আবদুল আউয়াল ঠাকুর
প্রকাশ্যতই সরকার এখন নিজেকে গণতন্ত্রপন্থী নয় বরং উন্নয়নপন্থী বলে পরিচিত করতে বেশি পছন্দ করছে। এর ফলে ইতোমধ্যেই সাধারণ ও বোদ্ধামহলে এ প্রশ্ন উঠেছে যে, তাহলে উন্নয়ন কি জনসম্পৃৃক্ততাবিহীন কোন বাস্তবতা? বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আমলগীর বলেছেন, এটা দুঃখজনক যে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। অবস্থা যদি এই হয় তাহলে কথিত এ উন্নয়ন কাদের জন্য? বোধকরি সে প্রশ্নই খুব বড় করে উঠেছে বাঁশখালীতে। সেখানকার অধিবাসীরা একটি প্রস্তাবিত বড় বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাধা প্রদান করেছে। ঘটানাটি শেষপর্যন্ত মানুষের মৃত্যুও ডেকে এনেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেমনি কথা বলেছে তেমনি খোদ প্রধানমন্ত্রীও কথা বলেছেন। ঘটনায় নিহতদের প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে সহমর্মিতা প্রকাশ করা হলেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভিন্ন কথা। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের আলোচ্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, উদ্ভট কথা বলে অযথা কতগুলো মানুষের জীবন পর্যন্ত নিয়ে নেয়া হলো। এমনকি কারা গুলি করেছে তা নিয়েও সরকারে উপর মহলে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। বাঁশখালীর মানুষেরা কেন অন্দোলন করেছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে সে নিয়ে বোধকরি নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই। তাদের আন্দোলনের কমিটির নামই ছিল বসতভিটা রক্ষা কমিটি। বোঝাই যায়, বেঁচে থাকার নিতান্ত প্রয়োজনেই তারা বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নেমেছে। তাদের বক্তব্য এবং প্রাসঙ্গিক নানা বিষয় নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও আলোচনা উঠেছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত যতটুকু হয়েছে সেখানেই এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা উন্নয়নের প্রকৃতি বিশ্লেষণে যথেষ্ট। সেখানকার আন্দোলনকারীরাও যেমনি বলেছেন তেমনি তেল-গ্যাস রক্ষাকারী সংগঠনের নেতা অধ্যাপক আনু মুহাম্মদও বলেছেন, প্রকল্পটি শুরু করার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়া হয়নি। বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বলেছেন, তারা কাজ শুরু করার আগে ছাড়পত্র নেননি। এখন আবেদন করবেন। নিয়ম হচ্ছে, এ ধরনের যে কোন প্রকল্পের যে কোন কাজ শুরু করার আগেই পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এই প্রকল্পের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, আজকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলেই একদল পরিবেশ রক্ষার নামে আন্দোলনে নামে। দেশের আইন অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তিন ধরনের ছাড়পত্র নিতে হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুযায়ী এগুলো লাল তালিকাভুক্ত বা মারাত্মক দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিত। নিয়ম অনুযায়ী যে কোন ভৌত অবকাঠামোগত কাজ শুরু করার আগে সাইট ক্লিয়ারেন্স এবং পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা করে তার অনুমোদন নিতে হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ করার আগে পেতে হয় পরিবেশ ছাড়পত্র। এর কোনটিই নেয়ার কোন প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। অন্য খবরে বলা হয়েছে কোন প্রকার যোগ্যতা ছাড়াই এত বড় কাজ করার অনুমতি পেয়েছে কোম্পানীটি। আলোচ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ নিয়ে যতটা না প্রশ্ন উঠেছে তার চেয়েও টেকনিক্যাল প্রশ্ন বেশি উঠেছে।
যে কোন উন্নয়নের জন্যই বিদ্যুতের অপরিহার্যতা নিয়ে কোন মহলে কোন ধরনের সন্দেহ নেই। দেশের মানুষ বিদ্যুৎ চায়। শিল্প উৎপাদনের জন্যও বিদ্যুতের কোন বিকল্প নেই। যদিও বর্তমান সময়ে সরকার যে ধরনের বিদ্যুৎ দিতে চাচ্ছে তা ইতোমধ্যেই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। উৎপাদনের জন্য যে সাশ্রয়ী বিদ্যুতের প্রয়োজন বাংলাদেশে বর্তমানে তা অনুপস্থিত। দিন দিন বিদ্যুতের দাম বাড়ছেই। কেন বাড়ছে এ ব্যাপারে সরকারি ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত ফার্নেস তেলের দাম কমছে অথচ বিদ্যুতের দাম বাড়ছে এবং আরো বাড়াবার পায়তারা রয়েছে। বিদ্যুতের দাম যদি বাড়তেই থাকে তাহলে সে বিদ্যুৎ দেশের ব্যবসায়ীরা কোন কাজে লাগাতে পারবেন না। আর বিদ্যুৎ যদি জাতীয় উন্নয়নের কোন কাজে না লাগে তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ল না কমল তাতে জনসাধারণের তেমন কিছু যায় আসে না। বোধকরি এ প্রশ্ন বাঁশখালীতে আপাতত বড় হয়ে দেখা দেয়নি। প্রকাশিত রিপোর্ট মতে, এক ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে বা করার আশঙ্কা রয়েছে, এটাই সেখানকার জনগণকে আতংকিত করে তুলেছে। এই প্রবণতার সাথে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নামও জড়িয়ে পড়েছে। বলা হয়েছে, সে কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে। বোধহয় এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রকল্পের কাজ নির্ধারণে নিয়মনীতি না মানার ফলেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। এটি যদি উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবে ধরা যায় তাহলে মৌলিক প্রশ্ন দেখা দেবে জনগণকে সম্পৃক্ত না করে যে উন্নয়নের ঢাকঢোল পেটান হচ্ছে তা কাদের জন্য? এই যে জবাবদিহিতাহীনতা এর সাথে কি কোন মহল সম্পৃক্ত? বাস্তবত তো একথাই সত্যি যে, উন্নয়নে জনগণ সম্পৃক্ত নয় সে উন্নয়ন কোন কাজে আসে না। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টেও সে কথা পুনরায় জোর দিয়ে বলা হয়েছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সে বিবেচনায় বাঁশখালীতে যারা প্রাণ দিলেন তাদের মৃত্যু কিন্তু কিছু মৌলিক বিবেচনাকেই সামনে নিয়ে এসেছে। অবশ্যই ভাববার রয়েছে নিয়ম না মেনে এ ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা কতটা গ্রহণযোগ্য। অন্যদিকে কিভাবে এটা করা সম্ভব হলো? বলা হয়েছে, বিদেশি পরিবেশবিজ্ঞানীরা এসে সিদ্ধান্ত দেবেন। তারপর পুনঃ বিবেচনা। হতে পারে, এরমধ্যে আরো অনেক কিছু ঘটে যাবে। যাই হোক, বাঁশখালীর সাধারণ মানুষ তাদের অস্তিত্বের জানান দিতে যে রক্ত ঝরিয়েছে তাকে কোন বিবেচনাতেই তথাকথিত উন্নয়নের শ্লোগানে ভাসিয়ে দেয়া যাবে না বরং ভাবতে হবে প্রকৃত উন্নয়ন হলো জনগণের সম্পৃক্তায় সিক্ত। বিষয় যদি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকত তাহলে হয়ত ভিন্ন কথা ছিল। কথিত উন্নয়নে এখন আর রড-বালি-সিমেন্টের প্রয়োজন হয় না বরং বাঁশ ও মাটিই উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৫ তলা ভবনে রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার করা হয়েছে। এই খবরের রেশ ফুরোতে না ফুরোতেই বলা হয়েছে, ঐ ভবনে সিমেন্টে মাটি মেশান হয়েছে। অন্যদিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মেঘডুমুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণেও লোহার রডের পরিবর্তে চিকন বাঁশ ও স্কুলের বেঞ্চের পুরাতন ফ্রেমের রড ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গাইবান্ধার অবশিষ্ট ২৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত ওয়াশ ব্লক নির্মাণেও এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে এবং সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। চুয়াডাঙ্গার দর্শনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আলোচিত ভবনের প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও উঠে এসেছে। রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার তদন্তে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল সে কমিটি নাকি ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন বাঁশ খুঁজে পায়নি। তবে আলোচ্য অংশ নাকি পুনঃ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। অথচ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবি অনুযায়ী ভবনটি ভেঙ্গে রডের জায়গায় বাঁশ পাওয়া গেছে। সংগতভাবে প্রশ্ন উঠেছে, কারা এই তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন? তারা কি-ই বা দেখলেন? আর যদি বাঁশই না থাকবে তাহলে পুনঃ নির্মাণর প্রশ্ন উঠল কেন? সেই ভবন নিয়ে প্রকাশিত নতুন খবরে বলা হয়েছে, ভবনটিতে সিমেন্টর সাথে মাটি ও খোয়ার সঙ্গে রাবিশ মেশানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত নি¤œমানের ইট ও বালু দিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদ প্রশাসক। এ ক্ষেত্রে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে এটি কার্যত নতুন কিছু নয় এবং এটিই একমাত্র তাও মনে করার কোন কারণ নেই। এটাই মনে করা উত্তম যে, সারাদেশের এ ধরনের উন্নয়নের অবস্থা হয়ত একই। বছরের এই বিশেষ সময়ে বাজেটের অর্থ নিঃশেষ করতে এ ধরনের প্রবণতা এই প্রথম নয়। এর অগেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ভবনাদি নির্মাণে রডের পরিবর্তে শেওলার ব্যবহারের সচিত্র খবরও প্রকাশিত হয়েছে। ২০১২ সালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি এবং নি¤œমানের ইট ও পরিমিত পরিমাণের সিমেন্ট ব্যবহার না করার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ সালেও আইলঝাড়ায় নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী ও রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। খোদ রাজধানীতে ফ্লাইওভার নির্মাণে রডের পরিবর্তে পাইপের ব্যবহারের কারণে ভেঙ্গে পড়ে মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। প্রতিটি ঘটনাতেই দেখা গেছে কোন ঘটনা কোন কারণে প্রকাশিত হয়ে পড়লে তখন নানা জনের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়। অথচ প্রতিটি নির্মাণ শুরু থেকে পর্যাপ্ত ও যথাযথ তদারকির নির্দেশনা রয়েছে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরাও রয়েছেন। সংগত ও বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে তাহলে কেন এমনটা হয়েছে বা হতে পারছে। এর একটাই জবাব একদিকে ক্ষমতার প্রভাব অন্যদিকে অবৈধ অর্থের বিলিবণ্টন। ইতোপূর্বে বিদ্যালয় বা এ ধরনের অনেক নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের ছাদ ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আলোচ্য ক্ষেত্রগুলো পর্যালোচনা করলেও বলা যায়, রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে সিমেন্টর পরিবর্তে মাটি দিয়ে ভবন নির্মাণ আর পুতুলের ঘর নির্মাণে কোন পার্থক্য নেই। নির্মাণের কদিন পরেই হয়ত এসব ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনাই হয়ত রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে কেবলমাত্র যথাযথ তদারকির অভাবে মানুষের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
কেবলমাত্র এই একটি দুটি প্রকল্পের কথা আলাদা করে আলোচনা বোধকরি অর্থহীন। যেসব বড় প্রকল্প তৈরি হচ্ছে সেগুলোর অবস্থা কি তা জানতে হয়ত আরো কিছুটা সময় লাগবে। ইতোমধ্যে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক তৈরি হচ্ছে শরীয়তপুরে। সাধারণভাবে মনে করা হচ্ছে সুশাসনের অভাব, দলীয়করণ, দুর্নীতি, মনিটরিংয়ের অভাব ও অদক্ষ হাতে কাজের দায়িত্ব তুলে দেয়ার কারণেই কাজের এই হাল। এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না, লুটপাট তো কেবলমাত্র এখানেই হচ্ছে না বরং সর্বত্রই হচ্ছে। খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকাসহ সারাদেশেই লুটপাট চলছে। কখনো দুএকটি কোন কারণে ধরা পড়লে তা নিয়ে দুএকদিন হৈচৈ হয় তারপর সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায়। শুধু যদি ধনসম্পদ লুটপাটের প্রসঙ্গ থাকত তাহলেও না হয় হতো। বাস্তবতা হচ্ছে রাস্তাঘাটে-বাসাবাড়িতে গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুলগামী মেয়েরাও এখন সরকারি দলের এক শ্রেণীর হাত থেকে নিরাপদ নয়। এমনকি সরকার যাদের খুব আস্থার সাথে দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করেছেন সেই থানা-পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার নির্লজ্জ বেহায়াপনার শিকার হচ্ছেন বাসাবাড়ির মেয়েরা। সারাদেশে যা হচ্ছে তার খুব কম অংশই প্রকাশিত হয় বা হতে পারে। কারো হয়ত মান-ইজ্জতের ভয়, কারো বলার সাহসের অভাব। নিতান্তই সত্যি যে চলমাল বর্বরতার সাথে গণতন্ত্রীপন্থীদের কোন সম্পর্ক নেই। এ যাবৎকাল লুটপাট বা বেলেল্লাপনার যত শত শত ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে তার কোথাও এদের নামগন্ধও পাওয়া যায়নি। প্রাসঙ্গিক আলোচনায় এবারের নববর্ষকেও তুলে আনা যায়। যাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার হিমশিম খাচ্ছে তারা এবং বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে যারা সমবেত হয়েছিলেন তাদের পার্থক্য কিন্তু দৃশ্যমান। বোধকরি রমনার সমাবেশের চেয়েও বিএনপি কার্যালয়ের সামনের আয়োজনে সমাগম অনেক বেশি ছিল। এটি পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। সরকার যাদের নাম শুনলেই নাক সিটকান তাদের আয়োজিত সমাবেশে তো শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোন ঘটনা ঘটেনি। বর্ষবরণের সুস্থ সংস্কৃতির রূপরেখা দিয়েছে বিএনপি। যেখানে মনের আনন্দ এবং ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটেছে।
কথাটা খুব সোজা করে বললে এই দাঁড়ায় যে, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সূত্র ধরেই দেশে এ অরজকতা। জনগণকে বোকা বানাবার যে প্রবণতা চলছে তার ফাঁদেই ধরা পড়ছে সংশ্লিষ্টরা। মনে হতে পারে উন্নয়নের ছলচাতুরি গোঁজামিল বা লুটপাটের সাথে নির্বাচনের সম্পর্ক কি? উত্তরও খুব সোজা। এর আগে প্রধান বিচারপতি কার্যকর সংসদ গঠনের যে তাগিদটি দিয়েছেন এক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য। সংসদে যদি কার্যকর বিরোধী দল অর্থাৎ সরকারি ভাগবাটোয়ারার অংশীদাররা না থাকত তাহলে জনগণ পত্রপত্রিকা বা মিডিয়ার মাধ্যমে নয় বরং সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বেই জানতে পারত সারাদেশে উন্নয়নের নামে কি হচ্ছে। এটাও ঠিক কার্যকর সংসদ থাকলে এ ধরনের প্রবণতা ঘটতেই পারত না। এখন সে সুযোগ না থাকার কারণেই স্থানীয় জনগণ বা হয়ত কোন না কোন উপায়ে দুএকটি তথ্য বেরিয়ে আসছে।
চলমান কথিত উন্নয়নের মূলে হয়ত রয়েছে ভারতীয় উচ্চ সুদের ঋণ। এ টাকা জনগণকেই পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, উন্নয়নের সাথে হিসাব মেলাতে গিয়েই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে তেলের দাম কম থাকা কোন বিষয় নয়। সরকার যারা পরিচালনা করেন তাদের নানা রকম হিসেব থাকে, থাকতে পারে। সে নিয়ে হয়ত বিস্তৃত আলোচনাও সম্ভব। বর্তমান প্রেক্ষিতে বিষয়বস্তু হচ্ছে, কোন উন্নয়নের বিবেচনায় জনগণের উপর বাড়তি মূল্য চাপতে চাচ্ছেন? উন্নয়নের চিত্রতো পরিষ্কার। বাঁশখালী বা বাঁশ মডেলের উন্নয়ন জনগণ চায় কি-না সেটা পরীক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন কার্যকর সংসদ। অর্থাৎ জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব। সে কারণেই বলা হয়, উন্নয়ন জনসম্পৃক্ত না হলে সে উন্নয়ন গলার ফাঁসে পরিণত হয়। যারা জনবিচ্ছিন্ন উন্নয়নে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে চাচ্ছেন তাদেরও এটা বুঝতে হবে যে, টাকা জনগণের। তাদের সত্যিকার প্রতিনিধিত্ব ছাড়া যে কোন উন্নয়নচিন্তা বা তার রূপায়ন প্রকৃত সুফলদায়ী হয় না।
awalthakur@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন