ছাত্ররা আমার পদত্যাগ চায়নি। জনগণও পদত্যাগ চায়নি। আমি পদত্যাগ করবো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা দেশের জনগণ যদি বলে তাহলেই কেবল পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাজাহান খান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন মন্ত্রী। শাজাহান খান বলেন, ছাত্ররা আমার পদত্যাগ চায়নি। জনগণও পদত্যাগ চায়নি। আমি পদত্যাগ করবো না। এটা বিএনপির দাবি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তো তার পদত্যাগ, ক্ষমা প্রার্থনাসহ নানা দাবিতে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে যে, শাজাহান খান তিনি পদত্যাগ করেছেন। এটি সত্য কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি পদত্যাগ করবো না। আমার পদত্যাগ বিএনপির দাবি। তারা তো শেখ হাসিনারও পদত্যাগ চায়, সরকারেরও চায়। বিএনপির কথায় আমি পদত্যাগ করবো না। জনগণ আমার পদত্যাগ চায়নি, ছাত্ররাও আমার পদত্যাগ চায়নি। ছাত্রদের সব দাবিই তো মেনে নেওয়া হয়েছে। জনগণ চাইলে আমি পদত্যাগ করবো।
মন্ত্রী বলেন, তারা আমায় ক্ষমা চাইতে বলেছিল। আমি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে তা দেখতে বলেছি। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলে পদত্যাগ করবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী বললে আমি পদত্যাগ করবো। রাজধানীর সড়কগুলোকে যান বাহনের সংখ্যা কম সম্পর্কে মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাস্তায় বিআরটিসির গাড়ি তো আছে। ব্যাক্তি মালিকানার গাড়ি নামছে না ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে। আজও আমি সারাদেশের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছি। তাদের ধৈর্য সহকারে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছি। যেহেতু কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাস্তায় রয়েছে, তাই নিরাপত্তা বোধ করলে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলেছি। মন্ত্রী বলেন, আমি কিন্তু কাউকে গাড়ি বন্ধ করতে বলিনি। আবার বের করতেও বলিনি। এটা মালিকদের ব্যাপার। কাগজ পরীক্ষার কারণে এমন হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটা আপনারা ভালো বোঝেন, বাস্তবতা কি। আমি এখন এ নিয়ে কথা বলবো না।
গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাস প্রতিযোগিতা করে মিরপুর থেকে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে আসছিল। এ সময় ফ্লাইওভারের শেষ দিকে, রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল একদল শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একটি বাস ফ্লাইওভার থেকে নেমেই দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আহত হয় বেশ কয়েকজন।
রোববার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রীর হেসে হেসে কথা বলায় তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। শাজাহান খান হেসে হেসে বলেছিলে, আজকের বিষয়ের সঙ্গে এটি রিলেটেড নয়। ভারতের মহারাষ্ট্রে এক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহত হলেও সেখানে তো কোনও হৈ চৈ হয় না। অথচ বাংলাদেশে সামান্য কিছুতেই হই চই হয়।
নিহতরা হলো শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব। এ ঘটনায় নিহত দিয়া খানম মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করেছেন। ওই ঘটনার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। রোববার থেকে টানা বিক্ষোভে রাজধানী ঢাকা প্রায় অচল হয়ে গেছে। এসময় বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে আসে। এমন পরিস্থিতি গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। আন্দোলনরত শিক্ষাথীরা বলছেন, দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি ও নৌপরিবহন মন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ চলবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন