চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ম না মেনে গড়ে তোলা হয়েছে পশু জবাইয়ের কসাইখানা। যত্রতত্র স্থাপিত কসাইখানার দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক দূষণ হচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত কসাইখানায় জবাই করা পশুর নাড়িভুড়ি, রক্ত ও উচ্ছৃষ্ট যত্রতত্র ফেলা হয়। পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ময়লা, আবর্জনা, নাড়িভুড়ি, গোবর, রক্ত না ধোয়ায় মশা, মাছি ও বিভিন্ন পোকামাকড়ের বংশ বিস্তার ঘটছে। দুর্গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা ও পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে কমপক্ষে ২০টি স্থানে পশু জবাই করা হয়। পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত নামে মাত্র কয়েকটি কসাইখানা রয়েছে। তাও পরিবেশ সম্মত নয়। রানীরহাট বাজারের মো. জহির জানান, রানীরহাট ঘনবসতি পাশে ইছামতি খালপাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে কসাইখানা।
পৌরসভা মুরাদের ঘোনা এলাকার মাসুদ নামের এক গ্রামবাসী জানান, লোকালয়ের পাশে কসাইখানায় পশু জবাই করায় আশেপাশেই ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ। রক্ত ও আর্বজনা পানি দিয়ে ধোয়ার পরও নালার মধ্যে থেকে যায়। যার ফলে এসব পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পরিবেশ মারাত্মক দূষিত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ রোধে রোয়াজারহাট বাজার এলাকায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। রোয়াজারহাটে জায়গা সঙ্কটের কারণে কসাইখানা নির্মাণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। জায়গা নির্ধারণ হয়ে গেলে সমস্যা সমাধান হবে বলে পৌর মেয়র আলহাজ মোহাম্মদ শাহজাহান সিকদার জানিয়েছেন।
বনগ্রাম এলাকার একাধিক মানুষ জানান, চন্দ্রঘোঘোন লিচুবাগান এলাকায় বদি সওদাগরের পুত্র, নুরুল হক সওদাগর প্রতিদিন গরু, মহিষ ও বিভিন্ন পশু জবাই করেন। তিনজনের পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদিত আধুনিক কসাইখানা নেই। নিজ উদ্যোগে কসাইখানা নির্মাণ করে পশু জবাই করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেন। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা হিসেবে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে মাঝে মধ্যে মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। ধামাইরহাট এলাকায় কসাইখানা খুবই নিম্নমানের। রক্ত, গোবর ও নাড়িভুড়ি যেন একাকার। নেই কোনো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।
পশ্চিম সরফভাটা গ্রামের বাসিন্দা রহিম উল্লাহ বলেন, সড়ক, বিল ও যত্রতত্র রাঙ্গুনিয়ার কমপক্ষে স্থায়ী অস্থায়ী ২০টি স্থানে পশু জবাই করা হয়। এসব পশু জবাইয়ে পশুসম্পদ কর্মকর্তার নির্দেশনা পালন করা হয় না। হাড্ডি ও রোগাক্রান্ত পশু জবাই করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নজরদারি বৃদ্ধি করা না গেলে জনস্বাস্থ্য ক্ষতির আশঙ্কা কমে যাবে। নোংরা কসাইখানার আবর্জনা যত্রতত্র ফেলার কারণে গ্রামবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এদিকে উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারের সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী দীর্ঘদিনের অভিযোগ এইসব কসাই ভারত থেকে কম দামে আনা অসুস্থ মহিষ, বইষ-এর গোশতের মধ্যে গরুর টুকরো চামড়া লাগিয়ে গরুর গোশত বলে বিক্রি করে আসায় এলাকার ক্রেতা সাধারণগণ প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয়ে আসছে। এই প্রতিবেদক এলাকার একটি কসাই দোকানে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাকে বলেন, আপনি ১৯৯৮ সালে এই সরকারের আমলে তৎসময়ের বহুল প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় শিরোনামে রাঙ্গুনিয়ার মহিষ কেন গরু হয় প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে রাঙ্গুনিয়ার অধিকাংশ কসাইগণকে গ্রেফতার করে কোর্ডে চালান করা হয়েছিল। এসব কসাইগণ জামিনে আসার পর থেকে থানাসহ উপজেলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে মাসিক মাসোহারা দেয়াতে এরপর থেকে আর কোনো সময় তদন্ত আসতে দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন