এবং আ.লীগের বিদ্রোহী হিসেবে উপজেলা ছাত্রলীগের সবেক সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম (ঘোড়া) ও মো. আ. লতিফ (আনারস) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এ ইউনিয়নে মূলত আ.লীগ মনোনীত প্রার্র্থী আহাম্মদ আল ফরিদ (নৌকা) এবং আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্র্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম (ঘোড়া)-এর মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হবে। বানিয়াজান : এ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম তালুকদার ফটিক (নৌকা), মো. রফিকুল ইসলাম (ধানের শীষ) এবং আ.লীগের বিদ্রোহী হিসাবে উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আলম তালুকদারের আপন ছোট ভাই আ.লীগ নেতা শামছুল আলম তালুকদার (আনারস) প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এ ইউনিয়নেও মূলত আ‘লীগ মনোনীত প্রার্থী রফিকুল ইসলাম তালুকদার (নৌকা) ও আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামছুল আলম তালুকদার (আনারস)-এর মধ্যে তুমূলভাবে দ্বিমুখী লড়াই হবে। যদুনাথপুর : এ ইউনিয়নে আ.লীগের মনোনীত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মীর ফিরোজ আহম্মেদ (নৌকা) এবং বিএনপি’র মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে দুই জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়ছেন। এ দু’জনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। ধোপাখালী : এ ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী মো. আকবর হোসেন (নৌকা) ও বিএনপি’র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. কামাল হোসেন তালুকদার (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানে আ.লীগ প্রার্থীর অবস্থান অনেকটা মজবুত হলেও বিএনপির অবস্থান অনেকটাই শক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাষ পাওয়া যাচ্ছে। শেষটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নেই বিএনপির একক প্রার্থী থাকায় তারা অনেকটা নিরাপদ রয়েছেন। অপরদিকে আ.লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্র্থী স্বতন্ত্র হিসেবে বিপুল উদ্যমে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের সাথে কোন কোন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জোরালো সমর্থন থাকায় আ.লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ভোটযুদ্ধে ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে। এসব এলাকার দলীয় নেতাকর্মী ও নানা শ্রেণির ভোটারদের সাথে কথা বলে নির্বাচনের এ চিত্র পাওয়া গেলেও অধিকাংশ ভোটারই বলেছেন, তারা দল-মত বুঝেন না। তারা প্রার্থীদের অতীত আমলনামা এবং কর্মদক্ষতা দেখেই যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন