জামালউদ্দিন বারী
চলমান বিশ্বব্যবস্থার সংকট, যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক সা¤্রাজ্যবাদী লড়াইয়ের কারণ খুঁজতে গেলে প্রথমেই একবাক্যে যে বিষয়টি আলোচনায় আসে তা হচ্ছে বিশ্বে প্রচলিত পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা। এই অর্থব্যবস্থার অনুসঙ্গী সুদের কারবার চাপিয়ে দেয়া এই ব্যবস্থা ছাড়া আজ আমাদের প্রচলিত ব্যাংকিং ও অর্থব্যবস্থাকে কল্পনা করা যায় না। অথচ ইসলাম, খ্রিস্টধর্ম, যুদাইজম, বৌদ্ধধর্ম এমনকি হিন্দুদের বেদ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে ইউজারি বা সুদ ব্যবসাকে অত্যন্ত ক্ষতিকর ও অভিশপ্ত ব্যবস্থা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। আর চলমান আধুনিক ইংরেজিতে সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ‘লোন শার্ক’ নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়া প্রচলিত ধর্ম গ্রন্থাদির বাইরে প্রাচীন চীন, গ্রিস ও রোমের সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সুদভিত্তিক ঋণদান ব্যবস্থাকে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। কোরআন ছাড়া অন্যসব ধর্মগ্রন্থ যুগে যুগে বিকৃতি ও পরিবর্তনের সাথে সাথে অর্থব্যবস্থায় সুদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও যেন অবলুপ্ত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ইসলামিক জীবন ব্যবস্থায়ই সুদ হারাম এবং প্রবলভাবে অনিষ্টকর ব্যবস্থা হিসেবে পরিজ্ঞাত হয়ে আসছে। এমনকি প্রচলিত অর্থে সুদবিহীন শরিয়াহভিত্তিক অর্থব্যবস্থাও ক্রমে সারা বিশ্বে সম্প্রসারিত ও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সম্ভবত এ কারণেও আন্তর্জাতিক কর্পোরেট পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক সা¤্রাজ্যবাদের অনুঘটকরা ইসলাম এবং মুসলমানদেরই তাদের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে ইসলামোফোবিয়া এবং মুসলিমবিদ্বেষী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো মুসলমান রাষ্ট্রের দ্বারা কোনো পশ্চিমা রাষ্ট্র অথবা রাষ্ট্রব্যবস্থা সরাসরি কোনো হুমকির সম্মুখীন না হলেও গত তিন দশকে অন্তত এক ডজন মুসলিম দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। এসব আগ্রাসন ও সামরিক হামলায় শুধুমাত্র ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনে অন্তত ৩০ লাখ মুসলমান প্রাণ হারিয়েছে। এ জন্য অস্ত্র ও রসদ বাবদ পশ্চিমা পুঁজিবাদী রিজার্ভ ফান্ড থেকে হাজার হাজার বিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছে। অর্থাৎ মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে পশ্চিমা ওয়ার ইন্ডাস্ট্রি ও মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে গিয়ে সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতের বিনিয়োগে ভাটা পড়ার পাশাপাশি পশ্চিমা সাধারণ নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণীর দৈনন্দিন অর্থনৈতিক জীবনে বড় ধরনের টানাপোড়েন সৃষ্টির ফলে গত দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের মন্দা দেখা দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ১৯৩৩ সালে পশ্চিমা পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা বড় ধরনের সংকটে পড়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ইউরোপের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভূগোলে একটি নতুন রাজনৈতিক-অর্থব্যবস্থার মেরুকরণের মাধ্যমে সংকট উত্তরণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং সাময়িকভাবে সফলও হয়েছে।
হাজার বছর আগের ইহুদি সুদখোর মহাজনদের উত্তরসূরিরাই ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের পর বিশ্বের পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল। অষ্টাদশ ও বিংশ শতকের ইউরোপের ইতিহাসের অন্য অনেক ইহুদি তাত্ত্বিক ও এন্ট্রাপ্রেনারের পাশাপাশি নামের অন্তাংশে রথশিল্ড নামধারী দুজন ইহুদি পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশ্বব্যবস্থায় যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিলেন। এদের একজন হচ্ছেন অষ্টাদশ শতকের ধনকুবের, আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার জনক হিসেবে খ্যাত, রথশিল্ড ব্যাংকিং ডায়ন্যাস্টির প্রতিষ্ঠাতা মেয়ার অ্যামসেল (অ্যানসেল) রথশিল্ড। অন্যজন হচ্ছেন বিংশ শতকের শুরুর দিকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের অন্যতম পুরোধা প্রভাবশালী রাজনীতিক, ব্রিটিশ জুইশ কমিউনিটি লিডার ওয়াল্টার রথশিল্ড। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় প্রভাবশালী ইহুদি কমিউনিটি এবং ধনকুবেরদের অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার জেমস বালফোর তার ব্যক্তিগত বন্ধু ওয়াল্টার রথশিল্ডের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্রিটিশ সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন। জুইশ নেতা রথশিল্ডের কাছে লেখা বালফোরের এই চিঠি ইতিহাসে বালফোর ডিক্লারেশন হিসেবে পরিচিত। তবে পুঁজিবাদী আন্তর্জাতিক সা¤্রাজ্যবাদের মূল নিয়ন্ত্রণ ইহুদিদের হাতে চলে যাওয়ার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে অ্যানসেল রথশিল্ডের ভূমিকাই অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের তালিকায় মেয়ার অ্যানসেল রথশিল্ডকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা ২০ জন ব্যবসায়ী ধনকুবেরের মধ্যে সপ্তম হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সর্বকালের সেরা সফল অন্য ধনকুবেরদের মধ্যে সম্ভবত বেশির ভাগই ছিল ইহুদি কর্পোরেট ও ব্যাংকার। চলমান বিশ্বব্যবস্থার ওপর ইহুদি নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটের কথা স্মরণ করতে গেলে অষ্টাদশ শতকের সেই ইহুদি ব্যাংকার মেয়ার অ্যানসেল রথশিল্ডের একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্যÑ তিনি বলেছিলেন, “গিভ মি কন্ট্রোল অব অ্যা নেশন’স মানি সাপ্লাই, অ্যান্ড আই কেয়ার নট হু মেকস ইটস ল’জ।” অর্থাৎ আমাকে একটি জাতির বা দেশের অর্থের জোগান ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দাও, সেখানে কারা সে দেশের আইন প্রণয়ন করছে, সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। অর্থাৎ রাষ্ট্র যে মতাদর্শেই পরিচালিত হোক, দেশের অর্থব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটাই ছিল আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্ন ও সাধনা।
ফরাসি বিপ্লবের পর নাস্তিক বা ধর্মনিরপেক্ষ তাত্ত্বিকরা বিশ্বের তাবৎ ধর্মগ্রন্থের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক-দার্শনিক অনুজ্ঞাগুলোকে অগ্রাহ্য করে এই অনৈতিক অর্থব্যবস্থা বিশ্বের সব মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। যেখানে সামাজিক-রাজনৈতিক মূল্যবোধ বর্জিত ‘মাইট ইজ রাইট’ অথবা ডারউইনের সারভাইবাল অব দ্য ফিটেস্ট তত্ত্বের অনৈতিক প্রয়োগ ও প্রকাশ ঘটানো হয়েছে চলমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থার কদাকার ও বৈষম্যমূলক অবস্থান নির্দেশ করতে গিয়ে মার্কিন শিল্পপতি, ফোর্ড মোটর কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ড বলেছিলেন, “ইট ইজ ওয়েল এনাফ দ্যাট পিপল অব দ্য নেশন ডু নট আন্ডারস্ট্যান্ড আওয়ার ব্যাংকিং অ্যান্ড মনিটারি সিস্টেম, ফর ইফ দে ডিড, আই বিলিভ দেয়ার উড বি অ্যা রেভ্যুলুশন বিফর টুমরো মর্নিং”। অর্থাৎ এটা যথেষ্ট মঙ্গলজনক যে দেশের মানুষ আমাদের ব্যাংকিং এবং অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছুই বোঝে না, আমার বিশ্বাস তারা যদি এটা বুঝত তবে আগামীকাল সকাল হওয়ার আগেই দেশে বিপ্লব ঘটে যেত। অনৈতিক ও সেক্যুলার অর্থব্যবস্থার একই নেটওয়ার্ক বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেট অর্থব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বা আমাদের রাজকোষ থেকে ৮০০ কোটি টাকা চুরি হয়ে যাওয়ার খবর পেলাম, তখন জানতে পারলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড গচ্ছিত আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফট কোড ম্যানিপুলেট করে আন্তর্জাতিক সাইবার ডাকাতরা শুধু এই ৮০০ কোটিই নয়, আরো অন্তত ৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। ইতিমধ্যে বেহাত হওয়া অর্থ নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ফিলিপাইনের রিজাল কর্মাশিয়াল ব্যাংক এবং শ্রীলঙ্কার একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের হাতে চলে গেছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের কৃষক, গার্মেন্ট শ্রমিক এবং প্রবাসী শ্রমিকদের মাথার ঘাম ঝরানো কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংকের ভল্টে ডলারের মূল্যে জমা রাখছি। এর সাথে বিশ্বের শত শত বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি আন্তঃসরণী রয়েছে। গতানুগতিক সুদি ব্যবস্থার গ্যাঁড়াকল থেকে প্রতিবছর আমাদের অর্থব্যবস্থা থেকে শত শত কোটি টাকা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং সেক্টরের নিয়ন্ত্রকদের হাতে চলে যায়। আর তথ্যপ্রযুক্তি ও অর্থব্যবস্থার গ্লোবালাইজেশনের ভয়ঙ্কর ফোকড় গলিয়ে আমাদের কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি জনগণের গচ্ছিত হাজার হাজার কোটি টাকা যে কোনো সময় সরাসরি আন্তর্জাতিক ডিজিটাল ব্যাংক ডাকাতদের হাতে চলে যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের ক্রেডিটকার্ড জালিয়াতির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা এর সর্বশেষ উদাহরণ। বিশ্বের সমগ্র সম্পদের সিংহভাগ ব্যাংকিং সেক্টরের এই নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রক কতিপয় কর্পোরেট পুঁজিপতি পরিবারের হাতে নিয়ন্ত্রিত, বর্ধিত হচ্ছে। গত শতকের প্রথম দিকে হেনরি ফোর্ড (১৮৬৩-১৯৪৭) বিশ্ব অর্থব্যবস্থা সম্পর্কে মার্কিন জনগণের অজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। আজ একবিংশ শতকে এসেও আমাদের মতো অনুন্নত ও দরিদ্র দেশের জনগণ দূরের কথা, শতভাগ শিক্ষিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ অর্থব্যবস্থার সেই ‘লোন শার্ক’ সম্পর্কে কতটা সচেতন সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে এখন কর্পোরেট ব্যাংকাররা আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রাষ্ট্রের আইন প্রণেতা এবং প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নীতি নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায়ও অবতীর্ণ হয়েছে। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ একভাগ কর্পোরেট পুঁজিপতি তথা শাসকশ্রেণীর কাছে অসহায়। শোষণের হাতিয়ার অনৈতিক অর্থব্যবস্থার ফাঁদে পড়ে লাখ লাখ মানুষ দেউলিয়া ও কর্মহীন হয়ে পড়া সাধারণ মার্কিন নাগরিকরা নিজেদের শতকরা ৯৯ ভাগের প্রতিনিধি দাবি করে অর্থব্যবস্থায় পরিবর্তনের দাবিতে ২০১১ সালে অক্যুপাই ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলন গড়ে তুলতে গিয়েও রাষ্ট্রশক্তির কাছে ব্যর্থ হেরে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল।
এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের (ফেড) মালিকানা সম্পর্কে সে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান। ব্যাংকের নাম ‘ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক’ হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই একটি ভ্রান্ত ধারণা জন্মায়, এই ব্যাংকের মালিকানা মার্কিন ফেডারেল সরকারের। বাস্তবতা হচ্ছে, এটা একটা বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এই ব্যাংকের মালিক মূলত এর শেয়ারহোল্ডাররা। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিকরাই মূলত ফেড’র শেয়ারহোল্ডার। অন্যান্য ব্যাংক ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মত ঘোষিত প্রো-ফর্মা অনুসারেই এই ব্যাংক পরিচালিত হয়। মার্কিন জনগণ এবং আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করার জন্যই এই ব্যাংকের উদ্যোক্তারা এর নামের সাথে ‘ফেডারেল’ শব্দটি যুক্ত করেছে বলে অভিযোগ আছে। তিরিশের দশকে মার্কিন কংগ্রেসম্যান এবং কংগ্রেস হাউসের ব্যাংকিং ও কারেন্সি কমিটির চেয়ারম্যান লুই ম্যাকফাডেন জনসম্মুখে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সম্পর্কে বিভ্রান্তি উন্মোচন করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘কিছু মানুষ মনে করেন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি প্রতিষ্ঠান। আসলে এটি হচ্ছে প্রাইভেট মনোপলি, যা তাদের সুদি ব্যবসার শেয়ারহোল্ডারদের লাভের জন্য মার্কিন জনগণকে প্রতারণার শিকারে পরিণত করছে।’ এর বহু আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ফাউন্ডিং ফাদার টমাস জেফারসন মার্কিন পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের স্বাধীনতার জন্য প্রতিপক্ষ সেনাবাহিনীর চেয়েও বেশি বিপজ্জনক... ব্যাংকগুলোর কাছে অর্পিত ক্ষমতা প্রত্যাহার করে জনগণের সম্পদের মালিকানা জনগণের হাতেই রাখা উচিত।’ জেফারসন আরো বলেন, আমেরিকান জনগণ যদি প্রাইভেট ব্যাংক এবং কর্পোরেটদের হাতেই তাদের মুদ্রা ইস্যু এবং বাজারের হ্রাস-বৃদ্ধির ক্ষমতা রেখে দেয়, তাহলে এসব ব্যাংক এবং কর্পোরেশন জনগণকে প্রতারিত করে এমনভাবে বাড়তে থাকবে, এক সময় তাদের সন্তানরা জেগে দেখবে তাদের পিতৃপুরুষের অধিকার করা দেশে নিজেরাই বাস্তুহীন হয়ে পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের মৃত্যুর পর প্রায় ২ শতাব্দী পেরিয়ে এসে মার্কিন জনগণ এখন সেই বাস্তবতার মুখোমুখি। টমাস জেফারসন এবং মেয়ার অ্যানসেল রথশিল্ড প্রায় একই সময়ে (১৭৪৩ এবং ১৭৪৪) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গণতন্ত্র এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি ও শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জেফারসন, আব্রাহাম লিঙ্কনদের স্বপ্নগুলো রথশিল্ডদের প্রবর্তিত লোন শার্ক অর্থব্যবস্থার আক্রমণে তছনছ হয়ে গেছে। হেনরি ফোর্ডের উপলব্ধিতে চরমভাবে প্রতারিত বিশ্বের জনগণকে এই অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার যে বার্তা ছিল তার জন্য বিশ্ববাসীকে আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
bari _zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন