‘আমি দীর্ঘদিন ধরেই অনেক কিছু হজম করেছি। এখন বদ হজম হয়ে গেছে। সেজন্য কিছু সত্য কথা বলতে হবে। তবে সত্য বললে সরকারের ঘাড়ে যাবে, নয়তো বিআরটিএর ঘাড়ে যাবে। আর না বললে আমরা পাবলিকের গালি খাবো।’- সড়কে দুর্ঘটনা ও সড়ক নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এসব কথা বলেছেন।
আজ রোববার (০৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় নিরাপদ সড়ক চাই-এর প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের কথা উল্লেখ করে শাজাহান খান বলেন, ইলিয়াস কাঞ্চনকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই- আপনি যে দেশ-বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনজিও এর নামে এনেছেন, তা দিয়ে কয়টা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন? সেখানে কতজন ড্রাইভারকে ট্রেনিং দিয়েছেন?
শ্রমিকনেতা শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতদিন পর এসে শুরু করেছেন, ড্রাইভারদের জন্য ফ্রি ট্রেনিং ও ফ্রি লাইসেন্সের; তবে এটা কেবল প্রাথমিক পর্যায়ে। তাদের জন্য ৪ মাসের জন্য ৯ হাজার টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
‘এত সরকার এলো-গেলো কেউ-ই তো এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এতদিন তো এটা ছিল না, একথা তো এতদিন কেউ বলেননি।’
শাজাহান খান আরও বলেন, একটা কথা আছে- যত দোষ নন্দঘোষ, সড়কে অ্যাক্সিডেন্ট হলেই দোষ ড্রাইভারের। একসময় দেখছি সড়কে অ্যাক্সিডেন্ট হলেই প্রেসক্লাবের সামনে আমার কুশপুতুল পোড়ানো হতো। অ্যাক্সিডেন্ট হলেই নাকি শাজাহান খান দায়ী!
‘কী কারণে? আমি নাকি, আপনাদের (চালক) প্রশ্রয় দিই, আশকারা দিই। আমি বুঝলাম না, আমি কীভাবে আশকারা দিলাম?’
‘সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গঠিত কমিটির সভাপতি ছিলাম আমি। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা ১১১ টা সুপারিশ তৈরি করে জমা দিই। সেই সুপারিশের অংশবিশেষ-ই এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা কমে যাবে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে জাল টাকা ছাপানোর মেশিন, জাল পাসপোর্ট ছাপানোর মেশিন ধরা পড়ে, আপনারা কী কেউ বলতে পারবেন-ভুয়া লাইসেন্স ছাপানোর মেশিন কখনও ধরা পড়েছে?
‘কারা ধরবে? বিআরটিএ-এর মাঝেই তো এসব লোক মুখ লুকিয়ে রয়েছে। সেখানেই যদি এসব লোক মুখ লুকিয়ে থাকে তাহলে এদের ধরবে কারা? বিষয়টাকে একটা শৃঙ্খলায় আনতে হলে অবশ্যই জাল লাইসেন্সধারীদের প্রথমে ধরতে হবে।’
বিআরটিএ-এর লোকবল সঙ্কটের কথা তুলে ধরে শাজাহান খান বলেন, বিআরটিএ-তে কম করে হলেও ৩ হাজারের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী দরকার। কিন্তু উনাদের আছে মাত্র ৮২৩ জন। এ জনবল দিয়ে বিআরটিএ কীভাবে চলবে?
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান কামরুল আহসান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান এহছানে এলাহী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক সাইফুন নেওয়াজ, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর নবী শিমু প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন