চট্টগ্রামে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ১৯ মামলার আসামি দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ নাছির উদ্দিন ওরফে মামুন (৩৮) নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় দু’জন পুলিশ আহত হন। গত শুক্রবার মধ্যরাতের পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারশত ইউনিয়নের দুধকুমড়া জৈদ্দ্যারহাট সড়কের পাশে পুলিশের সাথে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় দু’টি দেশীয় তৈরি এলজি, ৫ রাউন্ড কার্তুজ ও দু’টি ছোরা উদ্ধার করা হয়। দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছির উপজেলার বারশত ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের কালা মিয়ার পুত্র। পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে নাছিরের মৃত্যুর খবরে দীর্ঘদিন ধরে তটস্থ মানুষজনকে স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। গাড়ি চোর থেকে হাত পাকিয়ে নাছির পরিণত হয় দুর্ধর্ষ দাগী সন্ত্রাসী। বিভিন্ন সময়ে ধূর্ত নাছির পুলিশের চোখ ফাঁকি দেয়। আনোয়ারা থানা ও চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ জানায়, তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোঃ নাছির উদ্দিন ওরফে মামুন দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ারাসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। তার বিরুদ্ধে খুন, ছিনতাই, অস্ত্র ও গোলাবারুদ, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, গণধর্ষণ ও অপহরণসহ সবমিলিয়ে অন্তত নয়টি থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে আনোয়ারা থানায় ৪টি, মহানগরীর কর্ণফুলী থানায় একটি, কোতোয়ালী থানায় ২টি, হালিশহরে ৩টি, খুলশীতে ৩টি, ডবলমুরিংয়ে ২টি, বাকলিয়ায় ২টি, পাঁচলাইশে একটি এবং কক্সবাজার থানায়ও একটি মামলা রয়েছে।
পুলিশ জানায়, ৯ মাস আগে নাছির ওরফে মামুন জেল থেকে পালিয়ে আসে। এ ঘটনায় তিন পুলিশকে বরখাস্তও করা হয়েছিল। এরপর থেকে পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল দুর্ধর্ষ নাছির। অবশেষে গত শুক্রবার দুপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী নাছির আনোয়ারা থানা পুলিশের মুখোমুখি হয়ে প্রথমে পাকড়াও হয়। এরপর অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় তার সহযোগীরা পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় সে।
আনোয়ারা থানা পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের হলিদেরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য মতে বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই দিন রাত ২টার দিকে উপজেলার দুধকুমড়া গ্রামের জৈদ্দ্যারহাট সড়কের পাশে বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছালে আগে থেকে ওত পেতে থাকা নাছিরের ১০-১২ জন সহযোগী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও তাদের ওপর গুলি ছোঁড়েন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরসহ দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন।
এরপর দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহত নাছিরের মৃতদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত দুই পুলিশ সদস্য এএসআই পলাশ ও কনস্টেবল আকিবুর রহমানকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতালে আনা হয়।
এদিকে পতেঙ্গার খেজুরতলা বেড়িবাঁধ এলাকার ব্যবসায়ী মোঃ ইউনুছ গতকাল বন্দুকযুদ্ধে নাছিরের মৃত্যুর খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট শাহ আমানত সেতুর টোলপ্লাজার কাছেই আমাকে গুলি করে মোটর সাইকেলসহ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় নাছির। বোয়ালিয়া গ্রামের জাকিরপাড়ার বাসিন্দা মোঃ এরফান বলেন, ২০১৩ সালে আমি বিদেশ থেকে আসার পর একদিন নাছির আমাকে মাছ ধরার কথা বলে বিলে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মাছ ধরা শেষে হঠাৎ আমার কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় আমাকে জোর করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
সেখানে আমাকে বেঁধে রেখে দিনভর মারধর করে। পরে আমাকে গহিরার চরে একটি ট্রলারে আটকে রাখে। তার নিহতের খবরে শুধু আমিই নই, পুরো এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। নাছিরের কারণে ভয়-আতঙ্কে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ মুখ খোলারও সাহস পায়নি।
এদিকে নিহত নাছিরের বড়ভাই ও বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছাবের আহমদ গতকাল জানান, নাছিরের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল ছিন্ন। তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করেছে। তাতে আমাদের কিছুই বলার নেই। আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তার বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানাসহ বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে।
মাগুরায় বন্দুক যুদ্ধে ডাকাত নিহত
মাগুরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার রামপুর গ্রামে শুক্রবার রাতে দুদল ডাকাতদের মধ্যে গোলাগুলির সময় আবুল বাসার বিশ্বাস (৪০) নামের এক ডাকাত নিহত হয়েছে। নিহত বাসার পার্শ্ববর্তী নহাটা ইউনিয়নের বিল্বপাড়া গ্রামের মোঃ গোলাম সরোয়ার বিশ্বাসের ছেলে। তার বিরুদ্ধে চুরি-ডাকাতিসহ ১২টি মামলা রয়েছে। গ্রামের মাঠের মধ্যে একটি ফাকা যায়গায় এ বন্দুক যুদ্ধ সংঘঠিত হয় বলে পুলিশ জানায়।
মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: তরীকুল ইসলাম জানান, রাত ২টার দিকে রামপুর এলাকার একটি মাঠের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে এমন খবরে পুলিশ সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাসারকে উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৪ রাউন্ড বন্দুকের গুলি, ৩ রাউন্ড গুলির খোসা এবং ৪টি রামদা উদ্ধার করেছে। তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মাগুরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন