বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে অত্যাধুনিক ই-পাসপোর্ট ও ই-গেইট চালু করতে জার্মান কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। গতকাল দুপুর ১টা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান ও জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কুন্স চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং বিশেষ অতিথি জার্মানির পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নেইলস আনেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মেশিন রিডেবল পাসপোর্টও (এমআরপি) জালিয়াতি হচ্ছে বিধায় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনাকে আরও নির্ভুল, সহজতর ও সময় সাশ্রয়ী করতে বিশ্বের ১১৮টি দেশ ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্ট প্রদান করেছে। এর ফলে বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্ট চালু করছে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত ২ কোটি ১৫ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বাংলাদেশি নাগরিকদের দেওয়া হয়েছে এবং ১১ লাখেরও বেশি মেশিন রিডেবল ভিসা বিদেশিদের দেওয়া হয়েছে। তবে এমআরপি পাসপোর্ট এখন বন্ধ হয়ে যাবে না। ই-পাসপোর্ট সম্পূর্ণরুপে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি চালু থাকবে। আশা করি, শিগগিরই ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে পারব।
জার্মানির পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নেইলস আনেন বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে জার্মানি কোম্পানির সহায়তায় বাংলাদেশ তার চ্যালেঞ্জের পক্ষে আরো এগিয়ে যাচ্ছে। জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা এর আগেও আছে। আর আমরা বাংলাদেশিদের এ কাজে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবো।
অনুষ্ঠানে ভেরিডোস জার্মান কোম্পানির সিইও কুন্স বলেন, আমরা ৫০টি দেশের ই-পাসপোর্ট করেছি। আমাদের নতুন করে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেয়ায় আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই পাসপোর্টে রঙিন ছবিসহ পলিকার্বনেটেড ডাটাপেইজ থাকবে, যা শুধুমাত্র পৃথিবীর ২টি দেশে রয়েছে। এছাড়াও এই পাসপোর্ট অত্যন্ত নিরাপদ।
পাসপোর্ট অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, জার্মানের ভেরিডোস কোম্পানি ৩ কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে। ঢাকার উত্তরায় বুকলেটের জন্য একটি এসেম্বলি কারখানা স্থাপন করা হবে। এতে বুকলেটের খরচ অর্ধেকেরও কম হবে। ৫০টি ই-গেট দেওয়া হবে। সব সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক ১০ বছরের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ সেবা প্রদান করবে। একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ ডাটা সেন্টার ও একটি ডিজাস্টার রিকভারি সেন্টার এবং অত্যাধুনিক পার্সোনালাইজেশন সেন্টার নির্মাণ করা হবে। পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে ৮টি প্রিন্টিং মেশিন থাকবে এবং যার মাধ্যমে প্রতিদিন প্রতি শিফটে ৩০ হাজারেরও বেশি পাসপোর্ট প্রিন্ট করা সম্ভব হবে। এই প্রকল্পের আওতায় ১০০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে জার্মানে ২ সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বাংলাদেশে ৭২ টি পাসপোর্ট অফিস, বিদেশে ৮০ টি মিশন, ৭২ টি এসবি/ডিএসবি অফিস, ২২টি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ সকল অফিসে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও নেটওয়ার্ক প্রদান করবে।
ই-পাসপোর্ট হলো বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, যাতে একটি এমবেডেড ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ থাকবে। এই মাইক্রোপ্রসেসর চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আইরিশ) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে, যাতে পাসপোর্টধারীর পরিচয়ের সত্যতা থাকে। এই পাসপোর্ট কোনভাবে হস্তান্তরযোগ্য নয়। ই-পাসপোর্ট চালু হলে জালিয়াতি করা কঠিন হবে বলে দাবি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন